পাহাড়ে টানাবর্ষণে নাকাল নাগরিক জীবন


আলমগীর মানিক    |    ০২:০৭ এএম, ২০২৩-০৮-০৮

পাহাড়ে টানাবর্ষণে নাকাল নাগরিক জীবন

রাঙামাটিতে টানা বর্ষণের পাঁচদিন পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু সোমবার রাত পর্যন্ত বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। এদিকে টানা বর্ষণে থমকে গেছে নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক কাজ কর্ম। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে সবচেয়ে বেশী। পাহাড় ধসের শঙ্কা তো রয়েছেই। ঘটেছে বিদ্যুৎ বিপর্যয়।

মৌসুমী বায়ু ও স্থল নিন্মচাপের প্রভাবে শুরু হওয়া এই বৃষ্টিপাত আরো দু’দিন থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। 

এদিকে টানার বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই রাঙামাটি জেলার কোথাও না কোথাও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছেই। সোমবার দিনভর রাঙামাটি শহরসহ বিভিন্ন সড়কে পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। 

রাঙামাটি সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭/৮/২০২৩ তারিখে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সড়কের প্রায় ৪৪ টি স্থানে সড়ক পার্শ্বস্থ পাহাড় ধসে পড়েছে এবং সড়কের বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়ক বিভাগের টিমের তৎপরতায় সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। 

রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক পরিদর্শন করেন এবং ধস পরবর্তী মাটি ছড়ানোর কাজে নেতৃত্ব দেন। এ সময় উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আদনান ইবনে হাসান,উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী(যান্ত্রিক)  রনেল চাকমা ও ৬ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী উক্ত কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে, সোমবার দুপুর ৩টার দিকে রাঙামাটি শহরের প্রবেশমুখ মানিকছড়িতে গাছ পড়ে থমকে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। সাপছড়ি সাবস্টেশন থেকে আসা ১১ হাজার কেভির মুল সরবরাহ লাইনে গাছ পড়ার কারণে প্রায় ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। বিদ্যুৎ বিভাগের তড়িৎ তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত রাত ১০টার কিছু আগে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নাগরিকরা।

মানকিছড়ি ছাড়াও ঘাঘড়া সড়কে ধসের কারণে কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ ছিল। রাঙামাটি শহরের গর্জনতলী, কাঠালতলী কৃষি গুদামের পিছনে, ভেদভেদী লোকনাথ মন্দির সংলগ্ন এলাকা, তবলছড়ি ওমদামিয়া পাহাড় এলাকার বিজিবি রোডে ছোট ছোট পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বাসিন্দারা।

তবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে নাগরিকদের জানমাল রক্ষায় প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত ছিল। জেলাপ্রশাসনের টিম এবং পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়েছে শহর জুড়ে। সোমবার সকালে রাঙামাটি কোতয়ালী থানার ওসি আরিফুল আমিন রেসকিউ টিম নিয়ে শহরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের আশ্রয়কেন্দ্র পাঠানোর ববস্থা করাসহ রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ সরানোর ব্যবস্থা নেন।

পাহাড় ধসে পড়ে বন্ধ হওয়া বাঘাইছড়ির সড়ক যোগাযোগ সচল হয়েছে এবং জেলাপ্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় চালু হয়েছে নৌ চলাচল। তবে টানা বর্ষণে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বিলাইছড়ির ফারুয়া বাজার, তলিয়ে গেছে জুরাছড়ির আমন ক্ষেতগুলো, কাপ্তাই এখানে সেখানে ধস নামছে এবং কাউখালীতে ঘরবন্দী জীবন কাটাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে বৃষ্টিতে মানুষ দুর্ভোগে পড়লেও কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ার বিষয়টি সুখবর হিসেবে দেখছে জনগণ। কারণ হ্রদের পানি বৃদ্ধির সাথে রাঙামাটি জেলার অনেক ব্যবসা বাণিজ্য এবং কৃষি জড়িত। জড়িত পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনও। পানি বাড়ায় বেড়েছে বিদ্যুতের উৎপাদন। তবে বিদ্যুৎ না থাকার দিনে উৎপাদন বৃদ্ধির খবর নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেককেই ট্রল করতে দেখা যায়।