রাঙামাটিতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ দু’জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা


আলমগীর মানিক    |    ০৯:১৪ পিএম, ২০২৩-০৭-২৬

রাঙামাটিতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ দু’জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আলমগীর মানিক

চরম অব্যবস্থাপনায় পরিচালিত রাঙামাটির প্রবাসি কল্যাণ ব্যাংকের প্রিন্সিপাল এক্সিকিউটিভ অফিসার কর্মকর্তা এইচ.এম. বদরুদ্দৌজাসহ তার সহযোগি মুহাম্মদ মনছুর আলমের বিরুদ্ধে ১৪/০২/২০১৪ খ্রি: হতে ০৯/০৩/২০১৬ খ্রি: পর্যন্ত সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে জাল কাগজপত্র সৃষ্টি করে তা ব্যবহার করতঃ ভুয়া ঋণ গ্রহীতা ও ভুয়া জামিনদার/গ্যারান্টার সৃজন করে প্রতারণার আশ্রয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক। দুদকের রাঙামাটিস্থ সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আহামদ ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে বুধবার এই মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নাম্বার-১, তারিখ: ২৬/০৭/২০২৩ইং। রাঙামাটির জেলা জজ আদালতে দায়েরকৃত এই মামলা নাম্বার হলো-৬/২৩। 

দন্ডবিধি ৪০৬/৪০৯/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এই মামলা রুজু করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন রাঙামাটিস্থ সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহিদ কালাম। এই মামলায় আসামীরা হলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লি., রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে গত ১৪/০২/২০১৪ খ্রি: হতে ০৯/০৩/২০১৬ খ্রি: তারিখ পর্যন্ত কর্মরত এইচ. এম. বদরুদ্দৌজা, প্রিন্সিপাল এক্সিকিউটিভ অফিসার (বরখাস্তকৃত), পিতা: মৃত মো: নিজাম উদ্দিন,মাতা: মিসেস দিনারা বেগম, স্থায়ী ঠিকানা: সাং- ওয়াপদা কলোনী রাঙামাটি সদর। অপর আসামী হলেন (২) মুহাম্মদ মনছুর আলম (এনআইডি: ৪১৯৩৪২৫২২২), পিতা: রফিক আহমদ, মাতা: আছিয়া খাতুন, গ্রাম: বৈলছড়ি, ডাকঘর: কেবিবাজার (৪৩৯২), বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।

মামলার এজাহারে সূত্রে জানাগেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয় ঢাকা এর ই/আর নং-তদন্ত-২/০০৪/২০২০/রাঙামাটি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রাঙামাটির ই/আর নং- ০১/২০২০ এর  অনুসন্ধানকালে প্রকাশ পায় যে, আসামী এইচ. এম. বদরুদ্দৌজা, প্রিন্সিপাল এক্সিকিউটিভ অফিসার (বরখাস্তকৃত), প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে ১৪/০২/২০১৪ খ্রি: হতে ০৯/০৩/২০১৬ খ্রি: তারিখ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ঐ সময়ে তিনি তার অধিক্ষেত্রের বাহিরে ৭০ জন প্রবাসীর মাঝে ৫৩,৭০,০০০/- টাকা ঋণ বিতরণ করেন। তন্মধ্যে মোট ২২,০৪,৩৯৮/- টাকা পরিশোধ/আদায় করা হয়েছে। ঋণ বিতরণ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি ভুয়া ঋণগ্রহীতাকে ঋণ বিতরণ করেছেন। বিভিন্ন ব্যক্তিকে একাধিক ঋণের জামিনদার করেন।

আসামী মুহাম্মদ মুনছুর আলম নিজেই ০৯টি ঋণের জামিনদার হয়েছেন। একই ব্যক্তিকে একাধিক ঋণের জামিনদার বানিয়ে ঋণ প্রদান করা ব্যাংকের নিয়মাচারের লঙ্ঘন মর্মে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়। আসামী মুহাম্মদ মনছুর আলম বিভিন্ন ঋণ কেসে উল্লিখিত জামিনদারদের সহযোগিতায় সিন্ডিকেট তৈরি করে বাঁশখালী এলাকা হতে কিছু লোক জোগাড় করে প্রত্যেকের নিকট হতে অতিরিক্ত চেক জমা নিতেন।

আসামী মুহাম্মদ মনছুর আলম নিজেই প্রতারণার আশ্রয়ে বিভিন্ন ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে ভুয়া ব্যাংক কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বেশ কিছু চেকও গ্রহণ করেছেন। উক্ত চেকগুলি পরবর্তীতে ঋণ উত্তোলনে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রত্যেক ঋণ গ্রহীতার জন্য একজন জামিনদারের তিনটি চেক জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা তিনটির অতিরিক্ত চেক গ্রহণ করে পরবর্তীতে ঋণ গ্রহীতাদের অগোচরে এবং জামিনদারগণের অগোচরে ঋণ আবেদনপত্রে জাল স্বাক্ষর করে টাকা উত্তোলন করেছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়।

এতদ বিষয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অডিট টিম গত ১১/৭/২০১৭ খ্রি: হতে ১৩/০৭/২০১৭ খ্রি: পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক রাঙামাটি শাখা বিশেষ নিরীক্ষা করেন। নিরীক্ষাকালে আসামী এইচ.এম. বদরুদ্দৌজার বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া জামিনদার/গ্যারান্টার এবং ভূয়া ঋণ গ্রহীতা সৃষ্টি করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ^াসভঙ্গ করে ব্যাংকের ৪৯,৪৭,৪৭৪/- টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে মর্মে তাদের দাখিলকৃত অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

অত্র অভিযোগ অনুসন্ধানকালে আসামী মুহাম্মদ মনছুর আলম নিজেকে ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে চেক গ্রহণ করে ভুয়া জামিনদার/গ্যারান্টার এবং ঋণ গ্রহীতা তৈরিতে বা তৈরি করার অপরাধে ব্যাংক ব্যবস্থাপক  আসামী এইচ.এম. বদরুদ্দৌজাকে সহযোগিতা করেছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়ায় আসামীদের বিরুদ্বে পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক বিশ^াসভঙ্গ ও অপরাধ মূলক অসদাচরণের মাধ্যমে জাল কাগজপত্র সৃষ্টি করে তা ব্যবহার করতঃ ভুয়া ঋণ গ্রহীতা ও ভুয়া জামিনদার/গ্যারান্টার সৃজন করে প্রতারণার আশ্রয়ে নিজে অবৈধভাবে লাভবান হয়ে ৩১,৬৫,৬০২/- টাকা আত্মসাত করে দন্ডবিধি ৪০৬/৪০৯/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য  অপরাধ  করেছেন উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করা হয়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, উক্ত ঘটনার সাথে অন্য কাহারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা তদন্তকালে দেখা হবে। অত্র মামলা রুজুর বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা স্মারক নং-০০.০১.৮৪০০.৬২৬.০১.০০৫.২০/ রাঙ্গামাটি/ ২৪৮৩২, তারিখ-১০/০৭/২০২৩খ্রি. এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রাঙামাটির স্মারক নং-০০.০১.৮৪০০.৭১৬.০২.০০৯.২৩.৯১২, তারিখ-২৬/০৭/২০২৩খ্রি. মূলে অনুমোদন রয়েছে।