জল উৎসবে মাতোয়ারা পাহাড়ের হাজারো মারমা তরুণ-তরুণী


আলমগীর মানিক    |    ০৬:০২ পিএম, ২০২৪-০৪-১৫

জল উৎসবে মাতোয়ারা পাহাড়ের হাজারো মারমা তরুণ-তরুণী

আলমগীর মানিক

সাংগ্রাঁঁইমা ঞি-ঞি ঞা-ঞা রিকজাইগাইপামে/ওও ঞি কো রো ওও মি ¤্রি রো/ লাগাই লাগাই/ চুইপ্যগাইমেলেহ্। অথাৎ নববর্ষে সবাই মিলে এক সমানে এক সাথে জল খেলিতে যায়, ও ও ভাইয়েরা ও ও বোনেরা, খুশিতে মিলিত হও।

মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাঁই  জল উৎসবের অন্যতম জনপ্রিয় গানটি গেয়ে যখন মারমা শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করলেন ঠিক সেই সময়ে হাজার হাজার লোকের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠে চিংম্রং বৌদ্ধ বিহার মাঠ। এই যেন প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়েছেন তাঁরা।

নববর্ষকে বরণ এবং পুরানো বর্ষকে বিদায় উপলক্ষে মারমা যুবক যুবতীরা একে অপরের প্রতি জল ছিঁটে পুরানো বছরের দুঃখ, গ্লানি, বেদনাকে ভূলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চিংম্রং বৌদ্ধ বিহার এর সাংগ্রাঁই রিলংপোয়ে উদযাপন কমিটির আয়োজনে সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে চিংম্রং বৌদ্ধ বিহার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সাংগ্রাঁই রিলংপোয়ে উৎসব ২০২৪। এই উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংগ্রাঁই র‌্যালী, আলোচনা সভা  এবং জলকেলী অনুষ্ঠিত হয়। এইসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা হতে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে।

সাংগ্রাঁই রিলংপোয়ে  উৎসব উপলক্ষে বিহার সংলগ্ন মাঠে এদিন  সকাল  সাড়ে ১০ টায় আলোচনা সভায়  প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির সাংসদ দীপংকর তালুকদার। এসময় তিনি বলেন,  বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন উৎসবে মেল বন্ধন হয়,এটাই আমাদের সংস্কৃতির প্রধান অনুষঙ্গ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলেন, এই দেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। তিনি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে সবসময় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকেন।

জল উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ্যাডভোকেট হ্লাথোয়াই মারমা’র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কাপ্তাই ৪১ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্নেল আমীর হোসেন মোল্লা, কাপ্তাই ৫৬ বেঙ্গল এর অধিনায়ক লে: কর্নেল নুর উল্লাহ জুয়েল, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মহিউদ্দিন, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা, রাজস্থলী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল আহমেদ ভুইঞা। পরে অতিথিরা বিহার সংলগ্ন মাঠে জলকেলী উৎসব এর উদ্বোধন করেন। 

জলকেলী উদ্বোধন শেষে মনোমুগ্ধকর মারমা সম্প্রদায়ের নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।

মূলত ১৫ এপ্রিল মূল সাংগ্রাঁই উৎসব উদযাপন হলেও গত ১৩ এপ্রিল হতে চিংম্রং এলাকায় বসে বৈশাখী মেলা। দূর দূরান্ত হতে হরের রকম পণ্য নিয়ে প্রার্ন্তিক ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা সাজিয়েছেন বিহার সংলগ্ন মাঠে।