তুমরু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি, এক বাংলাদেশী গুলিবিদ্ধ


নুরুল কবির    |    ০৪:১৭ পিএম, ২০২৪-০২-০৪

তুমরু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি, এক বাংলাদেশী গুলিবিদ্ধ

নুরুল কবির

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তুমরু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে বিদ্রোহী দল আরাকান আমির (এএ) ও রোহিঙ্গা সলিডারি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সঙ্গে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি)র ব্যাপক সংঘাতের ঘটনায় বিজিপি”র ১৪ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশের বিজিবি”র কাছে আশ্রয় নিয়েছে। তাঁদের অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছে জমা রাখা আছে। বিজিবির ও স্থানীয় একাধিক সূত্র রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম-তুমরু সীমান্তের মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও আরকান আর্মি (এএ) এবং রোহিঙ্গা সলিডারি অর্গানাইজেশন (আরএসও) মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় গুলি, মর্টার শেল, বিস্ফোরিত রকেট লাঞ্চারের খোল এপারের ঘরবাড়িতে পড়ার কারনে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। এসময় প্রবীর ধর (৬০) নামে এক বাংলাদেশী গুলিবিদ্ধ হয়, তার হাতে গুলি লাগে। এই ঘটনায় নিরাপত্তার জন্য ৫টি স্কুল বন্ধ রয়েছে। 
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত লাগাতার গোলাগুলি, মার্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লান্সার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেপে ওঠে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম-তুমরুর বিস্তীর্ণ এলাকা। এসময় তুমরুর কোনা পাড়ায় ভুলুর বাড়িতে এসে পড়েছে রকেট লান্সার উড়ে এসে পড়ার কারনে ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্থানীয় প্রবীর ধর গুলিবিদ্ধ হয়। কোণারপাড়া, ভাজাবানিয়া, বাইশফাঁড়ি এলাকার লোকজনও নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। 
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা জানান, গতরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের ভিতরে গোলাগুলির কারনে ধুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশফারি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমরু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,পশ্চিম কুল তুমরু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ গুমধুম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার একদিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আরো জানা গেছে, একের পর এক ঘটনার কারনে স্থানীয়দের অনেকেই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। এখন ভয়ে অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছে না। সীমান্ত এলাকার কৃষকরা তাদের কৃষি জমির ফসল আনতে জমিতে যেতে ভয় পাচ্ছে। তুমরু বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি রুপলা ধর জানান, একদিকে সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ, অন্যদিকে গুলি ও মর্টারশেল ঘরে এসে পড়ার কারনে রাতে বাসায় থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। 
তিনি আরও বলেন, আমাদের পাশের এলাকার এক ঘরের চালায় বিস্ফোরিত রকেট লান্সার এসে পড়েছে। অনেকের বাড়ির উঠানে গুলিও এসে পড়েছে, একজনের হাতে গুলি লেগেছে।

ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া জানান, একদিন বন্ধ থাকার পর আবারও সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। আর সকালে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের  তুমরু এলাকায় এসে পড়ে। এতে আহত হয়েছেন ১ বাংলাদেশি

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, রবিবার ভোর থেকে মিয়ানমারের সীমান্তের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির কারনে ঘুমধুম-তুমরু সীমান্তবর্তী এলাকাবাসীদেরকে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সীমান্তের স্কুলগুলো আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সীমান্তের পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি, পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সদস্য আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে শোনা যাচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি নিরাপত্তা বাড়িয়েছে সীমান্ত এলাকায়। নিরাপত্তা চৌকি গুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।