কোটি টাকা আত্মসাৎ করে শিক্ষা কর্মকর্তা লাপাত্তা


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৯:৩৪ পিএম, ২০২৩-০৭-০৭

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে শিক্ষা কর্মকর্তা লাপাত্তা

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ইউনাইটেড ন্যাশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (UNDP) পরিচালিত জাতীয়করণকৃত ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৩জন শিক্ষকের কাছ থেকে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিইও) মুহাম্মদ কামাল হোসেন। এরপর সেসব টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান সেই শিক্ষা কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোয়াংছড়ি উপজলায় ২০১৭ সালে জাতীয়করণের আওতায় আনা হয় ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয়করণের আওতায় আসেন সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ৫৫ জন শিক্ষকও। ২০১৭-২১ সাল পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন ভাতা ছিল বকেয়া । এই বকেয়া বেতন শিক্ষকদের এনে দেওয়ার কথা বলে সহকারী শিক্ষা অফিসার কর্মরত শিক্ষকদের কাছ থেকে বেতন ভাতা বিলের বিপরীতে জনপ্রতি ৩ লক্ষ টাকা দাবী করেন। পরে ৫৫ জনের মধ্যে ৪৩ জনের কাছ থেকে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

এদিকে গত ৫ জুলাই শিক্ষকদের আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত চেয়ে ও শিক্ষা কমকর্তা মুহাম্মদ কামাল হোসেনের অপসারণ দাবী করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করা হয়।

রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তথ্য মতে, ২০০৭-২০০৮ সালে বিভিন্ন পাড়ায় ইউএনডিপি অধীনে ১৬টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর ২০১৭ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ইউএনডিপি অধীনে পরিচালিত হয় ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

তারমধ্যে জামা চন্দ্র পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, হ্লাপাগই পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, থোয়াই অংগ্য পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাওয়া পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ণবাসন পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্রংলাই পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুটিয়া পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্নিবার পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় , তারাছা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাসুমুই পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেরাই প্রু পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডলুঝিড়ি পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলেক্ষ্যং পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্লোমাসাং পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, লুংলাই পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খাব্রে পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। একই সালে মধ্যে সেই ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। এতে বিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয়করণ হয় ১৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ৫৫ জন শিক্ষককে। তবে ২০১৭-২১ সাল পর্যন্ত সেব শিক্ষকদের বেতন ভাতা ছিল বকেয়া।

শিক্ষকরা জানান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ কামাল হোসেন ও অফিস কর্মচারির যোগসাযোসে শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দীর্ঘ বছর ধরে। শিক্ষকদের চাকরীচ্যুত করাসহ বিভিন্ন ধরনের চাকরীর সমস্যা হওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪৩ জন শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা দায় করতে থাকেন।

এছাড়াও শিক্ষকদের বিভিন্ন অনলাইন তথ্য আপডেট অজুহাত দেখিয়ে জনপ্রতি ৫শত টাকা ও সকল জাতীয় দিবসসহ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারী বাজেট থেকে দুই-তৃতীয়াংশ টাকা হারের অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করে গেছেন। এভাবে দিনের পর দিন সেই কর্মকর্তার প্রতি বিভিন্ন অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন শিক্ষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রোয়াংছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দুইতলা বিশিষ্ট ভবন। ভবনের নীচ তলা একটি কক্ষে বসেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিইও) মুহাম্মদ কামাল হোসেন। কিন্তু সেই কক্ষে রয়েছে তালা ঝুলানো। ঈদের ছুটির কথা বলে সেসব টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার পর আর আসেননি তিনি। তার কক্ষ খোলা কিংবা কখন আসবেন সে ব্যাপারে জানেন না অনান্য কর্মকর্তারাও।

এব্যাপারে রোয়াংছড়ি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) মুহাম্মদ কামাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে তার কক্ষটি তালবদ্ধভাবে পাওয়া যায়।

বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অভিযোগকারীদের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অভিযোগের সব ডকুমেন্ট আনতে পারেননি। পরবর্তীতে সব ডকুমেন্ট জমা দেওয়া হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এবিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষকরা রোয়াংছড়ি উপজেলার সহাকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিরুদ্ধে অভিযাগ এনে চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিয়েছে।

আগামী ৭দিনের মধ্যে আত্মসাতের তথ্য প্রমাণসহ বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট দাখিল করতে বলা হয়েছে। অভিযোগটি প্রমাণিত হলে সরকারের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবং অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও এব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।