রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার নেশায় চোরাচালানীতে লিপ্ত হচ্ছে লামার তরুনরা


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ১১:৫৩ পিএম, ২০২৩-০৭-০৫

রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার নেশায় চোরাচালানীতে লিপ্ত হচ্ছে লামার তরুনরা

রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার নেশায় পার্বত্য বান্দরবানের লামা-আলীকদমে তরুনরা ঝুঁঁকে পড়েছে গরু চোরাচালান, মাদক ও অস্ত্র পাচারে। অল্প কয়েকদিনে লামার পাশর্^বর্তী আলীকদম উপজেলার অনেক তরুন ও যুবক অস্বাভাবিক ভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার ঘটনায় এই উপজেলার উঠতি বয়সী তরুনরা এখন বেসামাল হয়ে পড়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, মায়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা গরু চোরাকারবারের সাথে জড়িত আলীকদমের অনেক তরুন ও যুবক ইতিমধ্যে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আর এই দৃশ্য দেখে এখন লামার উঠতি বয়সী তরুন ও শিক্ষার্থীরাও বিনা পরিশ্রমে কোটিপতি হওয়ার আশায় সংঘবব্ধ সিন্ডিকেট গড়ে চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছে। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এই চিত্র। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১ বছরের অধিক কাল সময় ধরে লামার পার্শ্ববর্তী আলীকদম সীমান্তের পোয়ামুহুরী দিয়ে মায়ানমার থেকে আসা গরু জড়ো করা হয় লামা ও আলীকদমের উপজেলা সীমানা শিপাতলী পাড়া এলাকায়। সেখানে দুই থানা পুলিশের পৃথক দুইটি টিম বিশেষ টোকেন নিশ্চিত হয়ে গরুর পাচারের ক্লিয়ারেন্স দেয়। এরপরই গরু ভর্তি ট্রাকের সামনে পেছনে মোটর সাইকেলে পাহাড়া দিয়ে কিছু তরুন এবং যুবক এসব গরু লামা-চকরিয়া ও লামা-ফাইতং সড়ক দিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌছে দিয়ে আসে।  গত দেড় বছরে লামা উপজেলার বিভিন্ন কানেকটিং সড়ক দিয়ে লক্ষ লক্ষ গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়ে আসছে। আর গরুর গাড়িতে পাচার হয়েছে বিপুল পরিমান মাদক ও অস্ত্র। 

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, মায়ানমার ও আলীকদম সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুফ অস্ত্র ও ইয়াবা গরু চোরাকারবারীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে দেয়। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রহস্যজনক ভূমিকায় গরু পাচারকারী সিন্ডিকেট কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই নিরাপদেই অস্ত্র ও ইয়াবা পাচার করে আসছে। আর সুযোগে গরু. মাদক ও অস্ত্র চোরাকারবারের সাথে জড়িতরা অস্বাভাবিক টাকার মালিক হওয়ায় এখন লামা ও আলীকদমের উঠতি বয়সী তরুনরা বেসামাল হয়ে পড়েছে। 

অভিযোগ রয়েছে, লামা উপজেলায় গঠিত উঠতি বয়সী তরুনদের গ্রুফটি মায়ানমার থেকে আসা গরু চোরাকারবারের লামা অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে পারে এমন তরুন ও যুবকরাই রযেছে চোরাকারবারের মূল নেতৃত্বে। মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা গরু লামা উপজেলার বিভিন্ন সড়ক দিয়ে গ্রুফটি ফিল্মি স্ট্যাইলে রাত ও দিনে পাচারে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। আর পর্দার অন্তরাল থেকে তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে অদৃশ্য এক শক্তি। 

স্থানীয় সুশীল সমাজ ও সচেতন মহলের অভিযোগ, গরু, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান কার্যক্রম নির্বিঘেœ পরিচালনার জন্য লামা উপজেলার একাধিক রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের ছাত্র নেতৃবৃন্দকে বাছাই করে নিয়েছে চক্রটি। আর এদের মাধ্যমেই লামা-চকরিয়া ও লামা-ফাইতং সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার অবৈধ গরু পাচার করা হচ্ছে। আর তাদের চোরাচালান কার্যক্রমে সরাসরি সহযোগিতা করছে রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি অংশ। লামা ও আলীকদমের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা গত এক বছরে মায়ানমার থেকে আসা চোরাইগরু পাচারে সহযোগিতা করে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলেও সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এছাড়াও আলীকদম উপজেলার চোরাকারবারীর সাথে জড়িতদের রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে বিলাসি জীবন যাপন বান্দরবান জেলার সর্বস্তরের মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মায়ানমার হতে আসা গরুর চোরাকারবার হতে গত এক বছরে লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫’শ কোটি টাকার বখড়া লেনদেন হয়েছে। আদায়কৃত এই বখড়ার টাকার সিংহভাগ গেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু নির্দিষ্ট কর্মকর্তার পকেটে। অবশিষ্ট টাকা কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী এবং স্থানীয় কিছু সাংবাদিকসহ বিভিন্ন লোকজনের পকেটে। যার কারণে এসব এলাকার চোরাকারবার নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেতন তুলে ধরা হলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উল্লেখয়োগ্য কোনো ভূমিকা নেই। 

মো. জুয়েল নামক লামার মধুঝিরি এলাকার এক তরুন জানান, লামা উপজেলায় কোনো চোরাই গরু ব্যবসায়ী নাই। লামার ১৫ থেকে ২০ জন তরুন আলীকদমের বিভিন্ন চোরাকারবারী গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তিতে গরুর চালান লামা অংশের কানেকটিং সড়কগুলো পার করে দেয়।

জুয়েল বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিভিন্ন চেক পয়েন্টে কর্মরত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করে গরু নির্ধারিত গন্তব্যে পৌছে দেওয়াই মূলত এদের দায়িত্ব। চুক্তি মোতাবেক ঘাটে ঘাটে টাকা খরচ করে অবশিষ্ট যা থাকে তাই আমাদের (তরুন ব্যবসায়ী জুয়েলদের) লাভ হয়। 

লামা থানায় কর্মরত একজন উপ-পরিদর্শক (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) জানান, লামায় গঠিত চোরাকারবারের সিন্ডিকেট সদস্যরা নিজেদেরকে রাজনৈতিক দলের প্রভাব দেখিয়ে চোরাকারবার করে আসছে। আর এই তরুন গ্রুফটিকে সহযোগিতা করার জন্য কিছু রাজনৈতিক নেতা অনুরোধ করছে। রাজনৈতিক তদবির ও অনুরোধের কারণে অনেক সময় ছাড় দিতে হয়। এছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলো তো আপনাদের জানা আছে। 

লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মাদক ও চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। অনেক চোরাকারবারীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাচারের সময় অনেক গরু জব্দ করে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে।