ফলোআপ; সোনালী ব্যাংকের ভূতুরে ঋণ পরিশোধের চাপ সইতে নাপেরে ষাটোর্ধ বৃদ্ধের মৃত্যু


আলমগীর মানিক    |    ০৪:০৮ এএম, ২০২৪-০১-২৮

ফলোআপ; সোনালী ব্যাংকের ভূতুরে ঋণ পরিশোধের চাপ সইতে নাপেরে ষাটোর্ধ বৃদ্ধের মৃত্যু

আলমগীর মানিক

রাঙামাটির লংগদু’য় সোনালী ব্যাংক কর্তৃক ভূয়া কৃষি ঋণ পরিশোধের চাপ সইতে নাপেরে ব্রেইন স্ট্রোক করে পক্ষাঘাতরোগে আক্রান্ত হয়ে ষাটোর্ধ এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। শনিবার সকালে লংগদুর চাইল্যাতলী এলাকায় নিজ বসতঘরে অসুস্থতাবস্থায় মারা যান।

নিহতের বড় সন্তান বাদশা আলম মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, জীবনে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণ গ্রহণ না করেও পরিবারের চার সদস্যের নামে অন্তত আড়াই লাখ টাকার ঋণ পরিশোধের নোটিশ প্রাপ্তির পরের দিনই ব্রেইন স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস হয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হওয়ার ৫২দিন পর অবশেষে মারা গেলেন রাঙামাটির লংগদু উপজেলাধীন চাইল্যাতলীর ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ষাটোর্ধ আক্তার হোসেন। 

নিহতের বড় ছেলের দাবি ঋণের পরিশোধের চাপ সইতে নাপেরে তার পিতা ব্রেইন ষ্ট্রোক করে অসুস্থ অবস্থায় মারাগেছেন। এনিয়ে সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখার সংশ্লিষ্ট্যদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করবেন বলেও প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানিয়েছেন নিহতের সন্তান বাদশা আলম। 

লংগদু থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের লংগদু প্রতিনিধি গোলামুর রহমানকে জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এরআগে লংগদু’য় সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি নিয়ে কয়েকশো নীরিহ গ্রামবাসীর মানববন্ধন বিক্ষোভের সময় আক্তার হোসেন এর স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদক কর্তৃক সংবাদ মাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছিলো। 

নিহত আক্তার হোসেনের পরিবার জানায় গত ২০২৩ সালের ৫ই ডিসেম্বর তারিখে আক্তার হোসেন, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ মোট চারজনের নামে প্রায় আড়াই লাখ টাকার কৃষি ঋণ রয়েছে উল্লেখ করে সেই টাকাগুলো অবিলম্বে পরিশোধের জন্য আইনী নোটিশ প্রদান করে সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখা কর্তৃপক্ষ। 

জীবনে ব্যাংকের আশেপাশেও না আসা দরিদ্র কৃষক আক্তার হোসেন হঠাৎ করেই সোনালী ব্যাংকের টাকা পরিশোধের নোটিশ পেয়ে হতাশা আর আতঙ্কে ব্রেইন ষ্ট্রোক করে জবান হারিয়ে প্যারালাইজড হয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশেষে দীর্ঘ ৫২দিন পর শনিবার বিকেলে তিনি অসুস্থাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। 

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্রভাবশালী প্রতারক চক্র কর্তৃক লংগদু’র সোনালী ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারির প্রত্যক্ষ মদদে লংগদু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ৫শতাধিক হতদরিদ্র কৃষকের এনআইডি ও স্থানীয় বাসিন্দার সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যবহার করে কৃষিঋণের মাধ্যমে ২০১০ থেকে ২০১২ সালে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এই ঋণের সুদেআসলে বর্তমানে ৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। 

এদিকে হঠাৎ করেই ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে লংগদু’র সোনালী ব্যাংক কতৃপক্ষ ৫০৬ জন হতদরিদ্র কৃষকের নামে ঋণ পরিশোধের নোটিশ প্রদান করলে জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হয়। খোজঁ নিয়ে জানাগেছে, এই নোটিশ পাওয়ার পরপরই চাইল্যাতলীর ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম ষ্ট্রোক করে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে টাঙ্গাইলের হাসপাতালে, অপর কৃষক সোলায়মান বর্তমানে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে, জলিল মিস্ত্রি ষ্ট্রোক করে বর্তমানে প্যারালাইজড হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে লংগদুয় অসুস্থতাবস্থায় অর্ধাহারে অনাহারে দিনানিপাত করছে।