আমতলীর চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর অভিযোগ;ডিসি বরাবরে আবেদন


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৩:৩০ এএম, ২০২৩-১০-২২

আমতলীর চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর অভিযোগ;ডিসি বরাবরে আবেদন

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন ৩৭নং আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও পরিষদের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের দাবিতে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও আমতলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী। এই আবেদন নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট্য প্রশাসনিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

আমতলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী তার লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমিহীনদের মাঝে ঘর প্রদানে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারী নিদের্শনা না মেনে সরকারী ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সমাজের বিত্তশালী রেকর্ডধারী রানিং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের মাঝে টাকার বিনিময় অনিয়মের মাধ্যমে ঘর প্রদান ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের কাবিখা-কাবিটা ও টি.আর প্রকল্পের কাজ না করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে টাকা উত্তোলন ও প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ প্রদানের লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের রাঙামাটিস্থ উন্নয়ন বোর্ড হইতে প্রদানকৃত জনগণের মাঝে সোলার প্যানেল বিতরণের শর্তে টাকা গ্রহণ এবং পরবর্তী সোলার প্রদানের শর্তে জনসাধারণ কাছ টাকা গ্রহণ করায় সরজমিনে তদন্ত পূর্বক ইউনিয়ন পরিষদ বিধিমালা ২০০৯ এর উপ-ধারা-৩৪ এর (খ) (ঘ) ধারা মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগে আবেদন জানানো হয়েছে। 

রাসেল চৌধুরী উল্লেখ করেন, এই মর্মে অভিযোগ দাখিল করিতেছি যে, বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন ৩৭নং আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মজিবুর রহমান (স্বতন্ত্র) নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচিত চেয়ারম্যান, যিনি সব সময় সরকারের দুর্ণাম যাহাতে হয় সে কাজে ব্যস্ত থাকেন, শুধু তাই নয় তিনি তার মোবাইল থেকে নিজ ফেসবুক আইডি হতে সোশ্যাল মিডিয়ায় “বঙ্গবন্ধু ও তো রাজাকার” লিখে পোষ্ট করেন। যাহার কারণে আমতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হোসেন চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুানালে একটি মামলা করেন। যাহার মামলা নং- ২৮/২০২৩, তারিখ- ১১/০১/২০২৩ইং (কপি সংযুক্ত)। ইহা করেও শান্ত হয় নাই। যাহাতে সাধারণ জনগণের মনে আওয়ামী সরকারের প্রতি ঘৃণা মনোভাবের জন্ম হয় সেজন্য সরকারি বিভিন্ন কাজে ফাঁকি প্রদান করিয়া টিআর-কাবিখা-কাবিটাসহ সরকারী বিভিন্ন বরাদ্দে কাজ না করে টাকা আত্মসাতসহ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ প্রকল্প সোলার প্রদানে টাকা গ্রহণসহ যথ অনিয়ম আছে তাই তাহাই সে করছে। 

এব্যাপারে পূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বার বার অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় অনিয়মের চরম পর্যায়ে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুজিব শতবর্ষের উপহার ভূমিহীনদের মাঝে ঘর প্রদানে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিত্তশালীদের মাঝে ঘর প্রদান করেন। যাহার কারণে অত্র এলাকায় সাধারণ জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে। আমতলী ইউনিয়নের জনাব মজিবুর রহমান ৯টি ঘর প্রদান করেন এর মধ্যে ৫টি ঘর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউনিয়ন পরিষদের রানিং মেম্বারদের দিয়েছেন।

১। জনাব আব্দুল মালেক, ইউপি সদস্য রানিং, ৫নং ওয়ার্ড তার বাড়িতে ১টি। 
২। জনাবা হাসিনা, ইউপি সদস্যা রানিং, ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড তার বাড়িতে ১টি।
৩। জনাবা মাফিয়া বেগম, ইউপি সদস্যা রানিং, ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড তার বাড়িতে ১টি।
৪। জনাবা নুর আয়শা, ইউপি সদস্য রানিং, ৭,৮ ও ৯নং ওয়ার্ড তার বাড়িতে ২টি। একটি নিজের নামে ও আরেকটি তার ভাগিনার নামে। বাকী ঘর গুলো স্বজনপ্রীতি করে বিত্তশালীদের মাঝে প্রদান করেন। পক্ষান্তরে বাকী ঘরসহ সকল ঘর যাদেরকে দেওয়া হয়েছে তাদের প্রত্যেকের ৩/৪ একর জমি রেকর্ডভুক্ত আছে। সেই রেকর্ডীয় জমির উপর প্রধানমন্ত্রী মুজিব শতবর্ষের উপহার ঘর নির্মাণ করেন, শুধু তাই নয় কোন রকম নকশা তোয়াক্কা না করে নিজেদের মনগড়াভাবে নকশা পরিবর্তন করেছেন। কেউ আবার ঘর বড় করে নির্মাণ করেছেন। প্রত্যেকটি ঘরের কাজ চেয়ারম্যান নিজে করিয়েছেন। আবার কোন ঘরের টয়লেট করেন নাই। ঘর যাদের প্রদান করেছেন তাদের কাছ থেকে সিমেন্ট ও মিস্ত্রী খরচের কথা বলে টাকা নিয়েছেন। 
ঘর তৈরীতে যে সকল অনিয়ম করেছেন-
১। ইউনিয়ন পরিষদ বিধিমালা আইন লংঘন করে রানিং ইউপি সদস্যদের বাড়ীতে ৫টি ঘর তৈরী 
করেছেন। যাহা ভূমিহীনদের মাঝে দেওয়ার কথা ছিল ।
২। ৪টি ঘর আত্মীয়করণ ক্ষমতা অপব্যবহার করে প্রদান করেছেন।
৩। ঘরের নকশা পরিবর্তন করেছেন।
৪। ১টি ঘরের সাথে টয়লেট নির্মাণ করেন নাই।
৫। ঘরের মালিকের কাছ সিসেন্ট ও মিস্ত্রী খরচ বাবদ টাকা গ্রহণ করেছেন।
৬। মোট ৯টি ঘরের রেকর্ডভুক্ত জমিতে নির্মাণ করেছেন।
৭। যাদের মাঝে সরকারী ঘর প্রদান করা হয়েছে তারা সকলেই সমাজের প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধি।
৮। যাদের মাঝে সরকারী ঘর প্রদান করা হয়েছে কেহই ভূমিহীন নয় (কিছু ঘরের ছবি সংযুক্ত)।
৯। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের কাবিখা, কাবিটা ও টিআর প্রকল্পের কাজ না করে আত্মস্বার্থে উদ্দ্যেশে টাকা উত্তোলন।
১০। ঘরের বিদ্যুৎ প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড হতে প্রদানকৃত সোলার প্যানেল জনগণের মাঝে বিতরণে এবং পরবর্তীতে সোলার প্যানেল বিতরণে শর্তে জনগণের কাছ থেকে দুর্নীতি মাধ্যমে নগদ টাকা গ্রহণ করেন। 

এমতাবস্থায় সরজমিনে তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতি ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতিসহ সকল বিষয় তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করছি। তা না হলে সরকারী ভালো কাজের জন্য সুনাম হওয়া থেকে দুর্নাম বেশি হবে এবং আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। তাই সঠিক তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত অত্র ইউনিয়নে ভূমিহীনদের মাঝে ঘর প্রদানের সঠিক ভূমিহীন কিনা যাচাই করার জন্য অত্র ইউনিয়নের হেডম্যান দ্বারা তদন্ত করে প্রতিবেদন নিয়ে নতুন ঘর নির্মাণ করার আবেদন করছি। কারণ মানুষকে নতুন ঘর প্রদানের শর্তে চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান অনেকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছে। 
অতএব, মহোদয় সদয় বিবেচনা পূর্বক জনস্বার্থে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে টিম তৈরী সরজমিনে তদন্তপূর্বক ক্ষমতার অপব্যবহার স্বজনপ্রীতি দুর্নীতি সরকারের নিদের্শনা না মানা কারণে ইউনিয়ন পরিষদ বিধি মালা ২০০৯ এর উপ-ধারা ৩৪ (খ) (ঘ) মোতাবেক  প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদনও জানিয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী। 


এদিকে, উপরোক্ত অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে জানতে চাইলে মুঠোফোনের মাধ্যমে আমতলী ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানান, এসব অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা। আমরা মোট ১৩টি ঘর করেছি। যারা ঘর পাওয়ার যোগ্য তাদেরকেই এসব ঘর দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বলেন, রাসেল চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে নিজেই তার নিজেসহ আত্মীয় স্বজনদের নামে সরকারী ঘর বরাদ্ধ দিয়েছে। আপনারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত করে আপনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

তিনি বলেন, রাসেল চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে ভূয়া ওয়ারেন্ট এনে আমাকে গ্রেফতার করানোর চেষ্ঠা করেছে, সে আমার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা অভিযোগ এনে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসকল কাজ করতেছে রাসেল। অপর এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, আমি নিজেই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, আমি বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষ্ট্যাটাস দিবো কোন দুঃখে।