থানচিতে নিন্মমানের ইট ও বালু দিয়ে গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ


নুরুল কবির    |    ০১:২৩ এএম, ২০২২-০৫-১৯

থানচিতে নিন্মমানের ইট ও বালু দিয়ে গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ

থানচি উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তাসমূহ টেকসই এর লক্ষ্যে হেরিং বোল্ড বন্ড (এইচবিবি)করণ কাজে নিন্মমানের ইট ও কাদামিশ্রিত বালু ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের নিয়ম লংঘন করে কর্তৃপক্ষের সাথে আঁতাত করে ঠিকাদার এ কাজ করায় প্রতিবাদ করেও কোনো সুরাহ পাচ্ছেনা বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, নিম্নমানের ইট ও কাদামিশ্রিত স্থানীয় বালু দিয়ে গ্রামীণ এ ইটের রাস্তা নির্মাণ হলেও মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। বর্ষা আসলেই রাস্তাটি ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাবে।

জানা গেছে,বান্দরবানের থানচি উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তাসমূহ টেকসই করণের লক্ষ্যে হেরিং বোল্ড বন্ড (এইচবিবি)করণ ২য় পর্যায় প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থ বছরে নারিকেল পাড়া হতে খিবুরী পাড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এর মাধ্যমে রাস্তাটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজের ঠিকাদার পিআইও এর যোগসাজসে নিন্মমানের ইট ও কাদা মিশ্রিত বালু এ কাজে ব্যবহার করছেন। ফলে কাজ চলাকালীনই ইট ভেঙে গুঁড়া হয়ে যাচ্ছে, কোনোমতে বালু দিয়ে ইট বসানোর চেষ্টা করছে। এটি দেখে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেন এবং প্রকল্পের নিয়ম মোতাবেক কাজ করার দাবি জানায়। কিন্তু পিআইও-ও যোগসাজস থাকায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার যেনতেনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে থানচি পিআইও কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রায় ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে থানচি সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে উপজেলা সদর হতে গ্রামীণ অবকাঠামোগত যোগাযোগ উন্নয়নে স্থানীয় বাসিন্দাদের জুমের ফসল ন্যায্যমূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ এর লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় নারিকেল পাড়া হতে খিবুরী পাড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার পর্যন্ত এইচবিবি করণ (ইট-বালি দিয়ে) রাস্তা নির্মাণ শুরু হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে উক্ত কাজটির কার্যাদেশ পায় বান্দরবানের ঠিকাদার বিপ্লব এন্টারপ্রাইজ।

সূত্রমতে, বিপ্লব এন্টারপ্রাইজ কাজটি পেলেও তিনি কাজটি বান্দরবানের বাসিন্দা মো. আরাফাত ও মো. নাজিম, আলীকদমের বাসিন্দা মো. হারুন অর রশিদ এবং নুমংপ্রু মারমা টাইগার-এ চারজনের কাছে কাজটি ১৫ শতাংশ লাভ দিয়ে কিনে নেন। ফলে বর্তমানে এ কাজটি বাস্তবায়ন  করছেন- মো. আরাফাত, মো. নাজিম, মো. হারুন অর রশিদ এবং নুমংপ্রু মারমা টাইগার।

এদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণে নি¤œমানের ইট ও স্থানীয় সাঙ্গু নদী হতে কাদামিশ্রিত বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজের প্রথম অংশ মাটি কাটা সম্পন্ন করে এইচবিবি পদ্ধতির প্রথম লেয়ারে ইটের সলিং এ বালু দেওয়ার কথা থাকলেও বালু দেয়া হয়নি। দ্বিতীয় অংশে ইট বসানোর সময় অন্তত দুই মিলিমিটার ফাঁকা রেখে সেগুলোর ওপর বালু দিয়ে আচ্ছাদনের নিয়ম থাকলেও উক্ত রাস্তায় উপরিভাগে বালু দেয়ার চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

ঠিকাদারের শ্রমিকদের সাইট মাঝি মো. মামুন ও মুন মিয়া জানান, ঠিকাদারের কথা মতে তাঁরা কাজ করছেন। না করলে চুক্তি অনুসারে টাকা দিবে না। তাঁরা স্বীকার করেন গত কয়দিন আগে ২নং ইট দুই গাড়ি এনে সেগুলো কাজে লাগানোর পর পাড়াবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পিআইও কার্যালয়ের অফিস সহকারী আমাদের কাজের নোট বইয়ে উক্ত ইট দিয়ে আজ কাজ না করার জন্য লিখে গেছেন। কিন্তু ঠিকারদের চাপে পড়ে আমরা ফাঁকে ফাঁকে উক্ত ইট (২নং) ব্যবহার করছি।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি মেম্বার অংসাথুই মারমা বলেন, রাস্তার কাজে ভাঙাচোরা ইট বিছিয়ে আর নদীর ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত বালু ব্যবহার করে দায়সারাভাবে ঠিকাদার কাজ শেষ করতে চাইছে। নারিকেল পাড়া কার্বারীর ছেলে মং এ মারমা বলেন, যাঁরা কাজ করছে তারা আজ না হয় কাল চলে যাবে, কিন্তু আমাদেরকেই ভাঙাচোরা ইটের রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, এ কাজ চলাকালীন প্রকৌশলীকে কাজের এলাকায় দেখা যায়নি। ফলে ঠিকাদার যেনতেনভাবে কাজ শেষ করে সরকারি অর্থ (বিল) তুলে নেবেন। আর সারাবছর আমাদের দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হবে। সামনেই বর্ষাকাল। নি¤œমানের ইট ও বালু ব্যবহার করে রাস্তায় নির্মাণ করায় বৃষ্টিতে ইটগুলো ভেঙে যাবে। এছাড়া নি¤œমানের বালু দেয়ায় ইটগুলো উঠে স্থানে স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়ে রাস্তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে।

খিবুরী পাড়ার বাসিন্দা থোয়াইহ্লাপ্রু মারমা বলেন, সরকার গ্রামের মানুষের কথা চিন্তা করে  রাস্তা নির্মাণের জন্য লাখ লাখ টাকা দিচ্ছে, আর কিছু অসাধু লোকজন নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করে যেনতেনভাবে কাজ করে বেশিরভাগ টাকাই হাতিয়ে নিচ্ছেন।

উক্ত রাস্তার কাজের ঠিকাদার (পার্টনার) মো. হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা কাজ করছি, সরকার ইচ্ছা করলে আমাকে টাকা দিবে, সাংবাদিকদের এখানে নাক গলানোর কি আছে? কাজের ভালো-মন্দ পিআইও-ইঞ্জিনিয়ার দেখবেন। এখানে সাংবাদিক বা এলাকার লোকজনের কিছু বলার অধিকার নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সুজন মিয়া বলেন, উপকারভোগীদের অভিযোগ আমি দেখছিলাম-নির্মাণ কাজের এক ট্রাক নি¤œমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে বলে স্বীকার করে।