রাঙামাটি শহরে বনবিভাগের গাফিলতিতে গাছ উপড়ে দোকান ও বসতঘর বিধ্বস্ত


আলমগীর মানিক    |    ০৪:৩২ এএম, ২০২১-০৬-০৯

রাঙামাটি শহরে বনবিভাগের গাফিলতিতে গাছ উপড়ে দোকান ও বসতঘর বিধ্বস্ত

রাঙামাটি শহরের ফরেষ্ট কলোনী এলাকায় বিশালাকার গাছ ভেঙ্গে পড়ে তিন দোকানসহ ৪টি বসত ঘর সম্পূর্নভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। অলৌকিক ভাবে বেচেঁ গেছে ঘরের বাসিন্দারা।শহরের বনবিভাগের রেষ্টহাউসের পেছনে হ্যাপীর মোড় টু ফরেষ্ট কলোনী সড়কে মঙ্গলবার সকাল ৬টার সময় এই দূর্ঘটনা ঘটে।

দূর্ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামের দোকানী শহিদুল জানিয়েছেন, আমি ভাড়া নিয়ে দোকানটি চালাচ্ছিলাম। প্রতিদিনের ন্যায় সোমবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যাই। সকালে দোকান খুলতে এসে দেখি দোকানটি সম্পূর্ন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। একলাখ টাকার মালামালের অনেকগুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে; কিছু ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। 

ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বন বিভাগের বড় বড় বিশাল দু’টি গাছ দীর্ঘ দিন ধরে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ঝুকিপূর্ণ গাছ কেটে ফেলতে বার বার বলার পরও বন বিভাগ এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা ছিল না। এখন দুর্ঘটনার পরে তাদের টনক লড়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের পিছনে আরো কয়েকটি বিশাল গাছ ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেগুলো অচিরেই না কাটলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে।

এদিকে, গাছ পড়ে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থল ছুটে যান রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মোঃ বোরহান উদ্দিন মিঠু। এসময় এনডিসি বনবিভাগকে ডেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আচড়ে পড়া গাছটি কেটে রাস্তা পরিস্কার করে দেওয়ার জন্য বলেন। ঝুকিপূর্ণ অপর গাছগুলেঅ দ্রুত সময়ের মধ্যে কেটে ফেলার পদক্ষেপ নিতে বনবিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ দোকান ও বাসাগুলোর মালিক রহমত উল্লাহ জানান, ফজরের নামাজ পড়ে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকট শব্দে বিশালাকার গাছটি আমাদের দোকান ও বাসাগুলোর উপর আচড়ে পড়ে। এসময় দোকানের ভাড়াটিয়ারা অন্যত্র ছিলো এবং বাসার ৪রুমের মধ্যে দুই রুমে মানুষ থাকলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে তারা কোনমতে প্রাণ নিয়ে বের হয়ে এসেছে। কিন্তু পুরো ঘরটি সম্পূর্ন বিধ্বস্থ হয়েগেছে। বনবিভাগের গাফিলতির কারনে আজ এতোবড় দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এমন মন্তব্য করে রহমত জানান, সিএফ থেকে শুরু করে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের সকলকে এনে আমি তাদের অফিসের পেছনের ঝূকিপূর্ন অন্তত ৫টি গাছ দেখিয়েছিলাম। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন কিন্তু তাদের কর্মকর্তাদের অবহেলার কারনে গাছগুলো না কাটায় কোনো ধরনের ঝড়-বাদল নাথাকার পরেও এতো বড় গাছটি আচড়ে পড়েছে। আল্লাহর রহমতে ঘটনাস্থলে পথচারি দোকানগুলোতে কেউ অবস্থান না করায় প্রাণহানীর কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বনবিভাগের সদর রেঞ্জ অফিসের পেছনে সীমানা দেয়াল ফেটে বিশালাকার আরো একটি ঝুকে রয়েছে, এটির গোড়ায় মাটি নেই বললেই চলে।

যেকোনো সময় এই গাছটিসহ তারই পাশে থাকা আরো একটি বটগাছও আচড়ে পড়বে সড়কসহ দোকান ও বসতভিটার উপর। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটিস্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রফিকুজ্জামান শাহ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ঝূকিপূর্ন গাছগুলো সম্পর্কে উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বনবিভাগ। 

এদিকে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীস্থ রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের ফুটপাতে অবস্থিত একটি অর্ধমৃত বড় গাছ যেকোনো সময় রাস্তার উপর ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখানকার বাসিন্দা করিম জানিয়েছেন, তারা ইতোপূর্বে বিদ্যুৎ বিভাগসহ সড়ক বিভাগের লোকজনকে ঝূকিপূর্ণ গাছটি সম্পর্কে বারংবার অবহিত করার পরেও সংশ্লিষ্ট্য কেউ গাছটি অপসারনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়নি।