রাঙামাটি শহরে ফূফা কর্তৃক চাকমা কিশোরী ধর্ষণের শিকার! ৫ লাখ টাকায় আপোষ


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ১১:৩৪ পিএম, ২০২১-০৩-২৮

রাঙামাটি শহরে ফূফা কর্তৃক চাকমা কিশোরী ধর্ষণের শিকার! ৫ লাখ টাকায় আপোষ

রাঙামাটি শহরে নেশাজাতীয় পানিয় খাইয়ে ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া ১৪ বছর বসয়ী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তারই নিজ ফূফার বিরুদ্ধে। গত ২৫ মার্চ মধ্যরাতে শহরের কে কে রায় সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত জুয়েল চাকমা সরকারী একটি বাহিনীর সদস্য ও বর্তমানে তার চাকুরিস্থল চূয়াডাঙ্গায় বলে জানাগেছে। নিজ বাহিনী থেকে ছুটি নিয়ে রাঙামাটি এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে।

এদিকে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনাটি শহরের চম্পকনগরস্থ আইনী সহায়তাদানকারি একটি অফিসে দুপুর থেকে বৈঠকে বসে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত দীর্ঘ অন্তত ৭ ঘন্টা সময় নিয়ে অভিযুক্তকে দোষি সাব্যস্ত করে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে দফারফা করে দিয়েছেন বলে প্রতিবেদককে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন ভিকটিমের মা।

একজন আইনজীবির নেতৃত্বে অন্তত ১০ থেকে ১২ জনের উপস্থিতিতে এই আপোষ মিমাংষা করা হয়েছে বলে ভিকটিমের মা মুঠোফোনে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

ভুক্তভোগী কিশোরী সাংবাদিককে জানায়, সরকারী একটি বাহিনীর সদস্য জুয়েল চাকমা তার ফুফা হয়, তিনি চূয়াডাঙ্গা সীমান্তে চাকুরি করেন। গত ২৫ মার্চ ছুটি কাটাতে চুয়াডাঙা থেকে রাঙামাটির কে-কে রায় সড়কের নিজ ভাড়া বাড়িতে আসে জুয়েল চাকমা।

সেদিন রাত ১০টার দিকে রাতের খাবার শেষে ফুফা চুয়াডাঙা থেকে আনা জুস বেলের সরবতের সাথে মিশিয়ে তাকে খাইয়ে দেয়। তার সাথে ফুফার দুই সন্তান, আমরা দুই বোন এটি খাই। এটি খাওয়ার সাথে সাথে মাথা ঘুরালে আমার রুমে গিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। পরবর্তীতে রাত ২ টার দিকে ঘুম ভেঙে গেলে নিজেকে সম্পুর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পাই আমি।

লাইট জ্বালানোর পর ফুফাকে রুমে দেখি। এ দিন আমার ফুফু বাড়িতে ছিল না। সেদিন ফুফু’র সরকারী চাকুরির কারণে তিনি বিলাইছড়িতে অবস্থান করছিল। পরদিন ভোর সকালে পাশের বাড়িতে তার স্কুল শিক্ষিকার নিকট গিয়ে বিষয়টি খুলে বলেন এবং তার মা বাবাকে খবর দেন বলে জানান, ভুক্তভোগী কিশোরী। এ ঘটনার জন্য জুয়েলের শাস্তি দাবী করেন কিশোরীটি।

সেই স্কুল শিক্ষিকা ......চাকমা বলেন, ভুক্তভোগী কিশোরীটি তার মেয়ের ক্লাশমেট। ঘটনার পরদিন সে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। পরে তাদের পারিবারিক সমঝোতা হয় বলে জেনেছি। আমাদের আর কোন কিছু জানানো হয়নি। 

অভিযুক্ত জুয়েল চাকমা ধর্ষনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মেয়েটি আমার মেয়ের মত। আমি তাকে কিছুই করিনি। চুয়াডাঙা থেকে আনা জুস খেতে দিয়েছি এটি ঠিক। এ জুস ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ভাল। আমিও নিজে এ জুস খেয়েছি। এটি খেলে একটু মাথা ঘুরায় বলে দোকানদার আমাকে ক্রয় করার সময় বলেছিল।

তিনি দাবি করেন, সেদিন রাতে এলাকায় আগুন লেগেছিল হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে আমি তার রুমে গিয়েছিলাম। হয়তো সে আমাকে দেখে ভয় পেয়েছে। আসলে এটি একটি পারিবারিক ষড়যন্ত্র। বিষয়টি নিয়ে নিউজ না করলে খুবই খুশি হব। এটা সব জানাজানি হয়েছে। আমার খুব লজ্জা লাগতেছে।

এদিকে এ ঘটনায় রবিবার রাঙামাটি শহরে চম্পক নগর মোড়ে একটি বেসরকারী অফিসে সালিস হয়। সালিস সূত্র জানায়, বাহিনী সদস্য জুয়েল চাকমা তার নিজের দোষ স্বীকার করেন। তিনি সালিসে বলেন, ঘটনা আমার দ্বারা সংগঠিত হোক বা না হোক আমি দোষী। অপরাধ স্বীকার করে জুয়েল চাকমা কিশোরীটির পড়াশুনার খরচ চালানোর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিশোরীকে তিনি ৫ লাখ টাকা দিবেন। এ টাকা থেকে মাসিক ৬ হাজার টাকা করে কিশোরী নামে ব্যাংক একাউন্টে জমা দিবেন।

কিশোরীর মা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন তথ্যগুলো ঠিক আছে। সালিসে বসার পর এ সামাধান হয়েছে। তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়েছে উক্ত অফিসের জনৈক অনিতা চাকমার একাউন্টে উক্ত ৫ লাখ টাকা জমা করা হবে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত ইন্টারেষ্ট বাবদ আমার মেয়ে মাসিক ৬ হাজার টাকা করে দিবে বলে আপোষনামার কাগজে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এদিকে এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রাঙামাটি কোতয়ালী থানার ওসি কবির হোসেন জানান, এই ধরনের কোনো খবর আমরা পাইনি, কেউ মৌখিক বা লিখিত আকারেও আমাদেরকে বিষয়টি জানায়নি।