পার্বত্য ভূমি কমিশন বাতিলের দাবিতে রাঙামাটি শহরে ৩৮ ঘন্টা হরতালের ডাক পিসিএনপি’র


আলমগীর মানিক    |    ১২:৪২ পিএম, ২০২২-০৯-০৫

পার্বত্য ভূমি কমিশন বাতিলের দাবিতে রাঙামাটি শহরে ৩৮ ঘন্টা হরতালের ডাক পিসিএনপি’র

আলমগীর মানিক

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বাতিলসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে মঙ্গলবার রাঙামাটি শহরে সকাল ৬টা থেকে বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত টানা ৩৮ ঘন্টা হরতালের ডাক দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। সংগঠনটি পক্ষ থেকে আজ সোমবার বেলা সাড়ে এগারোটার সময় রাঙামাটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই হরতাল কর্মসূচীর ঘোষনা দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান। 

বুধবার বেলা ১১টার সময় রাঙামাটিস্থ পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে পাহাড়ের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে করনীয় নির্ধারণে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পার্বত্য ভূমি কমিশনের কমিটিতে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব না রাখার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ উক্ত হরতাল কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভূমি কমিশনের বৈঠক বাতিল করা না হলে কঠোর কর্মসূচীর পালনের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। 

রাঙামাটি শহরের বনরূপাস্থ একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে,  পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর জামান ডালিম,  যুগ্ম-সম্পাদক  রুহুল আমিন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক এসএম মাসুম রানা, রাঙামাটি জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আসমা মল্লিক,  সাংগঠনিক সম্পাদক লাভলী আক্তারসহ রাঙামাটি জেলা কমর্রত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্টনিক্স মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল জাতি গোষ্ঠী থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিশ্চিত করতে হবে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি নিরোধ নিষ্পত্তি এর কার্যক্রম শুরুর পূর্বে, ভূমির বর্তমান অবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভূমি জরিপ সম্পন্ন করতে হবে। 

জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমির উপর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন ২০১৬ এর ধারা সমূহ বাতিল করতে হবে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ব্যবস্থাপনা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রবর্তন করতে হবে এবং সমতলের ন্যায় জেলা প্রশসকগণকে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার দিতে হবে। 

কমিশন কর্তৃক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কারনে কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারী খাস জমিতে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত রীতি, প্রথা ও পদ্ধতির পরিবর্তে দেশে বিদ্যমান ভূমি আইন অনুসারে ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা কর হবে। 

বাংলাদেশ সরকারের আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক কর্তৃক বন্দোবস্তীকৃত অথবা কবুলিয়ত প্রাপ্ত মালিকানা থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতা কাজী মজিবুর রহমান বলেন, “কমিশনে বাঙালির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। সাংগঠনিক কাঠামো, সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেও উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা আছে। এই কমিশন যখন সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা উপজাতীয়দের পক্ষেই যাবে। এই অবস্থায় বাঙালি রা জমি হারিয়ে পথে বসতে বাধ্য হবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে পাহাড়ি বাঙ্গালী জনগণ।

তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নেতারা জানান এ ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আগামী সাতই সেপ্টেম্বর বুধবার রাঙামাটি জেলা সদরে ভূমি কমিশন আইন বাতিলের দাবীতে আমরা হরতাল কর্মসূচীর ডাক দিয়েছি। যতদিন এই আইন বাতিল হবেনা ততদিন পাহাড়ি বাঙ্গালী জনগণ কে সাথে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চলবে।

এদিকে, বুধবার (০৭ই সেপ্টেম্বর) ভূমি কমিশন আইন বাতিলের দাবিতে রাঙামাটিতে ডাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের হরতালকে ঘিরে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কায় শহরবাসীর মধ্যে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।