পাহাড়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ভূয়া খবরে ধূম্রজাল!


আলমগীর মানিক    |    ০৬:২৩ পিএম, ২০২২-০৮-২৬

পাহাড়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ভূয়া খবরে ধূম্রজাল!

আলমগীর মানিক 
 
রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে জেএসএস-ইউপিডিএফ এর মধ্যে সশস্ত্র বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের উত্তর জারুলছড়ি দুলুবনিয়া এলাকায় শুক্রবার ভোর পাঁচটায় গোলাগুলির শুরু হয়ে আনুমানিক দুই ঘণ্টা এই বন্দুকযুদ্ধ চলে। এতে উভয়পক্ষই কয়েক হাজার রাউন্ড গুলিবিনিময় করে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
 
এদিকে বন্দুকযুদ্ধের এই ঘটনায় বিভিন্ন মিডিয়ায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে ফলাও করে প্রচার করলেও নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আঞ্চলিকদল ইউপিডিএফ-জেএসএস এর দায়িত্বশীলরা কেউই নিহতের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
 
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ঘটনাস্থল দুলুবুনিয়া এলাকাটি ইউপিডিএফর এর নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সেথায় সংগঠনটির একটি সশস্ত্র দল অবস্থান করছে এমন খবর পেয়ে পতিপক্ষ জেএসএস এর একটি সশস্ত্র দল হামলা চালিয়ে গুলি চালালে নিজেদের রক্ষায় ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকেও পাল্টা গুলি চালালে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।
 
এই ঘটনায় অন্তত দুই ঘন্টাব্যাপী উভয়পক্ষের মধ্যে সহ¯্রাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ইউপিডিএফর দুইজন এবং জেএসএস এর একজন নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়া ও আঞ্চলিকদলগুলোর দ্বারা পরিচালিত ফেসবুকের বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে প্রচারনা চালানো হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় মুখপাত্র অংগ্যা মারমা জানিয়েছেন, আমাদের কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে জেএসএস। এতে ইউপিডিএফ’র কোনো নেতাকর্মী হতাহত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। যে খবরটি প্রচার করা হয়েছে সেসব খবরগুলোকে ভূয়া খবর বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস এর বাঘাইছড়ি উপজেলার নেতা ত্রিদিব চাকমা জানিয়েছেন, আমাদের সাধারণ গ্রামবাসীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুলি করা হয়েছে এবং এতে করে আত্মরক্ষার্থে সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রতিহত করা হয়েছে কিন্তু এতে করে আমাদের কোনো নেতাকর্মী হতাহত হয়নি।

বাঘাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, আমরা গুলি বিনিময়ের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু হতাহতের কোনো সত্যতা পাইনি। তিনি জানান, কে বা কাহারা নিহতের খবর ছড়িয়েছে সেটি আমি জানি না।

এদিকে, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি সেনারিজিয়নের দায়িত্বশীল দুইজন উর্দ্বতন কর্মকর্তা ও রাঙামাটি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর কাছে জানতে চাইলে তারা কেউই হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন।
 
নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বর্তন একজন সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খবর পাওয়ার পর বাঘাইছড়ির ঘটনাস্থলে আমাদের লোকজন গিয়ে নূন্যতম কোনো আলামত পায়নি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত ২৪ তারিখে কোনো প্রকার নির্দিষ্ট্য তথ্য-প্রমান ছাড়াই শুধুমাত্র ফেসবুকের ষ্ট্যাটাস দেখেই একটি মিডিয়ায় রাঙামাটির লংগদুর ছোট কাট্টলীতে ৬ জন মারা গেছে এমন খবর প্রচার করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরো কয়েটিতে সেটি প্রচার করা হয়।
 
এরপর আজ (শুক্রবার) আবারো অপর আরো একটি টিভি চ্যানেলে তিনজন নিহতের খবর প্রচার করা হলো। এই ধরনের অসত্য তথ্য প্রচার করে কার বা কোন সংগঠনের পারপার্স সার্ভ করা হলো? এমন প্রশ্ন করে উক্ত কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের অসত্য তথ্য প্রচার করার মানেই হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্থিত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এটা আমাদের কারো জন্যই মঙ্গলজনক কিছু বয়ে আনবে না।