এডিপির কাজ যথাসময়ে না করায় ফেরত গেল ২৮ লাখ টাকা


নুরুল কবির    |    ০১:২০ এএম, ২০২২-০৭-০৯

এডিপির কাজ যথাসময়ে না করায় ফেরত গেল ২৮ লাখ টাকা

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় এলজিইডি, ঠিকাদার এবং উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও যথাসময়ে কাজ না করায় প্রায় ২৮ লাখ টাকা ফেরত গেছে। এছাড়া দুটি এখনো প্রকল্প শুরুই করা যায়নি। তবে প্রকৌশলীর যোগসাজসে তিনটি প্রকল্পে প্রায় ৪৮ লাখ টাকার কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে তিন পক্ষীয় টানাটানিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় পিছিয়ে থাকা আলীকদম উপজেলা আরও পিছিয়ে পড়েছে বলে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আলীকম উপজেলায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি), পিডিপি-৪ এবং পিআইসি প্রকল্পের আওতায় তিনটি অংশে ( গ্রুপ) ৫১টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট  ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় । স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আলীকদম উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।

সূত্রমতে, এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রিংওয়েল স্থাপন, ব্রিক সলিন রাস্তা, গাইড ওয়াল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামগ্রী বিতরণ ইত্যাদি। তিনটি উপভাগে ৫১টি প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দ ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা। এরমধ্যে প্রথম উপভাগে ২৪টি প্রকল্পের জন্য ৫৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪০০ টাকা, দ্বিতীয় উপভাগে ৮টি প্রকল্পের জন্য ৩১ লাখ টাকা এবং তৃতীয় উপভাগে ১৯টি প্রকল্পে ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

এসব প্রকল্প বিগত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের হওয়ায় গত ২৮ জুনের মধ্েয এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে প্রকল্প গ্রহণ নিয়ে এলজিইডি, উপজেলা প্রশাসন (ইউএনও) এবং উপজেলা পরিষদ (চেয়ারম্যান) এ তিন পক্ষের মধ্েয সমন্বয় না হওয়ায় যথাসময়ে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি।

তবে অর্থ বছরের শেষ মাসে (জুন) এসে তড়িঘড়ি কাজ সম্পন্ন করতে তৎপরতা শুরু করে এলজিইডি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা বলেন, মাত্র ১৪ দিনের মধ্েয কাজ সম্পন্ন করার সময় বেঁধে দেয় এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী। কিন্তু অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো ১৪ দিনে শেষ করা সম্ভব নয়।

অভিযোগ ওঠে এলজিইডি কাজ না করেই "কাজ সম্পন্ন " দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে ঠিকাদার ও প্রকৌশলী ভাগাভাগির জন্যই এমন কৌশল নেয়া হয়। যারফলে ২৮ জুনের মধ্েয দুটি কাজ শুরুই করা যায়নি বলে স্বয়ং উপজেলা প্রকৌশলী স্বীকার করেছেন। এছাড়াও অনেক কাজই ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সম্পন্ন করা হয়েছে।

এ জন্য অবশিষ্ট কাজ না হওয়ায় মোট ২৮ লাখ টাকা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেয়া হয়েছে বলে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ স্বীকার করেছেন। তবে সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ মে টেন্ডার আহ্বান করে মাত্র ১৪ দিনের মধ্েয কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারদের বলা হয়।

কাজ বিলম্ব ও টাকা ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ বলেন, প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বানে বিলম্ব ও বর্ষা মৌসুম দায়ী! তবে ঠিকাদার, জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, উপজেলা প্রকৌশলী ২৮ লাখ টাকা ফেরত গেছে স্বীকার করলেও  কয়েকটি প্রকল্পে ১ কোটি প্রায় ছয় লাখ টাকার কাজই হয়নি।

এই বিপুল অর্থ এলজিইডি ও প্রকৌশলীর পছন্দের ঠিকাদার "কাজ সম্পন্ন " দেখিয়ে নিজেরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এসব বিষয় উল্লেখ করে কুরুকপাতা ইউনিয়নের রূপন তঞ্চঙ্গ্যা, গরামনি এবং য়ুইকক ম্রো এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ মতে, তিনটি প্রকল্পে প্রায় ৪৮ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই এলজিইডি-ঠিকাদার হাতিয়ে নেন।

জানা গেছে, পিডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নের রাইতুমনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার কাজের জন্য ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শুরু করতে না পারলেও ঠিকাদার জুলফিকার আলী ভুট্টো এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর আস্থাভাজন হওয়ায় ঠিকাদার কাজ শুরু না করেই ৩০ শতাংশ বরাদ্দ ১৬ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

ঠিকাদার ভুট্টো ১৬ লাখ টাকা উত্তোলনের কথা নিজেই স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তিনি প্রকল্পের জন্য কিছু এঙ্গেল কিনেছেন। বৃষ্টির জন্য কাজ শুরু করেন নি। মেয়াদ শেষ হলেও একশতাংশ কাজ না করেই কিভাবে বিল তুললেন? এ প্রশ্নে তিনি কোনো জবাব দেননি। কাজ না করেই বিল নেয়ার বিষয়টি এখন জেলাজুড়ে আলোচ্য বিষয়। 

আব্দুল হামিদ বলেন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রকল্পের ঠিকাদার ছিলেন তিনি। সিডিউল অনুযায়ী যাবতীয় মালামাল নিয়ে আসলে প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ জানান, ‘এখানে আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার নেই, সুতরাং এসব আমি বুঝে নিতে পারবো না! এমন অভিযোগ ঠিকাদার আব্দুল হামিদের। ।