“সোয়া কোটি টাকার কাজে বছর না যেতেই ধ্বস”


আলমগীর মানিক    |    ০৬:৫৯ পিএম, ২০২০-১২-১৩

“সোয়া কোটি টাকার কাজে বছর না যেতেই ধ্বস”

ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে সড়ক মেরামতের নামে কোটি টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। রাঙামাটির ঘাগড়া/চন্দ্রঘোনা/বান্দরবান সড়কে গেল বর্ষা মৌসুমের আগে জরুরী সড়ক মেরামতের নামে সোয়া কোটি টাকার মেইনটেনেজ কাজ করা হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই পুরো টাকাগুলো জলে যাওয়ার অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

এই সড়কের অন্তত ৪টি স্পটে সড়ক ধ্বসরোধে অস্থায়ী ধারক দেওয়াল নির্মাণের এই কাজে লোহার পাইপ ব্যবহার করা হলেও সনাতন পদ্ধতির গাছ দ্বারা বল্লি প্যালা সাইডিংয়ের চেয়েও এই কাজ নিন্মমানের হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর মতে জরুরী মেরামতের নামে এই কোটি টাকার পুরোটাই পকেটস্থ করেছে সংশ্লিষ্ট্য ঠিকাদার। 

সম্প্রতি সরেজমিনে এই স্পটগুলো পরিদর্শনে জনগণের অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।

এবিষয়ে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেও এই ধরনের অভিযোগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করে জানিয়েছেন, তদন্ত সাপেক্ষে শীঘ্রই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, ২০১৭ সালের ব্যাপকহারে পাহাড় ধ্বসে রাঙামাটির প্রায় সড়কগুলোর মধ্যে ভাঙ্গন দেখা দেয়। সেসময় তাৎক্ষনিক উদ্যোগ নিয়ে সড়কগুলো সচল বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে রাঙামাটির সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ২০১৯-২০২০ অর্থসালে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের উদ্যোগে ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে রাঙামাটির ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বাঙ্গালহালিয়া-বান্দরবান সড়কে কয়েকটি স্থানে এমএস পাইপ প্যালাসাইডিং, বেম্বো প্যালাসাইডিং, আর্থ ফিলিং, সেন্ড ব্যাগ লায়িং কাজের লক্ষ্যে ইজিপি আইডি নং-৪০২৭৯৪, ৪০২৮১০, ৪৩৬৩৭০, ৩৯২৪৫১ এই চারটি কাজের বিপরীতে ২৭০৮৫৫২.৩৯, ৬০১০৫৫৯.৯১, ১১৫৯৭১৬.১৮ ও ৩৭২৯১১৬.৭৩ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় এক কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার প্রদান করা হয় ঢাকার ঠিকানা ব্যবহারকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মি. মোহাম্মদ আমিনুল হক (প্রাঃ) লিমিটেডকে।

এই প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট্য ঠিকাদারের লোকজন গত কয়েকমাস আগে উক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করেছে বলে সরেজমিনে ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা সড়কে গেলে সেখানকার বাসিন্দাগণ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। কাপ্তাইয়ের কুকিমারা, মুরালিপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাগণ জানিয়েছেন, লোহার ৬ইঞ্চি মোটা পাইপগুলো কোনো রকম দাঁড় করিয়ে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ কাজ হয়ে গেছে বলে চলে যায়। বর্ষামৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হওয়ার পরেও লোহার পাইপগুলো ধ্বসে পড়ে পড়ে। এতে করে সড়কের পাশ্ববর্তী নীচু এলাকা বসবাস করা বাসিন্দারা বড় ধরনের মাটি চাপার আশঙ্কায় রয়েছে।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুকিমারা চেকপোষ্টের সামনের সড়কেই নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা ড্রেনসহ সড়কের উপরের অংশে বেশ লম্বা ফাটল ধরেছে। মুরালী পাড়া এলাকায় স্থাপনের কিছুদিনের মধ্যেই হেলে পড়েছে এমএস পাইপ প্যালাসাইডিং।

এই অংশটির নীচে বসবাসকরা দুইটি পরিবার যেকোনো সময় ঘুমের মধ্যেই চাপা পড়ার ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। ঘাগড়া-বড়ই সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে এই ধরনের কাজ করা হলেও একটি বছর এখনো শেষ না হওয়ার আগেই সেগুলো ধ্বসে পড়ছে। স্থানীয়রা বলছেন সরকারি টাকা অপচয় ছাড়া এই কাজগুলো সড়ক রক্ষায় কোনো কাজেই আসেনি। 
কাজের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আমিনুল হক এর মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

এদিকে রাঙামাটির সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই স্থায়ী টেকসইয়ে এই একই সড়কগুলোতে আবারো কয়েক কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে সরকার। সেকাজগুলো পর্যায়ক্রমে শুরু করা হবে। রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন, আমাদের কাছে উক্ত কাজগুলো নিয়ে অভিযোগ এসেছে। তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত ঠিকাদারের জামানত দেওয়া হয়নি। যেসব কাজ ঠিকমতো হয়নি সেগুলো আবার করিয়ে নেওয়া হবে।