রাঙামাটি শহরে করোনার দ্বিতীয় ধাপে মাস্কের দাম বাড়তে শুরু করেছে


মোঃ আবদুল নাঈম মোহন    |    ০১:২২ পিএম, ২০২০-১২-০২

রাঙামাটি শহরে করোনার দ্বিতীয় ধাপে মাস্কের দাম বাড়তে শুরু করেছে

শীত সামনে রেখে দেশ এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রস্তুত সরকার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের নির্দেশেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলাা হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণে দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্ততি ও করণীয় বিষয়ে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আর তাতে করোনা মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ। মাস্ক পরিধান না করলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়। কাজেই সবাই যাতে যথাযথ নিয়মে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও যারা আগে থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষকে বিশেষ  পদক্ষেপ নিতে হবে। বয়স্ক, গর্ভবতী মা ও শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। “নো মাস্ক নো সার্ভিস” সরকারের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে মাস্কসহ সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে শুরু হয়েছে কারসাজি। শীত আসতে না আসতে, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং সরকার মাস্ক ব্যবহার বাধ্যামূলক করায় সামগ্রীটির দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কিছুদিন আগেও সাধারণে মানুষের নাগালের থাকা সার্জিক্যাল মাস্ক ইতিমধ্যে আগের চেয়ে ২-৩ গুণ দামে ক্রয় করতে হচ্ছে মানুষকে। তাছাড়া চলতি বছরের নভেম্বরের দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতঙ্কের মাঝেই বাড়ছে এ মাস্কের দাম। দুই-এক সাপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি মাস্কের দাম ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বক্সপ্রতি দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যতামূলক নির্দেশনায় রয়েছে। রাঙামাটি  শহরের প্রতিদিন সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা ও রাতের বেলায়ও মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন রাঙামাটি জেলা প্রসাশন। অভিযানে জরিমানার পাশাপাশি মাক্সও বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারের অব্যাহত অভিযান ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের কারণে, রাঙামাটি শহরের, যাত্রী, পথচারী ও ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণির মানুষের মাঝে মাস্কের ব্যবহার বাড়ছে।

যারা নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করতেন না কিংবা অনীহাবোধ করতেন তারাও বাধ্য হয়ে মাস্ক ব্যবহার করছেন। আবার শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে করোনা বিস্তারের বিষয়ে দুশ্চিন্তায়ও আছেন অনেকে। কিন্তু হঠাৎ করেই রাঙামাটি শহরে মাস্কের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে জনসাধারণ ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন। তারা বলেন, মাস্কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের সঙ্গে চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন। তারা বলেন, দাম বাড়লে আমরা কি করবো.? বাজারে তো মাস্কের সংকট নেই কিন্তু তারপরও  দাম বাড়ছে। এক সপ্তাহে আগেও মানুষ কম দামে মাস্ক কিনেছে, আমরাও বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন এক বক্স মাস্কের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

তাহলে তো বেশি দামে বিক্রি হবে। যারা আমদানি করতেছে তারাই মাস্কের দাম বাড়ার বিষয়ে ভালো জানে। তবে দাম বাড়লেও শীতের কারণে করোনা বাড়ছে এ আতঙ্কে মানুষ মাস্ক কিনছে। রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দিন আগেও ৫টি মাস্ক ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করেছি, কিন্তু এখন আর পারছি না।

বক্সপ্রতি দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি মাস্ক এখন ১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আসলে দাম বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের দেশের বাজে সংস্কৃতি হয়ে গেছে। এখন শীতের সময় করোনা বাড়ছে বলে শুনছি আবার সরকারও মাক্স ব্যবহার করতে নির্দেশনা দিয়েছে। সেই সুযোগে আমদানি কারক, উৎপাদকরা মাস্ক মজুত করে দাম বাড়াচ্ছে বেশি মুনাফার লোভে।

তাছাড়া তো কোনো কারণ দেখি না। বিক্রেতারা জানান, সার্জিক্যাল মাস্ক ও এন৯৫ মাস্কের সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে। ৫০টি মাস্কের এক বক্স সার্জিক্যাল মাস্ক ২২০-২৫০ টাকা ও এন-৯৫ মাস্কের প্যাকেট ২৬০-৩০০ টাকা পাইকারি দামে বিক্রি করেছি। কথা হয় মাস্ক কিনতে আসা এক ক্রেতার সঙ্গে, তিনি বলেনম দাম বাড়লে আমাদের কী করার আছে.? আমাদের তো মাস্ক পরেই বাইরে বের হতে হয়। এক সপ্তাহ আগেও এক বক্স মাস্ক ১৩০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন তো ২৫০ টাকার নিচে তো কিনতে পারছি না। সার্জিক্যাল এন-৯৫ ও কাপড়ের তৈরিসহ সব ধরনের মাস্কের দাম বেড়েছে। আমার মনে হয়, এভাবে সাধারণ মানুষকে জিম্মি না করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে মাস্ক সরবরাহ নিশ্চিত করা উচিত। করোনার মাঝে মানুষের আয় নেই, আবার মাস্কও পরতে হচ্ছে। তাহলে এই মানুষ গুলো কি ভাবে কয়েক দিন পর পর বেশি দাম দিয়ে মাস্ক কিনবে.? এসব তো কষ্টের.!

রাস্তার মধ্যে হকারের কাছ থেকে মাস্ক ক্রয় করছিলেন মোঃ পারভেজ খান। জানতে চাইলে দামের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনই বাইরে বের হতে হয়, দাম বাড়লেও কিনতে হবে, আবার কমলেও কিনতে হবে। আমাদের তো আর কোন সুযোগ নাই। এ বিষয়ে মাস্ক পাইকারী বিক্রেতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, “ মাস্কের দাম তো আগেও বেশি ছিল, মাঝে একটু কমে, এখন আবার আমদানি বন্ধ থাকায় পর্যপ্ত জোগান নেই। আগের মাস্ক নিয়েই ব্যবসা করতে হচ্ছে। কারণ আগে আমদানিকৃত যে মাস্ক রয়েছে তার ৩০ শতাংশও বিক্রি হয়নি। এখন মাস্কের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় হয়তো দাম কিছুটা বেড়েছে”। আমাদের দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই বাড়ছে সংক্রমণের হার। উদ্বেগের বিষয় হল, দেশে আগষ্টে যখন সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে তখন থেকেই মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে উদাসীনতা বেড়েছে। মাস্ক পরিধানসহ বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন পরামর্শও তারা অমান্য করছে। এভাবে চলতে থাকলে অতি দ্রুত সংক্রামণের হার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যেতে পারে।