স্ট্যান্ড রিলিজে ধামাচাপা উপজাতি নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির মামলা

চালিয়ে যাচ্ছেন দু’স্থায়ী ঠিকানায় স্বাস্থ্যের দু’চাকরি

নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০২:৪৯ পিএম, ২০২০-০৯-০৬

স্ট্যান্ড রিলিজে ধামাচাপা উপজাতি নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির মামলা

স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি নেন কক্সবাজারের উখিয়া হলিদিয়া পালংয়ের বাসিন্দা সুজন বড়ুয়া। এরপর একের-পর এক রহস্যজনক পদোন্নতি। সর্বশেষ চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক। এদিকে সুজন বড়ুয়া'র বিরুদ্ধে বান্দরবানে উপজাতি এক নারী স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছে বান্দরবানের সিভিল সার্জনের গঠিত তদন্ত কমিটি। কিন্তু সুজন,র অলৌকিক স্ট্যান্ড রিলিজে ধামাচাপা পড়েছে এই যৌন হয়রানির মামলা।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের নিয়োগ পূর্ব-শর্তঃ
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের “নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’র” ৮নম্বর শর্ত “স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চাকরি’র জন্য আবেদন করতে হবে। এছাড়া যোগদানের আগে নিতে হবে আগের চাকরি অব্যহতি। কোনটিই মানেননি সুজন বড়ুয়া। জেলা পরিষদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তিন পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা ব্যতীত বাহিরের প্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগই নেই।  
রাঙামাটি থেকে বান্দরবানে আশ্রয়ঃ
রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে যোগদানের পর “সুজন’র স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি, তথ্য গোপন, দু’চাকরি’র বিস্তারিত তুলে ধরে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে জানায় রাঙামাটির স্থানীয়রা। এর পরই স্ট্যান্ড রিলিজে পাড়ি দেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে। সেখান থেকে নিজ-বেতনে বান্দরবান জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে ‘পদায়ন’। 
যৌন হয়রানিতে বরখাস্ত ও বিভাগী মামলাঃ
বান্দরবান জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর হওয়ার পর সহকর্মীকে (উপজাতি নারী স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় বরখাস্তের পাশাপাশি বিভাগীয় মামলা হয় সুজন’র বিরুদ্ধে। ওই সময় জেলার সিভিল সার্জন থানচি উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। যৌন নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ার কিছুদিন পরই ‘অলৌকিকভাবে’ বান্দরবান থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ নিয়ে ফেনী পাড়ি দেন সুজন। 
ডিএইচএস পদোন্নতিতে নেই সুজনঃ 
দীর্ঘদিন পদোন্নতি বন্ধ থাকা জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর (ডিএসআই) থেকে ১৫জনকে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক (ডিএইচএস) পদে পদোন্নতি দিয়ে গত ২১ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যদিও ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অধিদপ্তর বাছাইকৃত প্রার্থীদের ২২জনের তালিকা পাঠায়। সেই তালিকার ২২ নম্বরে থাকা সুজন বড়ুয়া’সহ বাদ পড়েন ৭জন। তবে সুজন দু’বছর ধরে ওই পদের সুযোগ সুবিধা ভোগের পাশাপাশি হয়েছেন ড্রয়িং ডিস্বার্সিং অফিসার। 
পদায়নের ছলে যেসব পদোন্নতি এবং নিয়োগঃ  
সুজন বড়ুয়া’র ২০০৪ সালে স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকরি জীবন শুরু। তথ্য গোপন ও স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করে ২০১২ সালের শুরুতে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ। জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক পদে পদায়ন এবং সর্বশেষ নিজ বেতনে এখন বিভাগীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক। 
অভিযোগ প্রসঙ্গে সুজনের বক্তব্যঃ 
উঠে আসা এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ‘সুজন বড়ুয়া’ বলেন, সবকিছুই ষড়যন্ত্র। কর্মদক্ষতায় পদোন্নতি পেয়েছি। দু’ঠিকানা প্রসঙ্গে বলেন, “পূর্বে উখিয়ার বাসিন্দা ছিলাম ঠিক নাইক্ষ্যংছড়িতে জমি কিনে ২০১১ সালে সেখানকার বাসিন্দা হয়েছি। সুজনের দাবী, বান্দরবানের অতীত সিভিল র্সাজন এসব নিজে তদন্ত করে সুজনকে নিষ্পাপ সনদ দিয়েছেন। 
পাহাড়ের বাসিন্দা প্রসঙ্গে আইনজীবীর বক্তব্যঃ
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট জয়নাল আবদীন সম্রাট বলেন, “পার্বত্য বিধি অনুযায়ি সমতলের অ-উপজাতিরা সেখানকার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পূর্ব অনুমতি ব্যতিত ভূমি ক্রয়, লিজ, নামজারি কোনটিই করার সুযোগ নেই। গোপনে কেউ যদি করেন তা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ।