সামরিক শক্তিবৃদ্ধির মিশনে ইউপিডিএফ;মিজোরামে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৬কর্মী আটক! 


আলমগীর মানিক    |    ১২:৪৯ পিএম, ২০২৫-০১-২২

সামরিক শক্তিবৃদ্ধির মিশনে ইউপিডিএফ;মিজোরামে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৬কর্মী আটক! 

আলমগীর মানিক

পাহাড়কে অস্থিতিশীল করতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে ভারী অস্ত্রসহ গোলাবারুদ সংগ্রহ করছে পাহাড়ের উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। সম্প্রতি ভারতের মিজোরাম রাজ্যে অস্ত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ পার্বত্য চুক্তি বিরোধী উপজাতীয়দের সংগঠন ইউপিডিএফ এর ৫ সন্ত্রাসী সেখানকার শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকের পরপরই মূলত: অস্ত্র সংগ্রহের বিষয়টি সামনে আসে। এই ঘটনার পরপরই নিজেদেরকে রক্ষায় আটককৃতদেরকে নিজেদের কর্মী নয় মর্মে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্ঠা চালায় ইউপিডিএফ।

এবার ইউপিডিএফ এর অন্যতম প্রধান কোম্পানী কমান্ডার ও অস্ত্র সংগ্রাহক সমাজ প্রিয় চাকমা ভারতের মিজোরামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছে। এই ঘটনায় ইউপিডিএফ ভারত থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে এবং এই সংগঠনটির শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বর্তমানে সীমান্ত হয়ে অস্ত্র সংগ্রহের মিশনের নেমেছে বলে প্রমান মিলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। 

মঙ্গলবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মিজোরামের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আমতলীর মিলনচক্র আদর্শ পল্লী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সমাজ প্রিয় চাকমা নামের এক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আমতলী সাব-ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত এসডিপিও দেবপ্রসাদ রায়। তিনি জানান, আমরা গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরে তাকে গ্রেফতার করেছি।

এসময় তার কাছ থেকে একটি একটি নাইন এমএম পিস্তল, তিন রাউন্ড তাজা গুলিসহ বাংলাদেশী ২৫ হাজার এবং ভারতীয় ২লাখ ২১ হাজার রুপী পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন এসডিপিও দেবপ্রসাদ রায়। গ্রেফতারকৃত সমাজ প্রিয় চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায়। সে গত ৫ মাস আগে ভারতে গিয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার শৃঙ্খলাবাহিনী। 

এরআগে মিজোরামের মামিত জেলার পশ্চিম ফাইলেং থানার সাইথাহ গ্রামের কাছের ওই এলাকায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যৌথ অভিযান চালিয়েছে রাজ্য পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়াও সেখান থেকে ছয়টি একে-৪৭ রাইফেল, ১০ হাজার ৫০টি কার্তুজ ও ১৩টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে। ভারতীয় পুলিশ সেখানকার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, মিজোরামে অন্যতম বৃহৎ অস্ত্রের চালান জব্দের ঘটনা এটি।

আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদসহ তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, জব্দ করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সক্রিয় সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফপি মূল দল) এর জন্য এই অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলো। 

সীমান্তের একটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাষ্ট্রের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অগোছালো পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ের চাঁধার হার ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে রূপান্তর করে সে টাকা দিয়ে নিজেদের সামরিক ভান্ডারকে সম্মৃদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

ইতিমধ্যেই বিগত পতিত সরকারের ক্ষমতা হারানোর সাথে সাথেই ইউপিডিএফ এর অন্তত ২০ জন সক্রিয় কমান্ডার ভারতের মিজোরামসহ ত্রিপুরায় গিয়েছে।

মূলতঃ পাহাড়ে সশস্ত্র তৎপরতায় লিপ্ত কেএনএফ’এর সাথে সামরিক চুক্তি করে মিজোরামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে যৌথভাবে অস্ত্র ক্রয়ের লক্ষ্যেই ইউপিডিএফ মিজোরামে তাদের সামরিক টিমকে প্রেরণ করেছে।কয়েকটি ভাগে এই টিমের সদস্যরা মিজোরাম,আগরতলাসহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে ভারতীয় সেজে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। 

মূলত: ভারতীয় বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে পৃথকভাবে অস্ত্রগুলো সহজে সীমান্ত পার করে দেয়ার লক্ষ্যেই সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বাসা ভাড়ায় থাকছে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। 

সম্প্রতি আদিবাসী আন্দোলনসহ পাহাড়িদের নানান দাবি নিয়ে রাজধানীসহ পাহাড়ে আন্দোলন কর্মসূচী চালানোর মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে সেদিকে ব্যস্ত রেখে ইউপিডিএফর সামরিক শাখাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই ভারতে বিশেষ টিম পাটিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করছে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী এই সংগঠনটি।

ইউপিডিএফ এর সামরিক শাখার তিনটি কোম্পানি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, জাগুয়ার কোম্পানি (খাগড়াছড়ি), ড্রাগন কোম্পানি (রাঙামাটি) ও ঈগল কোম্পানি (বাঘাইছড়ি)। এদের কাছে রকেট লাঞ্চার, ১৪-এমএম, এম-১৬, এসকে-৩২, সেনেভা-৮১, এম-৪ ও এম-১-এর মতো ভয়াবহ অস্ত্রসহ প্রায় এক হাজার অত্যাধুনিক ও ভারী আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।