মহালছড়ির সেই কিশোরীকে নিয়ে বৈঠকের আগে ও পরে যা ঘটেছিল


আল মামুন    |    ০২:০৪ পিএম, ২০২০-০৯-০৫

মহালছড়ির সেই কিশোরীকে নিয়ে বৈঠকের আগে ও পরে যা ঘটেছিল

মহালছড়িতে এক উপজাতীয় কিশোরীকে নিয়ে নানা ধরনের তথ্য ও আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মিডিয়াসহ মহালছড়ি উপজেলা। ফলে ঝড় উঠেছে আলোচনা-সমালোচনার।  

মুলত মহালছড়িতে সেদিন কিশোরীকে নিয়ে কি ঘটেছিল বৈঠকের আগে ও পরে। “সেই উপজাতীয় কিশোরীর সাথে বাঙ্গালী যুবকের পরিচয় হয় ঘটনার বিগত ৩ মাস আগে থেকে। সম্পর্ক গড়িয়েছিল প্রেমের। মেয়েটিকে কথা বলতে একটি ফোন ও সিম কিনে দেয় ছেলেটি। ঐ দিন মেয়েটি ফোন করে ছেলেটিকে সাথে দেখা করতে বলে। ছেলেটিও রাজি হয়। 

সেদিন ছিল সোমবার। মেয়েটির বাড়ী মাইসছড়ির পাইন্দংপাড়ার ভেতরে। মহালছড়ি তার বোনের শ্বশুরবাড়ীতে থেকে গার্লস স্কুলে পড়া-লেখার সুবাদে সে থাকে মহালছড়িতে। মেয়ের দেওয়া তথ্য ও বিচারককের দেওয়া তথ্যে ঘটনার সূত্রপাত রাত তখন রাত ১১ টা থেকে সাড়ে এগারটার দিকে ছেলের সাথে মেয়েটি নির্জন একটি জায়গায় দেখা করে আসার পথে পার্শ্ববর্তী একটি মন্দিরের কয়েকটি কুকুর মেয়েটিকে তাড়া করলে সে পড়ে গিয়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরে কুকুরের ভয়ে পালিয়ে স্থানীয় এক শিক্ষকের বাসায় আশ্রয় নেয়।

সেখানে টিলাপাড়া এলাকাবাসী মেয়েটিকে আটক করে। পরে জানাজানি হলে থলিপাড়ার মারমা যুবকরা তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌছায়। এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তুমি কিভাবে আসলে? উত্তরে সে নিজেই এখানে এসেছে প্রেমিক আলামিনের সাথে দেখা করতে বলে স্বীকার করলে থলিপাড়া মারমা যুবকগণ মেয়েটিকে উক্ত স্থান থেকে নিয়ে যায়। 

পরে টিলাপাড়া লোকজন তাকে আটকের পর স্থানীয় গণ্যমান্য শ্রেণীর ব্যাক্তিরা উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাকে। মোবাইলে বিষয়টি মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীলের কাছে জানান রাতেই।  

তিনি খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক কল দেন মহালছড়ি থানার ওসিকে। পরে একজন এসআই নুরুল ইসলাম গিয়ে খোঁজ খবর নেয় অভিযোগ করতে বলেন। কিন্তু মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়েকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করে বাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান এবং কোন অভিযোগ নেই বলে জানান। পরে স্থানীয়রা এই বিষয় বৈঠকের মাধ্যমে শেষ করবে বলে জানানো হয়। 

এক পর্যায়ে তা স্থানীয় উপজাতীয় নেতারা থলিপাড়া ক্লাবে বসে বিস্তারিত শুনে ঐ কিশোরীর অভিভাবককে আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য কথা বললে মেয়ের পরিবার তাকে বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এছাড়াও ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকারও করে মেয়ে। সে সাথে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করে।  

কুকুরের ভয়ে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে মেয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় ও সে মেয়ে মহালছড়ি থলিপাড়া এলাকায় থাকলে আবারো ছেলে-মেয়ের মধ্যে দেখা হবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরায় ঘটনার আশঙ্কায় তাকে মেয়ের নিজ বাড়ীর এলাকায় স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে বৈঠকে পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে মহালছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল মানবিক দিক বিবেচনা করে নিজের পকেট থেকে চিকিৎসা ও স্কুলের পোশাকের জন্য ১০ হাজার টাকা প্রদান করে। এছাড়াও স্থানীয়দের দাবী মেয়েটির এ ধরনের ঘটনার আরো প্রমাণ রয়েছে। 

মাইসছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সাজাই মারমা বলেন, মেয়ের সাথে ধর্ষণের যে বিষয় বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে সে ধরনের কিছু হয়নি। স্বার্থন্বেষী মহল বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল বলেন, জনস্বার্থে সব সময় কাজ করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমাকে জড়িয়ে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে তা মেনে নেওয়ার মত নয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একটি পক্ষ বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে জল ঘোলা করার অভিযোগ তুলে তিনি জড়িতদের খুঁজে বের করে বিচারের দাবী জানান।     

মহালছড়ি থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর বলেন, বিষয়টি চেয়ারম্যান রতন শীল ও লোকের মাধ্যমে শুনে পুলিশ পাঠানোর হয়। সে বিষয়ে মেয়ে পক্ষের কোন অভিযোগ ছিল না। বিচারও চায় না। কারণ বিষয়টি প্রেমের সম্পর্কে। তারপরও পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার আইনি সহায়তা করার কথা পুলিশ জানিয়েছে বলে জানান ওসি। 

এ ঘটনার সকল তথ্য নিশ্চিত করেন বৈঠকে থাকা ২৫২নং থলিপাড়া মৌজার হেডম্যান কালাচান চৌধুরী, মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল, কান্তি মারমা, নেসু মারমা। 

অন্যদিকে সে বিষয়টিকে রং দিয়ে স্বার্থন্বেষী একটি মহল আসন্ন ইউপি নির্বাচনের রাজনৈতিক খেলায় রূপ দেয় বলে অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান রতন শীল। কোন এক ব্যাক্তি ফেইজবুক ম্যাসেঞ্জারে ঘটনাটিকে মনমত রূপ দিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য যুক্ত সকলের বক্তব্য নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তা ছড়িয়ে দেয়। 

ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত লেখাটি। এক পর্যায়ে তা বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ হিসেবে প্রচার করা হয়। এতে বিচারকদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ উপস্থাপিত হয়। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী বিচারকরা দু:খ প্রকাশ করে ঘটনার সাথে জড়িত স্বার্থন্বেষী সেই ব্যাক্তিকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।