''শান্তি চুক্তিতে অশান্তির ধারায় বৈষম্যের শিকার পাহাড়ের বাঙালীরা''


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৯:১৯ পিএম, ২০২৪-১০-০৬

''শান্তি চুক্তিতে অশান্তির ধারায় বৈষম্যের শিকার পাহাড়ের বাঙালীরা''

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অথচ সংবিধানের আলোকে কখনোই পাহাড়ের বাংলাভাষী জনগোষ্ঠির মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারকে সমমর্যাদা ও স্বীকৃতি দেয়া হয় নাই। বৈষম্যমূলক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বা স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ইং। তাতেও পার্বত্যবাসী বাঙালিদের নানাভাবে বঞ্চিত করা হলেও সূধীসমাজ একে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি আখ্যায়িত করে আসছেন।

অন্যদিকে তড়িঘড়ি করে পাহাড়ের বাঙালি প্রতিনিধি কিংবা সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ছাড়াই বরিশালের আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে (চীফ হুইপ) খাগড়াছড়িতে ডেকে এনে সন্তুুলারমার পাশে রেখে ঐ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল।

তাছাড়া, ঐ সময়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার একটি নোবেল প্রাইজ পাবার প্রবল আকাঙ্খা থেকেও নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস কে পরাজিত করতে পাহাড়ের শান্তিচুক্তি সই করানো হয়েছিল বলেও জনমনে ধারনা রয়েছে। পাহাড়ে বসবাসরত উপজাতি ও বাঙ্গালি জনগোষ্ঠির মধ্যে প্রবল বৈষম্য সৃষ্টিকারী অপর বিষয়টি হল ব্রিটিশ হিল ট্যাক্টক ম্যানুয়েল এক্ট ১৯০০ নামক কালাকানুনটি (যা একটি মৃত আইন বলে অভিহিত) ব্রিটিশরা ভারত উপমহাদেশের শাসনকালে ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ নামে একটি পলিস্থি ব্যহার করতো।

১৯০০ সালের শাসনটিতে পাহাড়ের জনগণের মধ্যে তারা হেডম্যান, কার্বারী, সার্কেল চীফ ইত্যাদি পদের সৃষ্টি করেছিল। ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালে ভারতকে দুই ভাগে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান নামে বিভক্ত করে ১৪ আগস্ট পাকিস্তানকে এবং ১৫ আগস্ট ভারতকে স্বাধীনতা প্রদান করলেও ১৯০০ সালের শাসনাবিধি বাতিল করে নাই। পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বাধীনতার পর তিনটি জেলায় ভাগ করা হয়। (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা)। 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ব্রিটিশদের দেয়া ম্যানুয়েল বলবৎ ছিল। মূলতঃ এই বৈষম্যমূলক ১৯০০ সালের শাসনাবিধির অজুহাতে আজো পাহাড়ের উপজাতীক গোষ্ঠির নেতারা নিজেদের (হেডম্যান, কার্বারী, সার্কেল চীফ) হামবড়া, একগুয়োমি মনোভাব দেখিয়ে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড নামে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন। পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় বাঙালি জনগোষ্ঠি বরাবরই উপজাতীয়দের সাথে শান্তিতে বসবাস করতে চান। একই পাহাড়ে, একই ভূমিতে, একই জলবায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করেও বাঙালিরা কখনোই উপজাতি কোটা বাতিলের দাবী তুলে নাই। বরং সরকারীভাবে উপজাতি কোটার সুযোগ শিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসা-বানিজ্য ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে চাকমারা এগিয়ে যাচ্ছে। 

বাঙালিরা বঞ্চিত হয়েও বৈষম্যের সাথে পাহাড়ে বসবাস করে শান্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন। কিন্তু এভাবে আর কতকাল পাহাড়ের বাঙালিরা নিজেদেরকে বঞ্চিত করে চলবেন? সময় এসেছে এখন বৈষম্য দূরীকরনের। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার পতন হয়েছে। বাংলাদেশের আকাশে উদিত হয়েছে আরেকটি স্বাধীনতার লাল সূর্য। শহীদ আবু সাঈদের আত্মদান ও সহ¯্রাধিক ছাত্র-জনতার লালরক্তে বাংলার মাটি সিক্ত হয়েছে। এসেছে নূতন স্বাধীনতা, স্বৈরাচার পালিয়েছে। 

আজ বিশ^ায়নের যুগে মানুষ বাস্তববাদী হয়েছে। কোটা মুক্ত আন্দোলনের মাধ্যমে মেধার বিজয়াকাঙ্খা সফল হয়েছে। জাতি আজ মেধার লালন ও পালনের পক্ষে রায় দিয়েছে। গর্বিত হয়েছে নোবেল জয়ী ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন বিপ্লবী সরকার। 

৫ আগস্ট ২০২৪ যে বিজয় আমরা অর্জন করেছি, তাকে সম্মান দিয়ে এই বিজয়কে ধরে রাখতে হবে। পাহাড়ের উপজাতি ও বাঙালি জনগোষ্টিকে ও এই নবতর বিজয়ের ভাগীদার করতে হবে কোন ষড়যন্ত্রে পা দেয়া যাবেনা। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বসবাসরত উপজাতি ও বাঙালি সবাইকে কোটা আন্দোলনের লক্ষ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আর বৈষম্যমূলক পার্বত্য কালোচুক্তির কালি মুছে আমাদেরকে সাদা চুক্তি মুক্ত করতে হবে।

ব্রিটিশদের দেয়া ১৯০০ সালের শাসনবিধি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ মানতে বাধ্য নয়। আমরা আর ব্রিটিশদের গোলাম নই। পাহাড়ের সকল মানুষ বৈষম্যমুক্ত থাকতে চায়। রাজতন্ত্র নয়, গণতন্ত্র চায়। কোটামুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত। ১৯০০ সালের শাসনাবিধিমুক্ত ও নূতন পার্বত্য চট্টগ্রামই আমাদের সবার কাম্য। আমরা সালাম জানাই জুলাই ৩৬ কে। সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

লেখক:
মনিরুজ্জামান মনির
রাঙামাটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার,

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।

মোবাইল : ০১৭১১৪৫৪৪৭৩।

ই-মেইলঃzaman7472@gmail.com