২৮শে অক্টোবর ও ২০ সেপ্টেম্বরে রাঙামাটির মাঠ চিত্র ও অভ্যাসের পার্থক্য


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৬:৫৯ পিএম, ২০২৪-০৯-২৯

২৮শে অক্টোবর ও ২০ সেপ্টেম্বরে রাঙামাটির মাঠ চিত্র ও অভ্যাসের পার্থক্য

মোঃ কামাল উদ্দিন

 

২৮/৮/২৪ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ এর নেতৃত্বে রাঙ্গামাটিতে একটি বড় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। মূলত বাঙালি জনগোষ্ঠীরাই এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। রাঙ্গামাটি জিমনেশিয়ামে সমাবেশ স্থলে যাওয়ার জন্য লোকজন পৌরসভার সামনে একত্রিত হয়। 

পৌরসভার সামনে জমায়েত স্থলে, আয়োজক এবং নেতৃত্বদানকারীরা বারবার মাইকে ঘোষণা দিতে থাকে, সবাই যেন সুশৃংখলভাবে মিছিল পরিচালনা করে। কোন ধরনের উস্কানিমূলক স্লোগান যেন না দেয়া হয়। আক্রান্ত হলেও যেন পাল্টা আক্রমণ না করা হয়। এ সমাবেশে প্রায় ১৫ হাজার লোকসমাগম হয়।এই সমাবেশে কোন ধরনের উশৃঙ্খলতা কিংবা বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়নি।

এত বিশাল একটি সমাবেশ সুশৃংঙ্খল ভাবে শেষ করার জন্য আয়োজনকারীরা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তারপরেও কিছু অতি উৎসাহী তরুণ, ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠীদের করা গ্রাফীতিতে স্প্রে করে কয়েকটি গ্রাফিতি বিকৃত করে। আয়োজকরা সে তরুণদের কাছে এ ব্যাপারে জবাব চায়। এতে তারা জানান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা গ্রাফিতি অঙ্কন করায়, তারা এগুলো মুছে দিতে চেয়েছিল‌। আয়োজক কমিটি তাদেরকে ভৎসনা করে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না করার জন্য সতর্ক করে। পরবর্তীতে আয়োজকদের facebook পেজ থেকে এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে পোস্ট করা হয়। 
২০/৯/২৪ তারিখ রাঙ্গামাটিতে দীঘিনালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি জিমনেসিয়াম মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলটি  যাত্রা শুরু করার পর থেকেই, মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা মারমুখী এবং উশৃংঙ্খল আচরণ করতে থাকে। এতে সিএনজিতে চলাচলকারী অনেক উপজাতি পুরুষ ও নারী যাত্রীরা বিরক্ত হন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিছিল- কারীরা তাদের সিএনজিতে লাঠি দিয়ে আঘাত  করেছিল। তার পাশাপাশি অন্যান্য যানবাহনেও লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। মিছিলটি বনরুপা পৌঁছানোর পর, আমাদের সম্মুখেই মিছিল থেকে কয়েকজন যুবক সিএনজি স্টেশনের দেওয়ালে করা গ্রাফিতি গুলো মুছতে শুরু করে, ইটের টুকরো দিয়ে বিকৃত করতে শুরু করে। কয়েকজন পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে, ডিজিটাল বিলবোর্ড গুলো ইট ছুঁড়ে ভেঙে দেয় এবং ফরেস্ট অফিসের দিকে ইট ছুঁড়ে মারে। তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। "সেনাবাহিনীর চামড়া তুলে নেব আমরা", "এই মুহূর্তে পাহাড় ছাড়", এই জাতীয় স্লোগান দিতে থাকে। ফলের দোকানগুলো থেকে আঙ্গুর ছিঁড়ে খেতে শুরু করে। আপেল খাওয়া শুরু করে এবং কিছু আপেল তারা মাস্টার সেফ রেস্টুরেন্টের গ্লাসে ছুঁড়ে মারে । ওখানে উপস্থিত বাঙালি এবং উপজাতি লোকজন এটার প্রত্যক্ষ সাক্ষী, এদের কয়েকজনকে চিনি। এরকম মারমুখী উশৃংঙ্খল আচরণ দেখে আমরা সরে যাই। বাসায় আসার পথে দেখি, আশেপাশের আমাদের প্রতিবেশী উপজাতি ভাই বোনেরা চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা এবং আতঙ্ক নিয়ে পাড়ার মুখে মুখে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম বেশিরভাগ স্থানীয় লোকজন এই মিছিলে অংশগ্রহণ করেনি।        বাসায় আসার
কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে দেখতে পাই বনরূপা মসজিদ ভাঙচুর করা হয়েছে, আশেপাশের দোকানগুলো থেকে লুট করা হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে। 


পার্থক্যটা নির্ণয়ের ভার আপনাদের উপর দিলাম। এর কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে জানতে পারলাম "মৈত্রী বিহার" ভাঙচুর করা হয়েছে। কেউ কি এর দায় এড়াতে পারবে, নেতা কিংবা প্রশাসন? 
এ জাতীয় ঘটনা রাঙ্গামাটিতে একেবারেই নতুন। আমি লজ্জিত, আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত।

এরপর শুরু হয়ে যায় অভিযোগ এবং দোষারোপ পর্ব। পরিলক্ষিত হয়, আমাদের বেশিরভাগ উপজাতীয় ভাই-বোনদের ফেসবুক লাইভ এবং পোস্টগুলোতে "উজো-উজো" এবং "আগুন দো-আগুন দো"এইসব শব্দের মাধ্যমে উস্কানি প্রদান করা হচ্ছে।

রাতের বেলা খুন করে সকালে কান্না করে বলা, আমিও বাবা মা হারিয়েছি, আমিও বুঝি স্বজন হারানোর বেদনা। - শেখ হাসিনা মার্কা অভিনয়! Shame on us.
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অপকর্ম করে অন্যের উপর দোষ চাপানোর সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। 

বুঝতে হবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক। ৯০% বাংলাদেশীর কাছে অত্যন্ত সম্মান, ভালোবাসা এবং মর্যাদার স্থান। সেনাবাহিনীকে কেউ অপমান কিংবা অপদস্থ করলে, জনগণ তা মেনে নেবে না। বিপ্লব - ২০২৪ এ "সিঁথি"একজন দুর্দান্ত বিপ্লবী বাঘিনীর নাম। কিন্তু এক সেনা কর্মকর্তার সাথে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের তর্ক করার কারণে নেটিজেনদের  কাছে, চরম সমালোচনা এবং ভৎসনার শিকার হতে হয়। পরবর্তীতে এই বাঘিনী নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। 

বুঝতে হবে, সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক সততা, দেশপ্রেম নিয়ে এ দেশের জনগণের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা, ভারত এবং শেখ হাসিনার প্ররোচনায়, তাদের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য চরম সমালোচিত হয়েছেন। তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মাধ্যমে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু পুরো বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের অন্যায় সমালোচনা দেশবাসী সহ্য করবে না। 


পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। নারীদেরকে দিয়ে সেনাবাহিনীর উপরে হামলা করানো হচ্ছে। সেনাবাহিনী এই চক্রান্তের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছে, তাই ধৈর্য এবং বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। বুঝতে হবে, লিমিট ক্রস করলে এই দেশের জনগণ ছাড় দেবে না। 


জনাব সুপ্রদীপ চাকমা, পার্বত্য উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে, বিভিন্নভাবে চক্রান্ত চলছে। যা উচিত নয়, একেবারেই উচিত নয়। বিভক্তি তৈরি না করে, সৌহার্দ্য এবং মৈত্রীর পথে চলা উচিত।  অন্যথায় এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে পুরো জাতি গোষ্ঠীর উপর। সকলেই জানেন, ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং অস্ত্রের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি সহ জনজীবনে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার জন্য, কারা কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের উচিত প্রতিটি পাড়ায়, পাড়ায় পাহাড়ি- বাঙালি মিলে, সমাজ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকা। যেটা অলরেডি অনেক জায়গায়ই করা হয়েছে। এতে করে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা হবে।

উপরোক্ত তথ্যাবলি লেখকের একান্ত নিজস্ব মতামত