সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অশান্ত পাহাড়ে কমেছে পর্যটকদের আগমন


আলমগীর মানিক    |    ১১:০৯ পিএম, ২০২৪-০৯-২৭

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অশান্ত পাহাড়ে কমেছে পর্যটকদের আগমন

পাহাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপচে পড়ছে। গত একমাসে লাগাতার বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে টইটুম্বুর রাঙামাটি জেলার কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদে এখন পূর্ণ যৌবন বিরাজ করছে। হ্রদের চারদিকে সবুজায়নে বেষ্টিত পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে দুচোখ জুড়িয়ে যায়। জেলার অন্যতম আইকন হিসেবে পরিচিত ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে আছে গত প্রায় দেড় মাস। এই সেতু ঘিরে গড়ে উঠা শতাধিক ভাসমান দোকানিরা এখন বেকার সময় কাটাচ্ছেন। পর্যটক না থাকায় এসব তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদের তীরে বেঁধে রাখা হয়েছে কয়েকশো দেশিয় ইঞ্জিন বোট।

সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ আঞ্চলিক দলগুলোর নানা অপতৎপরতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের অন্যতম পর্যটন জেলা রাঙামাটির পর্যটন খাত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বন্যা, সর্বশেষ সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণে পাহাড়ের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে নিজেদের পুঁজি ভেঙ্গে জীবন রক্ষা করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে এসব অঞ্চলের পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়িরা। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবসেও রাঙামাটিতে আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটেনি।

পাহাড়ে অস্থিতিশীলতার কারণে পার্বত্য চট্রগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। বিভিন্ন সময়ে হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় উত্তপ্ত এসব অঞ্চলে পর্যটক আসা কমেছে জ্যামিতিক হারে।

সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে মামুন (৩০) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ে। পরবর্তীতে এ সংঘাতে পার্বত্য জেলা সমূহের বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালি মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। এতে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে পর্যটন জেলা রাঙামাটিও। এছাড়াও গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। সব মিলিয়ে দেশের পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।


রাঙামাটি পর্যটনের ট্যুরিস্ট বোট চালক মো. আলমগীর বার্তা২৪.কমকে বলেন, এক মাস ধরে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে আছে ঝুলন্ত সেতু। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবং পাহাড়ে সংঘর্ষের কারণে কোনো পর্যটক নেই। ফলে আমরা খুবই কষ্টে আছি। প্রতি বছরই কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গেলে ব্রিজটি ডুবে যায়। পর্যটন কর্তৃপক্ষ যদি ব্রিজটি সংস্কার করে, তাহলে সেটি আর পানিতে তলিয়ে যাবে না।

টেক্সটাইল দোকানিরা জানান, ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যাওয়ায় অনেক পর্যটক এসে ফিরে গেছে। তাদের কোনো পণ্যের বেচা-বিক্রি নেই। প্রতি বছরই সেতুটি ডুবে যায়। ফলে ব্যবসায় লোকসান হয়। যদি সেতু থেকে পানি নেমে যায় তাহলে পর্যটকরা আসতে শুরু করবে, বেচা-কেনা শুরু হবে।

এদিকে, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ঘোষণায় মেঘের বাড়ি খ্যাত সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে তিনদিন পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সময় পার হয়ে গেলেও সেখানে পর্যটকের সমাগম আগের মতো নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে সাজেকে ১২৭টি রিসোর্ট এবং ১১৬টি রেস্টেুরেন্ট রয়েছে। ব্যবসায় লোকসানের কারণে অনেক কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাঙামাটি আবাসিক হোটেল সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঈন উদ্দিন সেলিম জানান, গত দুই-তিন মাসে রাঙামাটিতে তেমন কোনো পর্যটকের আগমন ঘটেনি। আবাসিক হোটেলগুলোতেও বুকিং নেই। কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

রাঙামাটি পর্যটন ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, গত ২৩ আগস্ট থেকে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু পানিতে নিমজ্জিত। এখনো সেতুর পাটাতন পানিতে ডুবে আছে। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যে সেতুর পাটাতনের পানি শুকিয়ে যাবে। আবারও পর্যটকরা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

এদিকে ‘পর্যটন শান্তির সোপান এই প্রতিপাদ্যে’ বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন করেছে রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৭শে সেপ্টেম্বর) সকালে রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় অঞ্চল। পাহাড়ের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য এলাকাকে আধুনিক পর্যটন নগরীতে পরিণত করতে পারলে পর্যটন শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে। তাই সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে পাহাড়ের পর্যটনকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখার আহবান জানানো হয়।