রাঙামাটিবাসীর আস্থার সঙ্কট কাটাতে জেলা প্রশাসনের সম্প্রীতি সমাবেশ


আলমগীর মানিক    |    ০২:১৮ এএম, ২০২৪-০৯-২৩

রাঙামাটিবাসীর আস্থার সঙ্কট কাটাতে জেলা প্রশাসনের সম্প্রীতি সমাবেশ

আলমগীর মানিক 

রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে আকস্মিকভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পর রাঙামাটি জেলাজুড়ে বিরাজমান থমথমে পরিস্থিতি কাটাতে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।

এদিকে জেলাপ্রশাসনসহ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি, জামায়াত, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসায়ি নেতাদের নানামুখি তৎপরতায় রাঙামাটির জনজীবনে স্বস্তি আসতে শুরু করেছে।

শুক্রবার রাঙামাটিতে সংঘঠিত সংঘর্ষের পর হিংসার চিহ্ন মুছে ফেলতে চেষ্টা করছে স্থানীয়রা। তবে অবরোধ, ধর্মঘট ও ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি নানামুখি গুজবের কারণে রাঙামাটি শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেওয়ায় এই উদ্যোগ নিয়েছে জেলাপ্রশাসন।

পরিস্থিতির উন্নয়নে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের তিনজন গুরুত্বপূর্ন উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ শনিবার রাঙামাটি পরিদর্শন করে মতবিনিময় করে যাওয়ার পর রোববার রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সম্প্রীতি সমাবেশ করা হয়।

জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ,সাংবাদিক ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্প্রীতির সমাবেশ করেছে জেলা প্রশাসক মো: মোশাররফ হোসেন খান।

রোববার বিকালে নিজ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেছেন জেলা প্রশাসক মো: মোশারফ হোসেন খান। এতে রাঙামাটি সদর সেনাজোন কমান্ডার মোঃ এরশাদ হোসেন চৌধূরী পিএসপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং, সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা, পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন,  প্রেসক্লাব সভাপতি মো: সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, জেলা বিএনপির সভাপতি দিপন তালুকদার দিপু, জামায়াতের আমীর আব্দুল আলীম বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, বৈষম্য বিরোধী ছা্ত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাঙামাটি প্রেসক্লাব, সাংবাদিকবৃন্দসহ গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগন উক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক ঘটনায় যারা হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, জেলা শহরের পৌর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামরা স্থাপন, সম্প্রীতি রক্ষায় কমিটি গঠন, সম্প্রীতি সমাবেশ, নতুন করে আইন শৃঙ্খলা কমিটি গঠন, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়ে সকলকে অবহিত করা, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, বনরূপা এলাকায় সেনাক্যাম্প স্থাপন হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা রুজু, পাশাপাশি হত্যাকান্ডের শিকার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রদানের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে, চলমান অনির্দিষ্ট্যকালের পরিবহণ ধর্মঘটের কারনে রাঙামাটির জনজীবন অচল হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সম্প্রীতি সমাবেশের পরপরই রাঙামাটির যাত্রী ও পণ্যবাহি সকল যানবাহন মালিক সমিতি ও অটোরিক্সা সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে বসেন ডিসি, এসপি, জোন কমান্ডারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ। সর্বশেষ রাত সাড়ে আটটার সময় বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্তের আলোকে রাঙামাটিতে চলমান অনির্দিষ্ট্যকালের পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এরআগে রোববার দুপুরে পাহাড়ি-বাঙ্গালি সংঘর্ষে হতাহত, অগ্নি সংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনায় কোর কমিটির মাধ্যমে তদন্ত চালানো হবে জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান।

এই কোর কমিটি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো সরেজমিনে পরিদর্শনের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিজন ব্যক্তির সাথে সরাসরি কথা বলে ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়টি পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে এবং সেই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

অপরদিকে রাঙামাটিতে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির নবাগত পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন। এই দুইটি মামলার আলোকেই রাঙামাটিতে সংগঠিত সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, যারাই আইন হাতে তুলে নিয়েছে তাদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। এই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে সকলকেই ভূমিকা রাখার আহবানও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।