৩ দিনের ব্যবধানে রাঙামাটিতে আবারো ভারতীয় সিগারেট আটক; থামছেনা পাচারচক্রের দৌরাত্ম


আলমগীর মানিক    |    ০৩:৩৪ এএম, ২০২৪-০৯-১২

৩ দিনের ব্যবধানে রাঙামাটিতে আবারো ভারতীয় সিগারেট আটক; থামছেনা পাচারচক্রের দৌরাত্ম

আলমগীর মানিক

পার্বত্য রাঙামাটি শহরে শুল্কবিহীন অবৈধ ভারতীয় সিগারেট ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম কমছেই না। প্রতিদিনই রাঙামাটি শহরের কোনো না কোনো স্থানে কাপ্তাই হ্রদ হয়ে ভারতীয় সিগারেট এনে নির্দিষ্ট্য এলাকায় মজুদ করছে একটি চোরাচালানি সিন্ডিকেট চক্র। সম্প্রতি এই চক্রের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে নিরাপত্তাবাহিনী। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুধুমাত্র রাঙামাটি শহরেই উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকার ভারতীয় অবৈধ সিগারেট জব্দ করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

রাঙামাটি সদর সেনা জোন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১০ই সেপ্টেম্বর) রাতে রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারের শহীদ মিনার এলাকায় সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদের সাথে নিয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন ক্যাপ্টেন মোঃ সাকিফ রহমান। 

এসময় শহীদ মিনার সংলগ্ন কাপ্তাই হ্রদের তীরে রক্ষিত একটি পরিত্যক্ত নৌকা থেকে ১১ হাজার ৯৭০ প্যাকেট অরিস সিলভার এবং ৩৪ হাজার ৮৩০ প্যাকেট ওমেগা সিগারেট আটক করা হয়। যার আনুমানিক বাজরার মূল্য মোট ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। জোন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃত অবৈধ সিগারেট পরবর্তীতে সেক্টর সদর দপ্তর বিজিবি’র প্রতিনিধির নিকট হস্তান্তর করা হয়। রাঙামাটি জোন কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বজায় রাখতে নিরাপত্তাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এদিকে সম্প্রতি রাঙামাটিতে ভারতীয় সিগারেটের অবৈধ ব্যবসার রমরমা অবস্থা। রাঙামাটির জুরাছড়ির ভারত সীমান্ত দিয়ে প্রতি কার্টুন দুই হাজার টাকার বিনিময়ে শুল্ক বিহীন অবৈধ ভারতীয় সিগারেট জুরাছড়ি নিয়ে আসা হয়। রাঙামাটির অন্তত ১৫জন ব্যবসায়ি ভারতীয় মন্ড, মুন, ওমেগা ও অরিস সিলভার সিগারেট এর ব্যবসার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। অনুসন্ধানে জানাগেছে, রাঙামাটির বনরূপার সমতাঘাট, ডিসি বাংলো এলাকা, তবলছড়ি, কর্মচারি কলোনী, ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন এলাকা, রিজার্ভ বাজার, শরীয়তপুর, পুরানবস্তি এলাকায় এসকল অবৈধ সিগারেট মজুদ করে রাখা হয়। বস্তায় ভরে পলিথিন পেছিয়ে এসকল সিগারেট স্থানীয় দেশীয় ইঞ্জিন বোটে করে রাঙামাটিতে আনা হয়।

আনার সময় বোটের উপর তেরপাল টাঙিয়ে দেওয়া হয় যাতে করে মনে হবে এটা মাছের বোট। প্রতিটি বোট ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় নিয়ে সিন্ডিকেট চক্র এসকল সিগারেট নিয়ে আসা হয়। সংশ্লিষ্ট্য একটি সূত্র জানিয়েছে, রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই হ্রদের ওপারে বালুখালীতে এনে মজুদ রাখে জনৈক ...চাকমা চোরাকারবারি। এরপর সেখান থেকে রাঙামাটিতে আনার সময় শহরের সংশ্লিষ্ট্য সকলের চাঁদা পরিশোধ করে তাদের দেওয়া সময়ের মধ্যে রাঙামাটি শহরে আনা হয়।

 এদিকে অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, জুরাছড়ির জনৈক .....উদ্দিন নামের এক চোরাকারবারি ভারতীয় সিগারেট রাঙামাটিতে এনে রিজার্ভ বাজারের জনৈক ডিলারের ষ্টোর রুমে এনে মজুদ রেখে রাতের বেলায় সেগুলোকে বিশেষ কায়দায় প্যাকেটজাত করে অটোরিক্সা ও টেক্সিভ্যানে করে মানিকছড়ি-ঘাগড়া চেকপোষ্ট পার করে গাড়িতে দিয়ে আসা হয়। মাঝে মধ্যে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও পাঠানো হয়।

সংশ্লিষ্ট্যদের সাথে ক্রেতা সেজে আলাপকালে তারা জানায়, চট্টগ্রামের ৫ জনের সিন্ডিকেট চক্র এই সিগারেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। তাদের কয়েকজনের ছবিও হাতে এসেছে প্রতিবেদকের নিকট। সিগারেট ব্যবসার সাথে জড়িত অন্তত তিন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানায়, ভাই আমরা এক কোটি টাকার সিগারেট প্রায় আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করি। কিন্তু স্থানীয় কয়েকটি চক্রকে বিপুল পরিমাণ চাঁদা পরিশোধ করতে হয় আমাদের।

 বিগত ৫ তারিখের ক্ষমতা বদলের পর আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতি চালানে গ্রুপ প্রতি অন্তত  ৬ থেকে ১০- লাখ টাকা, এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। এতে করে সবমিলিয়ে অর্ধকোটি টাকা লাভ হয়। অনেক সময় পুরো মালগুলো মেরে দিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়ে পুরো টাকাটাই নিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। 

এদিকে, মঙ্গলবার রাতে রাঙামাটি শহরের শহীদ মিনারের লাগোয়া কাপ্তাই হ্রদ থেকে উদ্ধারকৃত সাড়ে ৯৩ লাখ টাকার সিগারেটগুলো তরুন, সৌমেন, সোহাগ ও প্রকৃতি চাকমা নামের চারজনের বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট্য সূত্র। 

জানাগেছে, সম্প্রতি এই অবৈধ সিগারেটের ব্যবসায় অন্তত ১০ কোটি টাকা অর্থ বিনিয়োগ করেছে উপজাতীয়দের বৃহৎ একটি আঞ্চলিক দলের কয়েকজন কালেক্টর। চট্টগ্রামের জনৈক ব্যক্তি.....হাসান। এই ব্যক্তি রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, টেকনাফ, ফেনী, কুমিল্লা ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে সংশ্লিষ্ট্য সকল পক্ষকে ম্যানেজ করে অবৈধ সিগারেটের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছে।

তার মাধ্যমেই বিগত বছরে তৎকালীণ ক্ষমতাসীনদের একটি চক্র শুধুমাত্র রাঙামাটি রুটেই প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা আদায় করতো। ক্ষমতার পালাবদলের পর নতুন পাহাড়াদারদের মাধ্যমে দ্বিগুণ হারে চাঁদা দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছেন সিগারেট ব্যবসা।