মেয়র-চেয়ারম্যান গ্রুপে বিভক্ত রাঙামাটির শ্রমিক নেতারা; রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশঙ্কা!


আলমগীর মানিক    |    ১২:০০ এএম, ২০২৪-০৫-১২

মেয়র-চেয়ারম্যান গ্রুপে বিভক্ত রাঙামাটির শ্রমিক নেতারা; রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশঙ্কা!

আলমগীর মানিক

শ্রমিকদের মাঝে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাঙামাটির পরিবহণ শ্রমিক অঙ্গণ। এই রেষারেষিতে যেকোনো মুহুর্তে শ্রমিকদের মাঝে রক্তক্ষয়ি সংঘাতসহ সাধারণ পরিহরণ সেক্টর অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে খেটে-খাওয়া শ্রমিকরা। গত কয়েকদিনে শ্রমিক নেতাকে মারধর, পরবর্তীতে এক ড্রাইভারের উপর হামলাসহ চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগ, রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় অভিযোগের পাশাপাশি টানা তিনদিনে পরপর তিনবার সংবাদ সম্মেলনে একের বিরুদ্ধে অপরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে পরিবহণ শ্রমিকদের নিয়ে রাঙামাটিতে ধর্মঘট পালনের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় সামনের দিনগুলোতে রাঙামাটিতে ট্রাক শ্রমিকদের মাঝে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

গত ৯ই এপ্রিল রাঙামাটি পৌর ট্রাক টার্মিনালে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করার পরেরদিন ১০ই এপ্রিল রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারসহ সাধারণ শ্রমিকদের জিম্মি করে রাখার অভিযোগ করে রাঙামাটি প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন রাঙামাটি জেলা ট্রাক-মিনি ট্রাক পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এটিএম হাসমত উল্লাহ। এসময় হাসমত উল্লাহ-সিরাজসহ অন্যান্য নেতারা রাঙামাটির পৌর মেয়রের দিকে ইঙ্গিত করে রুহুল আমিনকে মেয়রই মাঠে নামিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। 

এঘটনার পরদিন ১১ই এপ্রিল দুপুরে পাল্টাপাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের হাসমত উল্লাহ, সিরাজদের ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ করে রুহুল আমিন বলেন, আমার প্রতি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান রোমান আমাকে রাউজানে নিয়ে গিয়ে মার খাইয়েছেন। 

এসব ঘটনায় প্রায় প্রকাশ্যেই এখন চাউর হয়েছে রাঙামাটির পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এখন মেয়রপন্থী ও উপজেলা চেয়ারম্যানপন্থী হিসেবেই নিজেদের অর্ন্তোকোন্দল প্রকাশ্যে এনে সংঘাতে জড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে সাধারণ শ্রমিকরা।

শ্রমিকনেতাদের এমন পাল্টাপাল্টি ইন্ধনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেছেন, রাঙামাটির প্রতিটি শ্রমিক সংগঠনের প্রতি আমার আন্তরিকতা ভালোবাসা শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। দলমত নির্বিশেষে আমি সবাইকে সহযোগিতা করি। বিগত ২০১৭ সালের পাহাড় ধস, এরপর কোভিট পরিস্থিতিতে রানীরহাট, রাউজানসহ রাঙামাটির সর্বস্তরের সকল শ্রমিক ভাইদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছি। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমি এখনো পর্যন্ত তাদের পাশে থেকে কাজ করছি। ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কোনো ধরনের অর্ন্তকোন্দলে আমি মোটেও জড়িত নই এবং এটি আগামী পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি কোনোদিন শ্রমিক সংগঠনের কোনো পদেই ছিলামনা। মেয়র বলেন, কেউ যদি কারো ব্যর্থতা ঢাকার জন্য সাধারণ শ্রমিকদের ব্যবহার করে তাদের ভেতরকার কোন্দলে আমাকে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্ঠা করে তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক হবে। 

অপরদিকে শ্রমিক নেতা রুহুল আমিনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটির সদর উপজেলার চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান মহসিন রোমান বলেন, মূলতঃ উপজেলা নির্বাচনে আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে আগামী পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর হতেই রুহুল আমিন গংরা আমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি বলেন, সামনে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে এক জনপ্রতিনিধির ইন্ধনেই এসব করা হচ্ছে। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিবহন সেক্টরে,পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে নানা অরাজকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টিসহ জনমনে বিভ্রান্তি তৈরী করা হচ্ছে।

রোমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে, আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এক জনপ্রতিনিধি ও তার অনুসারীসহ বিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না জানিয়ে তিনি সাধারণ জনগণকে ও শ্রমিকদের সজাগ থাকার আহবানও জানিয়েছেন রোমান। 

এদিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কয়েকদিনে রাঙামাটির শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের হামলা-মামলাসহ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হুমকি প্রদানকে কেন্দ্র যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের পরিস্থিতি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্বর্তন কর্মকর্তাগণ অবহিত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম (পিপিএম-সেবা)। প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রাঙামাটির ট্রাক শ্রমিক নেতাকে মারধর, পরবর্তীতে চালককে মানিকছড়িতে মারধর করার ঘটনায় চট্টগ্রামের আদালতে এবং কোতয়ালী থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। সবকিছুই পুলিশের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি রাখছে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।