রাঙামাটি শহরে ৬ দিন ধরে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ; বিপাকে ভোক্তারা


আলমগীর মানিক    |    ০২:৪৮ এএম, ২০২৪-০৩-১৬

রাঙামাটি শহরে ৬ দিন ধরে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ; বিপাকে ভোক্তারা

আলমগীর মানিক

প্রশাসন কর্তৃক দাম বেধে দেওয়ার প্রতিবাদে গত ৬দিন ধরেই পর্যটন শহর রাঙামাটিতে গরুর মাংস বিক্রি করছেনা স্থানীয় মাংস বিক্রেতারা। একেতো পর্যটন শহর সাথে চলমান রমজানের প্রথম সপ্তাহে এই ধরনের সিদ্ধান্তে চরম বিপাকে পড়েছে স্থানীয় হোটেল-রেস্তোরাগুলোসহ সংশ্লিষ্ট ভোক্তা সাধারণ। 

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চলমান পরিস্থিতিতে সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য রাঙামাটি শহরেও ভোক্তাদের কল্যাণে জেলা প্রশাসন কর্তৃক গত ১১ই মার্চ তারিখ থেকে প্রতিকেজি গরুর মাংস হাড়সহ ৭শ টাকা মূল্যে বিক্রির নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এই নির্দেশনার পর থেকেই মাংস বিক্রেতারা রাঙামাটি শহরের অন্তত ৬টি দোকানে মাংস বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। 

স্থানীয় মাংস বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রাঙামাটিতে দেশীয় তথা পাহাড়ি গরুর মাংসের চাহিদা বেশি। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু সংগ্রহ করতে হয় কসাইদের। এতে করে স্থানীয় উপজাতীয়দের আঞ্চলিকদলগুলোকে প্রতিটি গরুতে এক হাজার টাকা করে দেওয়াসহ স্থানীয় বিভিন্ন মহলকে চাঁদা দিতে হয়। তারউপর স্থানীয় মাইনী বাজারে গরু প্রতি হাসিল রাখা হয় ১৫শ টাকার উপরে।

দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শ্রমিকের মাধ্যমে গরু সংগ্রহ করে সেগুলোকে কাপ্তাই হ্রদ হয়ে বোটে করে রাঙামাটি শহরে নিয়ে আসতে সবমিলিয়ে প্রতিটি গরুর পেছনে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়।

এছাড়াও রাঙামাটিতে গবাধি পশুর পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাবারের প্রচন্ড অভাব থাকায় গরুগুলো মোটাতাজা তেমন একটা হয়না। তারপরও স্থানীয় গরুর মালিকদের কাছ থেকে চওড়া দামে গরুগুলো সংগ্রহ করতে হয় কসাইদের। 

শহরের হোটেল-মোটেল জোন খ্যাত রিজার্ভ বাজারের মাংস বিক্রেতা হারুন সওদাগর জানিয়েছেন, বেশি দামে দেশীয় পাহাড়ি গরু সংগ্রহ করে রাঙামাটিতে এনে শ্রমিকদের বেতনভাতা দিয়ে ৭শ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করলে প্রতি গরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লস দিতে হয়।

তিনি বলেন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন যদি রাঙামাটি থেকে গরু জেলার বাইরে যেতে না দেয়, তাহলে অত্রাঞ্চলে গরুর দাম করে যাবে। এতে করে আমরাও কমদামে গরু সংগ্রহ করে ৭শ টাকা কেজি মূল্যে মাংস বিক্রি করতে পারবো। 

অপরদিকে রাঙামাটির প্রধান বানিজ্যিক এলাকা বনরূপা বাজারের মাংস বিক্রেতা জাফর জানিয়েছেন, মাইনী বাজার থেকে একটি গরু কিনলে ১৫শ টাকা হাসিলসহ আরো অন্যান্য পার্টির চাঁদা, নিজস্ব খরছ, বোট ভাড়াসহ রাঙামাটিতে এনে আমাদের দোকানে বিক্রি করলে দোকান ভাড়া, কর্মচারির বেতনসহ প্রতি কেজি গরুর মাংসের মূল্য ৮শ টাকারও বেশি পড়ে যাচ্ছে। ডিসি স্যার আমাকে ৭শ টাকায় বিক্রি করতে বলেছে তাই লস দিয়ে মাংস বিক্রি করছিনা আমরা। 

তবলছড়ি বাজারের মাংস বিক্রেতা মোঃ জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, রাঙামাটিতে স্থানীয় বড় কোনো খামারি নেই। আমরা পাহাড়িদের কাছ থেকে পাহাড়ি গরু সংগ্রহ করে বিক্রি করছি তাই আমাদের মাংসের মূল্য সর্বনিন্মে ৭৫০ টাকা না রাখলে আমাদের লস হচ্ছে। আমরা জেলা প্রশাসনের নির্দেশিত ৭শ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করতে পারছিনা বলে আপাতত মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছি। 

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রাঙামাটিতে শহরে ৬টি স্থানে গরুর মাংস বিক্রি করা হয়। এতে করে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার ভোক্তা সাধারণ গরুর মাংসের ক্রেতা। রোববার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে গড়ে ১০ থেকে ১২টি গরু জবাই করে রাঙামাটি শহরে বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট্যরা। 

এদিকে পুরো সপ্তাহ জুড়্ইে অন্যতম পর্যটন নগরী রাঙামাটি শহরে এই রমজান মাসের শুরুতে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ থাকলেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি, স্থানীয় বণিক সমিতি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কেউ-ই বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় দৃশ্যমান উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভোক্তা সাধারণ।