পাহাড়ে খুনের রাজনীতির “জনক” সন্তু লারমাকে গ্রেফতারের দাবি ইউপিডিএফ’র


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৯:১০ পিএম, ২০২৪-০২-০৫

পাহাড়ে খুনের রাজনীতির “জনক” সন্তু লারমাকে গ্রেফতারের দাবি ইউপিডিএফ’র

রাঙামাটির সাজেকে জেএসএস (সন্তু) কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্য আশীষ চাকমা ও দীপায়ন চাকমাকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) খাগড়াছড়ির কয়েকটি স্থানে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিক্ষোভ মিছিল থেকে খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে খুনের রাজনীতির জনক সন্তু লারমাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।

রামগড়ে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ

রাঙামাটির সাজেকে জেএসএস (সন্তু) কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্য আশীষ চাকমা ও দীপায়ন চাকমাকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে খাগড়াছড়ির রামগড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, রামগড় উপজেলা শাখা।

আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) সকাল ১১টার সময় রামগড় উপজেলার যৌথ খামার এলাকায় খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে এক সমাবেশে মিলিত হয়।

“পার্বত্য চট্টগ্রামে খুনের রাজনীতির জনক সন্তু লারমাকে গ্রেফতার কর” এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা সভাপতি লিটন চাকমা ও সঞ্চালনা করেন পিসিপির রামগড় উপজেলার সাধারণ সম্পাদক তৈমাং ত্রিপুরা।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন নারী আত্নরক্ষা কমিটির রামগড় উপজেলা সভাপতি গুলোমনি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য নয়ন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার জার্মেন্ট ত্রিপুরা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলার শাখার সহ-সভাপতি রাজু ত্রিপুরা।

সমাবেশে নারী নেত্রী গুলোমনি চাকমা বলেন, রাঙামাটির সাজেকের মাচলঙে গতকাল সন্তু লারমার জেএসএস সন্ত্রাসী কর্তৃক আমাদের দুই সহযোদ্ধাকে হত্যার প্রতিবাদে আজকে আমরা এই বিক্ষোভ সমাবেশ করছি।

তিনি সন্তু লারমার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলে আসছেন, কিন্তু এখনো জনগণকে চুক্তির কোন সুফল দিতে পারেননি। আপনি যদি তা-ই করতে না পারেন তাহলে সরে দাঁড়িয়ে ইউপিডিএফকে আন্দোলন করতে দিন।

তিনি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করতে সন্তু লারমার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজকের এই সমাবেশ থেকে আমরা আপনাকে বলতে চাই, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা আর ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত চাই না। এই সবুজ পাহাড়ে আমরা আর রক্তপাত চাই না। আপনি যদি এই সংঘাত বন্ধ না করেন তাহলে জনগণ আপনার বিচার করতে বাধ্য হবে।

তিন পার্বত্য জেলা শুধু সন্তু লারমার নয়, এটি জুম্ম জনগণের বলে মন্তব্য করেন নারী নেত্রী গুলোমনি চাকমা।

তিনি জনগণের সুখ-দুঃখের কথা চিন্তা করার জন্য সন্তু লারমার প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে বক্তারা সাজেকে ইউপিডিএফ সদস্য আশীষ চাকমা ও দীপায়ন চাকমার হত্যাকারী জেএসএস(সন্তু) সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক বিচারের দাবি জানান।

 

মাটিরাঙ্গায় পিসিপি-যুব ফোরামের বিক্ষোভ

“পার্বত্য চট্টগ্রামে খুনের রাজনীতির জনক সন্তু লারমাকে গ্রেফতার কর” শ্লোগাানে রাঙামাটির সাজেকে রাষ্ট্রীয় জেএসএস (সন্তু) সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডিএফ সংগঠক আশীষ চাকমা ও দীপায়ন চাকমাকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) মাটিরাঙ্গা-গুইমারা উপজেলা শাখা।

আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) সকাল ১১টায় মাটিরাঙ্গা সীমান্ত সড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয় এবং মিছিল শেষে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বৃহত্তর পার্বত্য চট্রগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি অনিমেষ চাকমার সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক রনি ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফের মাটিরাঙ্গা ইউনিটের সদস্য অংপ্র মারমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মাটিরাঙ্গা উপজেলা সভাপতি রিকেন চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গতকাল (৪ জানুয়ারি) রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের মাচলঙে সন্তু লারমার জেএসএস সন্ত্রাসীরা ইউপিডিএফের দুই সদস্য আশীষ চাকমা ও দীপায়ন চাকমাকে দিন দুপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জোরদার করে পার্বত্য চট্টগ্রামে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সন্তু লারমা তার পুরোনো খেলার অংশ হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক নেতা-কর্মী হত্যার পেছনে এই সরকার জড়িত রয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ হলো ইউপিডিএফের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করা। যার কারণে এখন সরকার, সন্তু লারমা, ঠ্যাঙাড়েরা সবাই একজোট হয়ে ইউপিডিএফের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।

সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী ও সন্তু লারমার জেএসএস-কে লেলিয়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের প্রতিনিধিত্বকালী দল ইউপিডিএফের ন্যায়সঙ্গত পুর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন দমন করা যাবে না। এ আন্দোলন চলছে, অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ঠ্যাঙাড়ে ও জেএসএস(সন্তু)-এর জাতি ধ্বংসের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে সাজেকে আশীষ চাকমা ও দীপায়ন চাকমা'র হত্যার ঘটনায় জড়িত জেএসএস (সন্তু) সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির এবং রাষ্ট্রীয় পোষ্য ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবি জানান।

 

মহালছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল

রাঙামাটির সাজেকের মাচালং এলাকায় সন্তু লারমার জেএসএস কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্য আশীষ চাকমা ও দিপায়ন চাকমাকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে মহালছড়িতে ইউপিডিএফের স্থানীয় ইউনিটের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১:৩০টার সময় মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে জনম চাকমার সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক পূরণ চাকমা।

সমাবেশে পূরণ চাকমা সাজেকে দুই ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রেখে কায়েমী স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সন্তু লারমা ও সরকার মিলিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে। সন্তু লারমা সরকারের খপ্পড়ে পড়ে আবারো হত্যালীলায় মেতে উঠেছেন।

তিনি আরো বলেন, নেতা-কর্মী খুন-গুম করে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে চলমান ন্যায়সঙ্গত গণ্‌আন্দোলন দমন করা যাবে না। যতদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না ততদিন এ আন্দোলন চলবে।

সমাবেশ থেকে তিনি অবিলম্বে আশীষ ও দীপায়নের হত্যাকারী সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গতকাল রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার সময় সাজেক ইউনিয়নের মাচলং ব্রিজ পাড়ায় জেএসএস (সন্তু)-এর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ইউপিডিএফ সদস্য আশীষ চাকমা ও দীপায়ন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে।