কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধিতে জলবন্দি ১০ হাজার পরিবার


আলমগীর মানিক    |    ১০:১৪ পিএম, ২০২৩-০৯-২০

কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধিতে জলবন্দি ১০ হাজার পরিবার

আলমগীর মানিক


টানাবৃষ্টিতে ভারতের মিজুরাম সীমান্তবর্তী এলাকার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়ছেই। প্রতিদিনই কাপ্তাই হ্রদের পানিবৃদ্ধি পাচ্ছে হু হু করে। গত এক সপ্তাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধিতে রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই হ্রদ সংলগ্ন নিন্মাঞ্চল এলাকাগুলোসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোর নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অন্তত সাড়ে ১০ হাজার পরিবার জলবন্দি অবস্থায় চরম কষ্টে দিনানিপাত করছে। বেকায়দায় পড়েছে স্কুল মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

গৃহপালিত গরু, ছাগল, হাস মুরগী পালনকারী খামারিরা চরম বিপাকে পড়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটও দেখা দিয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধিও ফলে বাসা-বাড়িতে এক সপ্তাহেরও অধিক সময়ধরে কাপ্তাই হ্রদের পানি স্থিত থাকায় সংশ্লিষ্ট্য বাসিন্দাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
 
কাপ্তাই হ্রদে আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে রাঙামাটি শহরের হ্রদসংলগ্ন এলাকাগুলোসহ বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, জুড়াছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে বিপুল পরিমান ফলসী জমি পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এতে কওে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে বলেও জানাগেছে।

এদিকে, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের এনডিসি ও জেলার ভারপ্রাপ্ত ত্রাণ কর্মকর্তা এনামুল হাসান জানিয়েছেন, রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধিতে আনুমানিক ১০ হাজার ৩৯৫টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাঙামাটি জেলার সদর, বাঘাইছড়ি, লংগদু ও জুরাছড়ির এই চারটি উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নের ১৫৫টি গ্রাম, তিনটি মাধ্যমিক ও ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭৩টি সড়ক, চারটি বাজার আকস্মিক বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোতে ২৫ মেট্রিক টন চাউল নগদ চার লাখ টাকা প্রাথমিকভাবে বরাদ্ধ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত ত্রান কর্মকর্তা এনামুল হাসান।

এদিকে, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানাগেছে কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে পানি রয়েছে ১০৮.৩৮ এমএসএল। হ্রদে পানি ধারনের সক্ষমতা রয়েছে সর্বোচ্চ ১০৯ এমএসএল পর্যন্ত। কিন্তু সেই ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাধ নির্মাণের পর অদ্যবদি পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে কোনো ধরনের ড্রেজিং না হওয়ার ফলে হ্রদের নাব্যতা সংকটে পানির উচ্চতা বিপুল পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে প্রতিবছরই কাপ্তাই হ্রদের পাশের্^াক্ত এলাকায় বসবাসরত ১০ থেকে ১৫ হাজার পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হয়।

এদিকে, বুধবার সারাদিনই কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারনে কাপ্তাই বাধেঁর স্পিলওয়েগুলো বন্ধ রাখায় হু-হু করে কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়েই চলেছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে লাগাতার কয়েক ঘন্টা চেষ্ঠা করেও কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ টি এম আব্দুজ্জাহের এর মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত দুটো মোবাইল নাম্বারে কল দেওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ রিং হলেও তিনি রিসিভ করেনি। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে স্বয়ং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও চরমভাবে বিরক্ত বলে জানিয়েছেন একাধিক উদ্বর্তন কর্মকর্তা।