নিজ গোত্রিয় চক্রের হয়রানী থেকে পরিত্রাণের আকুতি বৌদ্ধ ভিক্ষুর


আলমগীর মানিক    |    ০২:০৬ এএম, ২০২৩-০৫-৩০

নিজ গোত্রিয় চক্রের হয়রানী থেকে পরিত্রাণের আকুতি বৌদ্ধ ভিক্ষুর

॥ আলমগীর মানিক ॥

পাহাড়ে বহুল আলোচিত ১৩ কিশোরীকে মায়ানমারে পাচার মামলার অন্যতম মূল আসামী বৌদ্ধ ভিক্ষু উঃ সিরি ভান্তে আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মামলা থেকে খালাস পেলেও নিজ গোত্রীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রের নানান রকম হয়রানীসহ মামলা-হামলার পাশাপাশি অব্যাহত হুমকি মধ্যে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ২০১৬ সালের ১১ই মার্চ (শুক্রবার) বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে ১৩ মারমা তরুণীকে মিয়ানমারে পাচারের অভিযোগে রাঙামাটির মিতিঙ্গাছড়িস্থ বৌদ্ধ মন্দির থেকে এই উঃ সিরি ভিক্ষুকে আটক করেছিলো পুলিশ। সেসময় বিষয় দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রচারনা পেলেও এই ঘটনায় দায়েরকৃত নারী পাচার মামলা থেকে সম্পূর্ন নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন উঃ সিরি ভান্তে। 

এই সময়ের মধ্যেই সিন্ডিকেট চক্র কর্তৃক এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর নিজস্ব ক্রয়কৃত কয়েকটি জমিও অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে তার শিষ্যসহ স্থানীয় উপজাতীয়দের একটি সিন্ডিকেট চক্র। বৌদ্ধ ভিক্ষু উসিরি জানিয়েছেন, আমি নিজস্ব অর্থায়নে কাপ্তাইয়ের মিতিঙ্গাছড়িতে একটি অনাথালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতাম। সেই সাথে আমি সেখানে নিজের অর্থায়নে কিছু জমি ক্রয় করে ধর্মী উপাসনালয় স্থাপন করে ধর্ম পালণ করতাম। 

মূলতঃ কবিরাজির মাধ্যমে এবং আমার ভক্তকুলের দানে প্রাপ্ত অর্থের মাধ্যমে এসব কর্মকান্ড আমি পরিচালনা করতাম। কিন্তু বিষয়টি সহ্য করতে নাপেরে আমারই একজন শিষ্য ও স্থানীয় লোভী একটি চক্র আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে আমাকে চরমভাবে হেয় করেছে। একের পর মামলা দিয়ে আমাকে দেশ-বিদেশে ব্যাপক হেয়-প্রতিপন্ন করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ব্যাপক অনুসন্ধান করেও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলোর সত্যতা পায়নি। 

এদিকে, বহুল আলোচিত ১৩ কিশোরী পাচারের মামলায় কিভাবে খালাস পেলেন উসিরি ভান্তে সে প্রশ্নে উত্তর খুজতে গিয়ে আদালতের আদেশ সংগ্রহ করে দেখাগেছে উক্ত মামলায় সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষ আদালতে পাচারের পক্ষে কোনো তথ্য-উপাত্ত আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উসিরি ভান্তে নিজের পরিচালিত একটি অনাথালয়ে পাহাড়ের দূর্গম অঞ্চলের দরিদ্র পাহাড়ি ছেলে মেয়েদের এনে পড়াশোনা করাতেন।

২০১৬ সালের ১১ই মার্চ তার প্রতিষ্ঠানের ১৩ কিশোরীকে মায়ানমারের একটি ধর্মী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য লোক মারফত প্রেরণ করেছিলেন। এই ঘটনাটিকে পাচার করার কথা ছড়িয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিলো। এই কর্মটি করেছিলো তারই একজন শিষ্য। উসিরি ভান্তেকে মিতিঙ্গাছড়ি থেকে সরিয়ে দিতে পারলে উক্ত শিষ্য নিজেই তার কবিরাজি পেশা সরগরমে চালিয়ে যাবে এই মনোবাসনায় গুরু উসিরি ভান্তেকে গুরুত্বর নারী পাচারের ঘটনায় জড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার পরদিন হতেই মিতিঙ্গাছড়িতে থাকা উসিরি ভান্তের নিজস্ব জমিসহ ধর্মীয় উপাসনালয়টিও দখল করে নেয় চক্রটি।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, বাবু মারমা, স্বপ্না মারমা, বাগানচাষী অংসাপ্রু মারমা, বামং মারমাসহ একাধিক ব্যক্তিবর্গ জানিয়েছেন, উ: সিরি ভান্তে অত্যন্ত ভালো মানুষ এবং ধর্মপরায়ন একজন্য ব্যক্তি। মূলতঃ ভান্তেকে মিথ্যা অভিযোগে ফাসিয়ে তার জায়গা-জমি ভাগিয়ে নেওয়ার জন্যেই তার বিরুদ্ধে মুখরোচক বিভিন্ন কাহিনী ছড়িয়ে দিয়েছে এলাকার ভূমি দস্যু একটি চক্র। 
অপরদিকে স্থানীয় চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবুল হাশেম জানিয়েছেন, আমি মেম্বার হওয়ার অনেক আগে প্রায় ১০/১২ বছর পূর্বেই উঃ সিরি ভান্তে আমাদের এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তিনি অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ তার বিরুদ্ধে কোনো দিন বাজে কোনো তথ্য আমার কানে আসেনি। 

এদিকে উঃসিরি ভান্তে জানিয়েছেন, আমি কোনো ভাবেই নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছিনা। আমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র করে আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা থেকেও মাননীয় আদালত আমাকে খালাস দিয়েছে, ভিক্ষু সংঘের পক্ষ থেকেও আমার জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দও আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পায়নি।তার পরেও এলাকার স্থানীয় একটি অপচক্র আমাকে নানান রকম হয়রানী করছে।

আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই উৎকন্ঠার মধ্যে আছি। তিনি বলেন, আসলে আমি মানসিকভাবে খুবই টেনশনে রয়েছি। ইতিমধ্যেই আমি রোববার বিকেলে চন্দ্রঘোণা থানায় উপস্থিত হয়ে একজন পুলিশ অফিসারের নিকট মৌখিকভাবে বিষয়টি অবহিত করে এসেছি। একজন ধর্মীয় গুরুর বিরুদ্ধে তারই স্বগোত্রীয় একটি চক্র কতৃক জোরপূর্বক জমি দখল, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা রটিয়ে হয়রানীর ঘটনায় মিতিঙ্গাছড়ি এলাকার মারমা সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।