রাঙামাটি বেতারে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সহকর্মী তরুনীকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ


আলমগীর মানিক    |    ০৭:৫৭ পিএম, ২০২৩-০৫-১৪

রাঙামাটি বেতারে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সহকর্মী তরুনীকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ

আলমগীর মানিক

আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সূদুর ঠাকুরগাঁও থেকে রাঙামাটি এনে আমার সর্বনাশ করে এখন আমাকে বিয়ে না করে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ। আমি প্রাণ বাঁচাতে ইতিমধ্যেই সরকারী জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করেছি এবং কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন আর সইতে পারছি না। হয় আমাকে বিয়ে করতে হবে নাহলে আমি নিজের এই জীবন আর রাখবো না, আত্মহত্যা করে নিজেকে শেষ করে দেওয়া ছাড়া আমার আর কোনো পথ নেই। 

রাঙামাটি বেতারের প্রকৌশলী আবু সাঈদ কর্তৃক ধর্ষণ ও শারিরিক-মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ বিষয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেই প্রতিবেদকের ফোনকলে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নির্যাতিত এক তরুনী। সেই ২০১৭ সাল থেকে এই তরুনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্ক করে আসছিলেন বেতার প্রকৌশলী আবু সাঈদ।

ঠাকুরগাঁও জেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় সম্পর্কে জড়িয়ে এই তরুনীকে উক্ত প্রকৌশলী তার পরবর্তী র্কমস্থল রাঙামাটি বেতারে এনে নিজের কব্জায় রেখে তার অধীনে চাকুরিও দেন। এতে করে আরো ঘনিষ্ট হওয়ার সুযোগ পেয়েই মেয়েটির বাসায় জোর করে প্রবেশ করে সাঈদ তাকে ধর্ষণ করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী। এরপর থেকেই বিয়ের জন্য চাপ দিলে প্রকাশ পায় সাঈদের অন্যরূপ। সাঈদের কাছ থেকে প্রতারিত ও তার সহযোগিদের মাধ্যমে নির্যাতিত হয়ে অবশেষে বেতারের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দাখিল করে ভূক্তভোগী মেয়েটি। 

ভিকটিমের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বেতার সদর দপ্তরের পরিচালক (অনুষ্ঠান) এসএম আবুল হোসেনকে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ বেতার কর্তৃপক্ষ। শনিবার(১৩ মে) রাঙামাটি বেতারে সরেজমিনে এসে বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত কমিটি।

কমিটির অন্যতম সদস্য বেতার ও প্রকাশনা দপ্তরের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মোঃ শরিফুর রহমান এই প্রতিবেদকের কাছে মুঠোফোনে জানিয়েছেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি এবং এই ব্যাপারে শনিবার তদন্ত করে এসেছি এবং এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। তাই আপাতত বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব নয়। 
 
এদিকে, রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুল আমিনও উক্ত ভূক্তভোগির কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। 

বেতার সদর দপ্তরে দেওয়া অভিযোগপত্রে ওই তরুনী উল্লেখ করেন, বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মোঃ আবু সাঈদের সহায়তায় ভুক্তভোগী শিল্পী রাঙামাটি কেন্দ্রে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগের কিছুদিন পর থেকেই প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ তাকে যৌন নিপীড়ন করে আসছে। এসব ঘটনা সহ্য করতে না পেরে ভুক্তভোগী শিল্পী গত বছরের ৮ আগস্ট আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তখন আঞ্চলিক প্রকৌশলী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান এবং ওই শিল্পীর কাছে ঘটনার জন্য ক্ষমা চান। কিন্তু এর কিছুদিন পর থেকেই আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন এবং চাকরি ‘খেয়ে দেওয়ার হুমকি’ দেন।

সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিলে ওই শিল্পীর বাসায় এসে তাকে ধর্ষণ করেন প্রকৌশলী। ওই সময় ভুক্তভোগী শিল্পী চিৎকার করলে প্রকৌশলী পালিয়ে যান। ঘটনার পর ভুক্তভোগী প্রকৌশলীকে তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিলে প্রকৌশলী ‘সব আশা পূর্ণ হবে’ বলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মিথ্যা আশ্বাস দেন। গত ৪ মে প্রকৌশলী জানান যে, সে ওই শিল্পীর জন্য সব করতে পারবে; কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না। এই ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিল্পী কান্নাকাটি ও সুইসাইড করবে বললে প্রকৌশল শাখার রাকিব, হারূন, রিপন ও তাদের স্ত্রীরা তাকে মারধর করে এবং একটি মিথ্যা স্টেটম্যান ও সাদা কাগজে সই নেয়।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রে শুনানিতে ভিকটিম, অভিযুক্ত ও জড়িতদের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি।

ভূক্তভোগী তরুনী প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ‘তদন্ত কমিটি শনিবার আমার সঙ্গে, অভিযুক্ত আঞ্চলিক প্রকৌশলী ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে আলাদা-আলাদাভাবে কথা বলে তারা ঢাকায় চলে গেছেন। এখন বিষয়টি নিয়ে উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেন সে মোতাবেক এগুবো আমি। 

এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে রাঙামাটি কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগটি সম্পূর্ন মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। প্রতিবেদকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করবেন বলে সংযোগ কেটে দেন।