কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক পানি হ্রাসে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত; জনদূর্ভোগ চরমে


আলমগীর মানিক    |    ০৫:২৫ এএম, ২০২৩-০৫-১০

কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক পানি হ্রাসে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত; জনদূর্ভোগ চরমে

আলমগীর মানিক

চলমান শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টির অনুপস্থিতিতে তীব্র তাপদাহের কারনে রাঙামাটিস্থ কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে গেছে। পানি না থাকায় হ্রদের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। ইতোমধ্যেই রাঙামাটি সদরের সাথে পাঁচ উপজেলা বাঘাইছড়ি, লংগদু জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলা সদরের সাথে যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। 

হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে অসহনীয় দুর্ভোগ। উপজেলাগুলোতে নৌ-যানে লোকজনের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হওয়ার ফলে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। জৈষ্ঠ্যের খরতাপে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে মানুষকে গন্তব্যে পৌছাঁতে হচ্ছে। তীব্র তাপদাহের এই শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। সুপেয় পানির জন্য কয়েক মাইল হেঁটে তাদের খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হ্রদ নির্ভর বাসিন্দাদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করতে চরমভাবে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। হ্রদের বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর ও টিলা। কয়েক মাইল হেঁটে নৌঘাটে আসতে হচ্ছে। যাত্রী এবং মালামাল ছোট ইঞ্জিন বোটের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে। তারপরও শুভলং এর পরে গিয়ে বোটগুলো আটকে যায়। ২ থেকে ৩ ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। 

রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ৫টি উপজেলার সাথে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, হ্রদে পানির স্তর এখন অনেক নিচে নেমে গেছে। হ্রদের নাব্যতা কমে যাওয়ায় হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়া কমে গেছে কাপ্তাই জল বিদ্যুতের উৎপাদনও। 

পাকিস্তান সরকারের আমলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি হয় সাতশ’ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের দীর্ঘতম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। ১৯৬২ সালে কাপ্তাইয়ে নির্মিত কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে ৫টি ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা মোট ২৪২ মেগাওয়াট। উজানে পর্যাপ্ত পানি থাকলে সবগুলো ইউনিট চালু থাকে। কিন্তু এখন মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে, যা থেকে বিদ্যুৎ মিলছে দিনে ২৫ মেগাওয়াট।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে যে পানি আছে, তাতে একটি মাত্র ইউনিট চালু রাখা সম্ভব। সেটিও চালু রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরিশোধনের কথা বিবেচনায় রেখে। পানি “পানি ৭০ এমএসএলের নিচে নামলে সেটিও চালু রাখা সম্ভব হবে না। 

উজান থেকে নেমে আসা পলিমাটি এবং পাহাড় হতে ধ্বসে পরা মাটি কাপ্তাই হ্রদের তলদেশে জমা হচ্ছে। এ কারণে হ্রদের তলদেশ ইতিমধ্যে অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে এবং হ্রদের সার্বিক জল ধারণক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম জলাধার এই কাপ্তাই হ্রদের নাব্যতা কমে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট সমস্যার ফলে রাঙামাটি তথা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অত্রাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত পণ্য আহরণ, পর্যটন এবং শস্য পরিবহণ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যা রাঙামাটি জেলার অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ব্যপকভাবে ব্যহত করছে। কাপ্তাই হ্রদ কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও উন্নয়ন কর্মকান্ডকে সচল রাখতে অনতিবিলম্বে হ্রদের তলদেশে জমাটবদ্ধ পলিমাটি অপসারণে জরুরী ভিত্তিতে ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।