দুদকের মামলায় রাঙামাটি পৌরসভার সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাকুর জেলে


আলমগীর মানিক    |    ১১:৩৮ পিএম, ২০২০-১০-২৮

দুদকের মামলায় রাঙামাটি পৌরসভার সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাকুর জেলে

রাঙামাটিতে দুদক কর্তৃক দায়ের করা প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় রাঙামাটি পৌরসভার সাবেক হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ সাকুর মিয়াকে জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে রাঙামাটিস্থ জেলা জজ আদালত। বুধবার উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিন আবেদন নিয়ে রাঙামাটি জেলা দায়রা ও জজ আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন জানান সাকুর মিয়া।

জেলা জজ নুরুল ইসলাম এর আদালত এসময় তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। দুদক রাঙামাটি সমন্বিত কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সাকুর মিয়ার বর্তমান কর্মস্থল চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভায় বলে জানাগেছে। 

এই মামলার অন্যতম আসামী সাবেক পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম ভূট্টো আগে থেকেই জামিনে রয়েছেন বলে জানাগেছে। মামলায় অন্য আসামীরা হলেন, রাঙামাটি পৌরসভার কর আদায়কারী নির্মল কান্তি দাশ ও হিসাব সহকারী মোঃ নুরুল আমিন।

আদালতে দাখিল করা এই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাকুরসহ সংশ্লিষ্টরা রাঙামাটি পৌরসভায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে পরস্পর যোগসাজসে ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে রাঙামাটি পৌরসভার ভ্যাট ও আয়কর বাবদ মোট ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৭ টাকা ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলনপূর্বক টাকা চালানের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করা করে আত্মসাত করে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

সূত্রমতে, দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে উঠে আসে, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ উপরোল্লেখিত টাকা উত্তোলনের পর উক্ত টাকার মধ্য থেকে ৫টি চালানের মাধ্যমে মোট ৭.৩৮.৭৪১ টাকা সরকারী কোষাগারে নির্দিষ্ট কোডে জমা দেওয়ার জন্য চালানগুলোতে পৃষ্ঠাংকনকারী কর্মকর্তা হিসেবে তৎকালীন মেয়র মোঃ সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর তারিখ বিহীন স্বাক্ষর গ্রহণ করা হলেও আসামী হিসাররক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ সাকুর মিয়া উক্ত টাকা জমা প্রদান না করে তা আত্মসাত করেন।

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর গত ১৬/০৭/২০১৭ তারিখে উক্ত ৫টি চালানে মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর স্বাক্ষর কেটে দিয়ে তদস্থলে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সাকুর মিয়া নিজে স্বাক্ষর করে উক্ত পরিমান টাকা সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে আত্মসাত করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এবিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ের স্মারকনং ০০.০১.৮৪০০.৬২৬.০১.১০৭.১৮/রাঙামাটি/১৩৮৭৪/১ তারিখ: ১৪/০৭/২০২০ইং মোতাবেক অনুমোদন রয়েছে। এব্যাপারে অন্যান্য অনুসন্ধান ও মামলা তদন্ত কার্যক্রমে আরো কারো সম্পৃক্ততা পেলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে উক্ত মামলার এজাহারে। 

এই মামলার বাদী জিএম আহসানুল কবীর কর্তৃক টাইপকৃত এজাহার গত ১২ তারিখ বিকেলে প্রাপ্ত হয়ে দুদক সমন্বিত কার্যালয় রাঙামাটির মামলা নং-০২ তারিখ ১২/০৮/২০২০ইং ধারা দন্ডবিধি ৪০৯/১০৯তৎসহ ১৯৪৭ সালের দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এই মামলা রুজু করেন সহকারী পরিচালক মোঃ আবুল বাশার।

দুদক রাঙামাটি সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিন আহমেদ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের গত ১৩ই আগষ্ট বৃহস্পতিবার এই মামলাটি দায়ের করেছেন রাঙামাটি দুদক এর সহকারী পরিচালক মোঃ আবুল বাশার। মামলাটি গ্রহণ করেন রাঙামাটির ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এর দায়িত্বে থাকা যুগ্ম জেলা জজ সাইফুল এলাহি। মামলা নাম্বার ৪/২০, তারিখ:১৩/০৮/২০২০ইং।

সর্বশেষ এই মামলার অন্যতম আসামী সাকুর মিয়া উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাকে নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশনা প্রদান করে। তারই ধারাবাহিকতায় সাকুর মিয়া বুধবার রাঙামাটি জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন জানায়। এসময় আদালত মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে আসামীর জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।