রাজস্থলী সদর হাসপাতাল চালকের কাছেই জিম্মি এম্বুলেন্সসেবা


রাজস্থলী প্রতিনিধি    |    ০৬:৫০ পিএম, ২০২৩-০১-১৭

রাজস্থলী সদর হাসপাতাল চালকের কাছেই জিম্মি এম্বুলেন্সসেবা

রাঙামাটির প্রত্যন্ত উপজেলা হিসেবে পরিচিত রাজস্থলী।  এই উপজেলার ২০/২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের জরুরি সেবায় রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ০২টি সরকারি এম্বুলেন্স । কিন্তু এম্বুলেন্স থাকলে চালকের কাছে অনিয়ম ও কর্মস্থলে অনুপস্থিতির সময়মত চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না স্থানীয়রা।
এ অবস্থায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালককে সময়মত না পেয়ে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে এই উপজেলার মানুষকে ভরসা করতে হয় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস অথবা ভটভটি না হয় অটো রিকশার  ওপর। এতে বাড়তি ভাড়া ও চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে এ উপজেলার রোগীদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় ,  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এর আগের চালক  সলোয়মান ১০ বছর আগে অনিয়মের দায়ে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার  গাড়িচালক  কিছুদিন অ্যাম্বুলেন্স চালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে  চাইঅং মারমা নামক একজন চালক কে নিয়োগ করা হয় এম্বুলেন্স সেবাকে স্বাভাবিক করতে। কিন্তু তিনি যোগদান করার পর থেকে  অনিয়ম ও কর্তব্যকাজে ফাকি দিয়ে আসছে নিয়মিত। গত ১৪ জানুয়ারী শনিবার সকাল সাড়ে নয় টায় উপজেলার হাজি পাড়া নামক এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সেলিম হার্টেএ্যাটক করলে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখনকার  কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ  ফাহমিদা আকতার চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমক)  রেফার করেন। কিন্তু প্রায় দুইঘন্টা  অপেক্ষা করেও চালককে না পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার গাড়ি চালক দিয়ে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে  সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে  মারা যায় রোগী।। সরেজমিনে দেখা যায়, রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুতর রোগীদের এখান থেকে স্থানান্তর করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে। স্থানান্তরিত রোগীদের পরিবহনের জন্য ছুটতে হয় প্রাইভেট গাড়ির কাছে আর সুযোগ বুঝে প্রাইভেট গাড়ি গুলো সরকারি ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয়। বিপদে পড়ে  বেশি টাকা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়মিত রোগী পরিবহন করেন রোগীর স্বজনরা। বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের এক হত দরিদ্র পরিবারের মহিদুল ইসলাম নামের এক যুবক জানান, সপ্তাহ খানেক আগে তার স্ত্রী কে রাতের বেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যায়। রোগীর সমস্যা গুরুতয় হওয়ায় সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু মেডিকেলে যাওয়ার জন্য সরকারি এম্বুলেন্সের চালক উপস্থিত না থাকায় বেশি টাকায় প্রাইভেট একটি মাইক্রো নিয়ে আমাকে যেতে হয়। এতে টাকা বেশি লাগলেও মাইক্রো ম্যানেজ করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেক। এই  বিষয়ে  উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিক্লপনা কর্মকর্তা ডাঃ রুইহলা অং মারমা বলেন, আমার প্রতিষ্টানের এম্ভুল্যান্সের চালক কাজ কর্মে ফাঁকি দেওযায় এবং প্রতিনিয়ত মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় থাকায় তাকে আমি কয়েকবার শোকজ করেছি। একইসাথে তার অনিয়মের  ও কর্মস্থলে ফাকিবাজির তথ্য জানিয়ে শাস্তিমূলক বদলীর জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়, জেলাপরিষদ, জেলা সিভিলসার্জন অফিসে অনেক লেখা লেখি করছি। দুঃখের বিষয় অজ্ঞাতকারণে সে বহাল তবিয়তে আছে  এখনো। তিনি আরো বলেন শাস্তি হিসেবে চালক চাইঅং মারমার এ মাসের বেতন বন্ধ রাখার জন্য অফিস সহকারিকে নির্দেশ দিয়েছি আমি। তবুও সে অদৃশ্য কুটির জোরে  রাজস্থলী সদর হাসপাতালে ধারাবাহিক ভাবে অনিয়ম করে যাচ্ছে। ফলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত রাজস্থলী উপজেলার সাধারণ জনগণের  শান্তি নেই।