সড়ক বিভাগ কর্তৃক রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে অবৈধভাবে ভূমি দখলের অভিযোগ!


আলমগীর মানিক    |    ০৮:০৮ পিএম, ২০২৩-০১-০৯

সড়ক বিভাগ কর্তৃক রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে অবৈধভাবে ভূমি দখলের অভিযোগ!

আলমগীর মানিক

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে কোনো প্রকার নোটিশ বা অবগতি না করেই ব্যক্তি মালিকানাধীন রেজিষ্ট্রিকৃত জমিতে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের বিরুদ্ধে। রাঙামাটির সাপছড়ি এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত এই ওয়াল নির্মাণ কাজটি রাতের আধারে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে রাঙামাটির সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ জায়গার মালিক আরফান আলী ইতিমধ্যেই রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। 

ক্ষতিগ্রস্থের অভিযোগনুসারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি এলাকায় মূল সড়ক থেকে অন্তত ৯০ ফুট দূরত্বে আরফান আলির দাবিকৃত মালিকানাধীন জমিতে ১০.৪ ফুট প্রস্থের ৪০ মিটার লম্বা রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে বেইজ ঢালাই করা হয়েছে। এসময় সেখানে উপস্থিত শ্রমিকরা এই বিষয়ে কিছু বলতে না চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই’র সাইট ইঞ্জিনিয়ার রোমান এর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো আরফান সাহেবের দাবিকৃত জায়গার কিছু অংশে ওয়ালটি পড়েছে। এতে আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, আমাদেরকে কাজটি করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে রাঙামাটি সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষ। সে মোতাবেক আমরা কাজটি করছি। এতে কারো কোনো প্রকার আপত্তি থাকলে তিনি রাঙামাটি সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ জানাতে পারেন। অফিস থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমরা কাজ চালিয়ে যাবো। 

এদিকে উক্ত জায়গার মালিক দাবিদার আরফাণ আলী জানিয়েছেন, ১০৯নং সাপছড়ি মৌজা, উপজেলা-রাঙামাটি সদর, হোল্ডিং নং-১২৪জ/২৮৪/৫৫১, জমির পরিমাণ ২ একর। এই জমিটি আমি ক্রয়সূত্রেই মালিক। আমার মায়ের চিকিৎসাজনিত কারনে বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। এই সুযোগে সড়ক বিভাগের নিয়োজিত ঠিকাদার এনডিই কর্তৃপক্ষ আমার জায়গার উপর রাতারাতি মেশিন লাগিয়ে মাত্র অল্পসময়ের মধ্যেই মাটি কেটে বিশাল আকারের রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ শুরু করে।

বিষয়টি আমি শুনেই ঢাকা থেকে এসে কাজ বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে ০৫/০১/২০২৩ ইং তারিখে একটি লিখিত আবেদন জানাই। তারা আমাকে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে বলে মৌখিকভাবে আশ^স্থ করলেও মাত্র তিনদিনের মধ্যেই উক্ত জায়গায় ১০.৪ ফুট প্রস্থের ৬০ ফুট লম্বা বেইজ ঢালাই করে দেয়। এমতাবস্থায় আমি দিশেহারা হয়ে সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা আমার কথায় কোনো ধরনের কর্ণপাত করছেনা। আমি এই বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবো।  

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আদনান ইবনে হাসান জানিয়েছেন, কাজটি একমাসেরও অধিক সময় ধরে চলছে এতোদিন কেউ অভিযোগ দেয়নি। তারপরও আমরা রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কটি রক্ষায় এই রিটেইনিং ওয়ালটি নির্মাণ করছি। এটি নির্মাণ করাই আমাদের লক্ষ্য কারো জমি দখল করা আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরাতো এই জমিটি নিজেদের বলে দাবি করছিনা। কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় তাকে অবহিত নাকরে কিভাবে কাজ শুরু করলেন এবং এতে উক্ত ব্যক্তি অদূর ভবিষ্যতে তার জায়গায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করতে আদৌ পারবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী বলেন, আরফান আলী নামের একজন আমাদেরকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা আপাতত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। তার সাথে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

প্রসঙ্গত; ২০১৭ সালে ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জেলার বিভিন্ন সড়ক। এতে করে রাঙামাটির সাথে কাপ্তাই-চন্দ্রঘোনা-বাঙালহালিয়া-বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। এতে করে বর্তমানে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ এর উদ্যোগে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক মেরামত এবং  পাহাড় ধস প্রতিরোধে ২৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট  বিভাগ। 

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, ভয়াবহ পাহাড় ধসে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের আওতাধীন সড়কের মোট ১৫১টি স্পটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন রয়েছে। এ প্রকল্পের মধ্যে মোট নিরাপত্তা দেওয়াল রয়েছে ৫ হাজার ৪৭০ মিটার ও ড্রেন হচ্ছে ৭ হাজার ৭৩৫ মিটার। পাহাড় ধস প্রতিরোধক কংক্রিট ঢালাই হচ্ছে ৭২ হাজার ১৫০ বর্গ মিটার। এরমধ্যে ৫ মিটার উচ্চতার নিরাপত্তা দেয়াল হবে ৫১ টি স্পটে, ৬ মিটার উচ্চতার রিটেইনিং হবে ৭৩টি স্পটে। ৭ মিটার উচ্চতার নিরাপত্তা দেয়াল হবে ২৭টি স্পটে। পাইল ফাউন্ডেশনের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১২-১৮ মিটার।

এদিকে রাঙামাটির সড়কগুলো রক্ষায় প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এনডিই কর্তৃক নির্মানাধীন রিটেইনিং ওয়ালগুলো স্থানীয় ভূমির মালিকদের সাথে আলোচনা নাকরেই হুটহাট করে কাজ শুরুর অভিযোগ উঠেছে। রাঙামাটি শহরের তবলছড়ির টেক্সটাইল মার্কেট এলাকায় এই ধরনের একটি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের পরপরই উক্ত স্থানটিতে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে আরফান আলীর মালিকানাধীন জায়গায়ও কোনো প্রকার যোগাযোগ নাকরেই জোরপূর্বক রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করায় ক্ষুব্ধ আরফান আলী আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন বলে জানিয়েছেন। এতে করে সড়ক বিভাগের খামখেয়ালীপনায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কাজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।