রাঙামাটির পুলিশ সুপার মোদদাছছের হোসেনকে প্রেস ক্লাবের বিদায়ী সংবর্ধনা


আলমগীর মানিক    |    ০১:৫৯ এএম, ২০২২-০৮-২৪

রাঙামাটির পুলিশ সুপার মোদদাছছের হোসেনকে প্রেস ক্লাবের বিদায়ী সংবর্ধনা

পার্বত্য রাঙামাটি জেলার বিদায়ী পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন বলেছেন, সমাজকে স্থিতিশীল, নিরাপদ এবং সুশৃঙ্খল রাখার প্রত্যয় নিয়ে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবনের ঝুুঁকি নিয়ে কাজ করে পুলিশ; আর এই মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নে পুলিশ- সাংবাদিক একে অপরের পরিপূরক। পুলিশের মহৎ কাজগুলো সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে জাতির সামনে ফুটিয়ে তোলে। এতে পুলিশ সদস্যরা কাজে উৎসাহিত হয় এবং ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা পায়। তিনি বলেন, কাজ করলে ভুল হতেই পারে, কারণ কেউ ভুলের উর্ধে নয়, তবে সব কিছুর ক্ষেত্রেই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থাকে। তাই সঠিক তথ্য বিশ্লেষণ এবং কোনো ঘটনার তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করার পরই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা উচিৎ।  সাংবাদিকদের আমরা জাতির বিবেক বলে থাকি, তাই তাদের দায়িত্বশীলতা থাকা জরুরী।

অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ায় রাঙামাটি জেলা থেকে বদলি হওয়ায় পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছছের হোসেন মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর কার্যালয়ে রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সদস্যদের সাথে বিদায়ী মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন।

এসপি বলেন- আমি নিজ কর্তব্যের তাগিদে রাঙামাটি জেলার নানা সমস্যা নিয়ে গভিরভাবে কাজ করেছি। আমি প্রচার বিমুখ এবং কাজে বিশ্বাসি। মত বিনিময়কালে তিনি এসময় রাঙামাটিতে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ের বিভিন্ন স্মৃতি রোমান্থন করে এসপি বলেন, রাঙামাটির সাংবাদিকরা অনেক দায়িত্বশীল এবং সহযোগীতার মনোভাব নিয়ে কাজ করে। আমার সৌভাগ্য যে, আমি তাদের সহযোগীতা পেয়েছি এবং কাজ করে শান্তি পেয়েছি। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে রাঙামাটির গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতার কথা তাঁর চির স্মরণে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমি মাঠে কাজ করা মানুষ, তাই চেষ্টা করেছি মাঠে থাকতে।

শুধু আইন শৃঙ্খলার উন্নয়নেই নয়, জেলা পুলিশের অভিভাবক হিসেবে আমি ব্যারাক, ক্যাম্প, ফাঁড়ি এবং থানাগুলোর ভূমি ও অবকাঠামো সমস্যা দুরীকরণে বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছি। আমার টিমকে সাথে নিয়ে পুলিশ পরিবারকে নির্বিঘেœ কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা করেছি।

আশা করি আমার এ উদ্যোগ আগামী দিনে পুলিশের কাজের গতিকে আরো সাবলীল করবে। তিনি এ বিষয়গুলো নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ ডকুমেন্ট তৈরি করেছেন বলেও উল্লেখ করেন মত বিনিময় কালে।

রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও পার্বত্যাঞ্চলের প্রবীণ সাংবাদিক একেএম মকসুদ আহমেদ এসপির উদ্দেশ্যে বলেন- আপনার সাফল্য কামনা করছি।  আপনি যতদিন ছিলেন. ততদিন রাঙামাটির  আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি শান্ত ছিলো।

রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল এসপির উদ্দেশ্যে বলেন- আপনার সহযোগিতার  কথা আমরা আজীবন মনে রাখবো। আপনি যে ভাবে সকলের সাথে সদ্ভাব রেখে কাজ করেছেন আশা করি আগামী দিনেও জেলা পুলিশ এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।

সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক বলেন- পার্বত্য জেলায় পুলিশের কার্যক্রম পরিচালনা বেশ জটিল, এর মাঝেও আপনার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব সময় নান্দনিক ছিল। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।

এটা আপনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো খরচ না করেই বেকার যুবক যুবতিদের পুলিশের জনবল হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা রাঙামাটির আপামর মানুষ মনে রাখবে। আমরা জানতে পেরেছি আপনি পুলিশ সদস্যদের সুবিধা অসুবিধার কথা সব সময় খেয়াল রেখেছেন বলে তারা দায়িত্ব পালনে আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান ছিল। আপনার  সংস্কৃতিমনা  কর্মকান্ডগুলো সুধী মহলে সমাদৃত হয়েছে। যা গনমাধ্যমকর্মীদের স্মৃতির ডায়েরীতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সদস্য ও সিএইচটি টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক আলমগীর মানিক বলেন, নির্লোভ একজন কর্মকর্তা হিসেবে পুরো রাঙামাটিবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন প্রিয় পুলিশ সুপার। তার আমলেই রাঙামাটিতে সম্পূর্ন বিনা খরচে অত্রাঞ্চলের মেধাবী তরুনরা পুলিশ বাহিনীতে চাকুরি পেয়েছে।

পেশাগত দায়িত্ব পালনে সবসময় পুলিশ সুপারসহ তার সহকর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছে সাংবাদিকরা। পুলিশ ও সাংবাদিক একে অপরের পরিপূরক এই ব্যবস্থা আগামীতেও যাতে করে সচল থাকে সেই লক্ষে নিজ বাহিনীর কর্মকর্তাগণকে পরামর্শ দিয়ে যাওয়ার অনুরোধও করেছেন পুলিশ সুপারের কাছে। 

সংক্ষিপ্ত মত বিনিময়ের পর প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা বিদায়ী পুলিশ সুপারকে ক্রেস্ট এবং ফুল দিয়ে শুভকামনা জানান।

এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাহমুদা বেগম, অতিরিক্ত পুলিশ (অপরাধ) মারুফ আহম্মেদ, অতিরিক্ত পুলিশ (ডিএসবি) ওয়াহিদুর রহমান, রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি অলি আহম্মেদ, কোষাধ্যক্ষ পুলক চক্রবর্তীসহ ক্লাবের অন্যান্য সদস্য এবং পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।