এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ভূয়া অভিযোগে রাঙামাটিতে তোলপাড়!


আলমগীর মানিক    |    ০৪:০৫ পিএম, ২০২০-১০-১৪

এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ভূয়া অভিযোগে রাঙামাটিতে তোলপাড়!

পর্যটন শহরে নতুন দুইটি ব্রীজ নির্মাণকে কেন্দ্র করে একটি মহলের ভূয়া অভিযোগে তোলপাড় চলছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পৃথক দুটি স্থানে নির্মিত হতে যাওয়া দুইটি ব্রীজ নির্মাণকে কেন্দ্র করে জেলার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ওই দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীসহ সরকারী বিভিন্ন কার্যালয়ে প্রেরিত এই অভিযোগ পত্রে অভিযোগকারিদের ৬ জনই কিছুই জানেন না সুনির্দিষ্ট্য ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার ঠিক থাকলেও তাদের নাম পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি ইতিমধ্যেই রাঙামাটি শহরে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।

গত ১২ই অক্টোবর এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে প্রেরিত এই অভিযোগ পত্রে বিজিবি’র মতো একটি শৃঙ্খলা বাহিনীকে জড়িয়েও মিথ্যা তথ্য উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি ইতিমধেই বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলেও জানাগেছে। 

এবিষয়ে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির অর্থায়নে তবলছড়ি-আসামবস্তি সংযোগ সড়কে একটি এবং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় একটি মোট দুইটি নতুন ব্রীজ নির্মাণের কাজ চলছে। কাজ শুরুর পর থেকেই একটি মহল এ নিয়ে নানা প্রপাগান্ডা চালিয়ে উন্নয়ন ব্যাহত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে এলজিইডির একটি সূত্র। 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কারা এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে এবং উন্নয়ন কাজ বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে সেটি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন এলজিইডি রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব চৌধুরী।

সম্প্রতি এলাকার নাগরিক পরিচয় দিয়ে জনৈক মোঃ সাইফুল ইসলাম সেলিম, অর্নব চাকমা বেলুন, মোঃ হাসমত আলী, মোঃ শফিকুল ইসলাম শাকিল, মোঃ আলী আকবর ও আব্দুর সবুর নাম ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে উক্ত অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, তবলছড়ি আসামবস্তি এলাকার রাস্তার প্রয়োজনীয় কাজ না করিয়ে অপ্রয়োজনীয় কাজ করিয়ে সরকার ও জনগণের প্রায় ১৫ কোটি টাকা অপচয় ও লুটপাট করছে। রাঙামাটির বিজিবি’র গেইটে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ৯৬ মিটার ব্রীজ নির্মাণ করা হচ্ছে যাহা মাত্র ৫০ লাখ টাকায় করা যেত। এবং তবলছড়ি আসামবস্তি সংযোগ সড়কে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রাস্তার পাশে ৪৮ মিটার লম্বা ব্রীজ ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে,যাহা ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে করা যেতো।

রাস্ট্রের এতো অপচয় ও ক্ষতির জন্য এলজিইডির এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নানিলে রাষ্ট্রের উন্নয়ন চোখে পড়বেনা এমন তথ্যাল্লেখ করে উক্ত পত্রের মাধ্যমে রাঙামাটির এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব চৌধুরী ও প্রকল্প পরিচালক নুরনবী’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচীর হুমকিও প্রদান করা হয় প্রেরিত পত্রে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে উক্ত পত্রের এক নাম্বারে থাকা মোবাইল নাম্বার ০১৭৪০৮৯২২১১ তে যোগাযোগ করা হলে অপরপ্রান্ত থেকে রিসিভ করা ব্যক্তি নিজেকে জাকির হোসেন সেলিম পরিচয় দেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এর কিছুই জানি না। এসবের সাথে আমি বা আমার পরিবারের কেউই জড়িত নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এলজিইডির বিরুদ্ধে আমার পিতা একটি মামলা করেছিলেন,তবে পরবর্তীতে সেটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে দুই নাম্বার অভিযোগকারির মুঠোফোন ০১৭৭৭৬৯৪৪০২, তিন-নং- অভিযোগকারীর মুঠোফোন-০১৮৬৬৬০৯৭৩২, চার নাম্বার অভিযোগকারী-০১৮১৫৫৬১৫৫৮, পাঁচ নাম্বার অভিযোগকারি-০১৮১৯৩১১১০৬ ও সর্বশেষ ৬ নাম্বারে উল্লেখিত অভিযোগকারির ০১৬২৪৪৯৬৪১৩ নাম্বারে যোগাযোগ করলে তারা সকলেই জানিয়েছেন উক্ত অভিযোগ পত্র তারা দেননি এবং এই ধরনের উন্নয়ন কাজে বাধা দেওয়ার মতো কোনো হীনকর্মের তারা জড়িত নন। 

এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিগত ২০১৭ সালের ল্যান্ড স্লাইডিংয়ের পরবর্তী সময়ে হেড অফিসের নির্দেশে রাঙামাটিতে পাঠানো প্রস্তাবনার আলোকে ঢাকা থেকে টিম এসে এই ব্রীজগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই করে পরবর্তীতে সেগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি জানান, আরসিসি বক্স কালভার্ট তথা রাস্তার উভয় দিকে লেকের গভীরতা অধিক (প্রায় ২৬ ফুট) হওয়ায় গতানুগতিক আরসিসি ওয়াল নির্মান অনেক ব্যয় বহুল হওয়ায় এবং টেকসই ও পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ পরামর্শকগন একাধিকবার পরিদর্শন শেষে উক্ত স্থানে ব্রীজ নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়।  

এলজিইডি“তিন পার্বত্য জেলা দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প” এর আওতায় দীর্ঘ কারিগরী প্রক্রিয়া তথ্য মৃত্তিকা পরীক্ষা, স্থানীয় সম্ভাব্যতা যাচাই এবং প্রাক্কলন শেষে উক্ত স্থানে ৪০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় দরপত্র আহবান শেষে ঠিকাদার নির্বাচন করে ২৯-০৭-২০২০ইং তারিখ চুক্তি সম্পাদন করে কাজ শুরু করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ সৈয়দ আমিন ও তার ছেলে জাকির হোসেন সেলিম বিদ্যমান কালভার্টের মুখ অবৈধভাবে বন্ধ করে লেকের একপাশের্^ তাহার ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর উল্ল্যেখ করে নির্মাণাধীন ব্রীজের স্থানকে নিজস্ব পুকুর দাবী করে এবং ব্রীজ নির্মান কাজ বন্ধ করার জন্য রাঙামাটির যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। মামলা নং- সিভিল স্যুট-২৭৮/২০, তারিখঃ- ২৭-০৯-২০২০ইং। পরবর্তীতে মামলাটির কোন ভিত্তি না থাকায় ইতিমধ্যে গত ০৭-১০-২০২০ইং তারিখে বাদী জনাব ছৈয়দ আমিন আদালত বরাবর মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন। 

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব চৌধুরী বলেন, এতেই প্রমানিত হয় মামলাটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। জাকির হোসেন সেলিম গং শুধু ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সরকারি উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছেন। 

এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও কাপ্তাই হ্রদ মৎস উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এর মতামত চাওয়া হলে তাঁরা উভয়ে বিরোধপূর্ন স্থানটি জলে ভাসা খাস খতিয়ানভূক্ত জমি এবং কাপ্তাই লেকের অংশ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। 

গত ১১-১০-২০২০ইং তারিখে রাঙামাটি জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় কমিটির উপদেষ্টা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের উপস্থিতিতে ব্রীজটি নির্মানের বিষয়ে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ মনিরুজ্জামান মহসীন রানা উত্থাপন করলে এই বিষয়ে সভায় এলজিইডি রাঙামাটি’র বক্তব্য তুলে ধরা হয় এবং ব্রীজটি নির্মানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্ল্যেখ করলে; সভায় সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুততার সাথে ব্রীজের নির্মান কাজ সমাপ্ত করার জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়।