রাঙামাটিতে সিবিএ সভাপতি-সম্পাদকের জামিন নামঞ্জুর; জেলে প্রেরণ


আলমগীর মানিক    |    ১০:২৬ পিএম, ২০২২-০৭-১৩

রাঙামাটিতে সিবিএ সভাপতি-সম্পাদকের জামিন নামঞ্জুর; জেলে প্রেরণ

প্রতিপক্ষের দায়েরকৃত মামলায় রাঙামাটির চন্দ্রঘোনাস্থ কর্ণফূলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) এর সিবিএ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চুকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। উক্ত মামলায় দন্ডবিধি ৩৩১ ও ৩৮৬ জামিন অযোগ্য ধারা থাকায় বুধবার রাঙামাটির চীফ জুডিসিয়াল আদালতের বিচারক মোঃ ফারুক আসামীদের জামিন না মঞ্জুর করে সি-ডাব্লিউ মূলে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ প্রদান করেন।

মামলায় আসামীদের পক্ষে রাঙামাটি বারের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবি অ্যাডভোকেট মোখতার আহমেদ, অ্যাডভোকেট ফরহাদ চৌধুরীসহ আরো বেশ কয়েকজন আইনজীবি উপস্থিত ছিলেন। 

মামলার বাদী ১ নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন এর ৬নং ওয়ার্ডের কেপিএম হাউজিং কলোনীর ৬নং লাইনের বসবাসকারী এস এম ইমরান হাসান। তাঁর পিতার নাম মোঃ দাউদ আলী। ইমরান হাসান কেপিএম মিলে কর্মরত আছেন এবং তিনি কেপিএম ওয়ার্কাস ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক। 

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলি পেপার মিলস (কেপিএম) লিমিটেডের সিবিএ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু এর বিরুদ্ধে গত ২৩ মে রাঙামাটি চীফ জুডিসিয়াল আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিলো। এই মামলায় আসামীদ্বয় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন।

চলতি মাসের ১২ তারিখ নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পনের দিন তারিখ ধায্য ছিলো। গত ৬ই জুলাই সিবিএ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করেন। সেসময় আদালত বিষয়টি শুনানীর জন্য ১৩ই জুলাই(বুধবার) দিন ধার্য্য করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার আসামীরা রাঙামাটির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ফারুক এর আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। মামলায় জামিন অযোগ্য দন্ডবিধি ৩৩১ ও ৩৮৬ ধারা বিদ্যমান থাকায় আসামীদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে সিডাব্লিউ মূলে জেল হাজতে প্রেরণ করার আদেশ দেন। 

অ্যাডভোকেট ফরহাদ চৌধুরী প্রতিবেদককে জানান, ২০২০ সালের একটি আঘাতের ছবি দিয়ে ২০২২ সালের ২৩শে মে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার যেদিন মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে সেটি নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। তিনি জানান, কেপিএম এর অভ্যান্তর একটি সংরক্ষিত এলাকা। সেখানে কেপিএম এর নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী, পুলিশের টহল ব্যবস্থাসহ প্রশাসনের সরব উপস্থিতি থাকে। সেখানে প্রকাশ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে খোদ কেপিএম কর্তৃপক্ষই জানেনা।

অ্যাডভোকেট ফরহাদ চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, এই মামলাকে কেন্দ্র করে কেপিএম এর নির্বাহীর কক্ষে একটি বৈঠক হয় এবং কেপিএম’ এর অভ্যান্তরীন তদন্ত কমিটি এই ধরনের কোনো ঘটনার অস্থিত্বই পায়নি। তদুপরি যেদিন উক্ত বাদী তার উপর হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন! সেদিন তিনি হাসপাতালেই যাননি। সেদিনের ঘটনার কোনো ডাক্তারি রিপোর্টও নাই। সে একটি রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপন করেছে সেটি ছিলো ২০২০ সালের। এই মামলার দ্বিতীয় আসামী সিবিএ সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু ইতোমধ্যেই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কথা রয়েছে। 

এদিকে, সেসময় মে মাসের ২৭ থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিলো। সেসময় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের অনুসন্ধানে যার প্রত্যেকটিতেই উক্ত মামলাটি সম্পর্কে মিথ্যা ও ভূয়া তথ্যাবলি উঠে আসে।

চলতি বছরের ২৮মে শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সকাল ১১টায় মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী জানান, আমি এই ধরনের ঘটনা শুনি নাই এবং এই বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেন নাই।

৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ মামুন এবং ঘটনাস্থল ইঞ্চিনিয়ারিং কলোনির ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল হাসনাত খোকন জানান, আমরা এই ধরনের কোন ঘটনা শুনি নাই।

কেপিএম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনোয়ার হোসেন এর নিকট বিগত ২৮শে মে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একমাস আগে মিল এলাকায় এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে সেটা আমি শুনি নাই। তবে বাদীর মামলার পর সিবিএ সভাপতি বিষয়টি আমাকে অবহিত করেছেন।