আলমগীর মানিক | ০১:১১ এএম, ২০২২-০৬-১৯
পার্বত্য তিন জেলায় বাজার ফান্ডের জমি রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা ও ঋণ গ্রহণে স্থবিরতার বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন রাঙামাটি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদসীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার।
ঠুনকো অজুহাতে পাহাড়ের তিন জেলায় ব্যাংক ঋণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনীতির চাকা। বেকার হয়ে পড়ছে অনেক ছোট-বড় শ-শ ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়ে প্রভাব পড়ছে আত্মসামাজিক উন্নয়নে। আইনে বাধা না থাকলেও অলিখিতভাবে তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক কার্যলয় থেকে ভূমি বন্ধকের অনুমতি আটকে রাখায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
ভূমি রেজিষ্ট্রেশনের মিউটেশন ও মিস মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রাঙামাটিতে প্রায় ৩ শতাধিক মিউট ও মিছ মামলা নিষ্পত্তির জন্যে আটকে রয়েছে বলে জানাগেছে। ভূমি রেজিষ্ট্রেশন জটিলতায় জেলাপ্রশাসনগুলোর নিরবতায় তিনজেলায় অন্তত ১৮০ থেকে ২০০ কোটি টাকার ঋণ কার্যক্রম আটকে আছে। রাঙামাটির বাজার ফান্ড এলাকাগুলোতেই ৫০ কোটি টাকার ঋণ কার্যক্রম আটকে আছে; এ তথ্য ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া।
এদিকে,ঋণ নিতে না পেরে ইতিমধ্যেই রাঙামাটি থেকে অন্তত ৪০ জন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ি ব্যবসা বাণিজ্য গুটিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন; এমন অভিযোগ রাঙামাটি চেম্বার নেতৃবৃন্দের। রাঙামাটির ১৭টি ব্যাংকের একাধিক ব্যাংক ম্যানেজারগণ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন,এই জটিলতায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করাও সম্ভব হচ্ছেনা ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা বাণিজ্যের গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ায় এ জেলার মানুষের জীবনমান যেমন নিন্মমুখী হয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে গত দুই-তিন বছরেও কোনো সুরাহা নাহওয়ায় অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তর-টেবিলে উপস্থাপন এবং ২০২২-২৩ অর্থবৎসরের বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাননীয় স্পিকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বাজার ফান্ড নামের একটা প্রশাসন আছে। এই প্রশাসনের লিজপ্রাপ্ত এক ব্যক্তির মামলার কারনে যারা স্থায়ী বন্দেবস্তী আছে তারাও এখন ব্যাংক থেকে লোন পাচ্ছেনা। এই মামলার কারনে ওখানকার জেলা প্রশাসন যে অনাপত্তি দিতে হয় সেটি দিচ্ছে না। আর এই অনাপত্তি নাদিলে ব্যাংক থেকে কেউ লোন পায়না। এই লোন না পাওয়ার কারনে অত্রাঞ্চলে ব্যবসা বানিজ্যে মন্দা ও স্থবিরতা নেমে এসেছে। এই ক্ষেত্রে যাতে করে ব্যবসায়িরা লোন নিতে পারে তার জন্য সংশ্লিষ্ট্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে হবে। অন্যদিকে, হাউজবিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের কাছে টাকা আছে কিন্তু এই অনাপত্তি না থাকার কারনে এই হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশন থেকে লোন নিতে পারছেনা। সুতরাং এই বিষয়টি খুবই জরুরী ভিত্তিতে দেখা দরকার বলে আমি মনে করছি।
এ বিষয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয়, পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ, তিন জেলা প্রশাসন এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংকের সাথে ঋণ গ্রহীতার চুক্তিনামা রেজিস্ট্রেশন করার এখতিয়ার পার্বত্য জেলাসমূহে-জেলা প্রশাসকগণের উপর ন্যাস্ত রয়েছে। এই নিয়ম ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ১২ধারা(২) মোতাবেক। অবশিষ্ট ৬১ জেলায় ব্যাংক ঋণের জন্য সাব রেজিষ্টারের অনাপত্তিই যথেষ্ট। কিন্তু পাহাড়ে জেলা প্রশসকের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে চুক্তি হয় এবং সেই চুক্তি তাঁরই একজন ম্যাজিস্ট্রেট রেজিস্টারভুক্ত করেন। ২০১৭ সালে রাঙামাটির তৎকালীন জেলা প্রশসক মানজারুল মান্নান প্রথমে এই প্রক্রিয়ার উপর প্রশ্ন উত্থাপন করে ঋণ চুক্তি অনুমোদন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে যদিও নানা দেন দরবারের পর তা খুলে দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ‘২০১৭ সালে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান প্রথমবারের মতো বাজার ফান্ড এলাকায় ভূমি রেজিষ্ট্রির মিউটেশন ও মিছ মামলাগুলো নিষ্পত্তি স্থগিত করে দেন। পরবর্তীতে আমরা আন্দোলনের দিকে ধাবিত হতে চাইলে ডিসি মানজারুল মান্নান মহোদয় রাঙামাটি চেম্বারের ৫ জন পরিচালককে তার সহকারির মাধ্যমে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আমাদেরকে ভিক্ষুক ফান্ডে অনুদানের শর্তে মিউট ও মিছ মামলা নিষ্পত্তির ধারাবাহিকতা রক্ষার আশ^াস প্রদান করেন। আমরা ভিক্ষুক ফান্ডে অনুদান প্রদান করি এবং প্রক্রিয়াটি চালু হয়; দুর্ভাগ্যবশতঃ তার কিছুদিন পর তিনি বদলি হয়ে চলে যান। পরবর্তিতে ডিসি মামুনুর রশিদ মহোদয়ের সময়ে ২০১৯ সালের দিকে তিনি বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে রাঙামাটির বাজার ফান্ড এলাকার জমির ঋণ অনুমোদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেন’। এতে করে ঋণ প্রক্রিয়া আটকে থাকায় রাঙামাটির অন্তত ২ হাজার ছোট বড় ব্যবসায়ি/বিনিয়োগকারি ধ্বংসের পথে।
জানাগেছে বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তে আসার জন্য জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার বিগত জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদকে তাগিদ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটাতেও কোন ফল হয়নি।
২০১৯ সালের তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ডিসি মানজারুল মান্নানের সূত্র ধরেই খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ঋণ প্রস্তাবনা অনুমোদন ও রেজিস্টেশন প্রক্রিযা বন্ধ করে দেন। জেলাপ্রশাসনের তহবিলে টাকা জমা দেওয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে অ-বনিবনার এক পর্যায়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ^াস ২০১৯ সালের “অক্টোবরে বাজার ফান্ড এলাকায় বন্দোবস্তি দেওয়া জমিকে খাস জমি উল্লেখ করে ওইসব জমির বিপরীতে ঋণ প্রদানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন” এবং এ বিষয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়ে পত্র প্রেরণ করেন। (স্মারক নং-০৫.৪২.৪৬০০.০২০.১৮.০২৫.১৯-৬০৩। তারিখ: ১৪/১০/২০১৯ইং)। পরবর্তীতে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের পত্রের প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ০৬/১১/২০১৯ইং তারিখে স্মারক নং-২৯.০০.০০০.২১৪.২৮.২৩২.২০১৯-১৭৭ মূলে একটি পত্রের মাধ্যমে উপ-সচিব আসমা তাসকিন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মতামত চায়।
উক্ত পত্রের আলোকে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সেই সময়ের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা দ্রুততার সাথে বিষয়টিকে জনগুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তাঁর ইতিবাচক মতামত পাঠান (১৮/১২/২০১৯ ইং তারিখের স্মারক নং-০১.২৯.২০১৯(২য় খন্ড)৩২৭বি)। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তথা বাজার ফান্ড প্রশাসক কংজরি চৌধুরীও (তৎকালীন) স্মারক নং-২৯.২৩৬.০১৮.৩৩.০৫.০০০.২০১৯-২৩/বি মূলে বিগত ৮/০১/২০২০ খ্রিঃ তারিখে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া পত্রের জবাব দেন। মতামতে জেলাপ্রশাসক- ‘আইনের অধীনে বন্দোবস্তি দেওয়া ভূমিকে খাস জমি’ হিসেবে অভিহিত করার বিষয়টি তিনি দুঃখজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এমন বাধ্যকতা আরোপ করা হলে এলাকার জনস্বার্থ বিঘিœত হবে বলেও মন্তব্য করেছেন কংজরি। জেলাপরিষদগুলো অত্যন্ত দ্রুততার সাথে মতামত পাঠালেও বিষয়টি আর এগুয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তর-টেবিলে উপস্থাপন এবং ২০২২-২৩ অর্থবৎসরের বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার উক্ত বক্তব্যে এমপি দীপংকর তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রামে এপিবিএন ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প স্থাপন, পাহাড়ে সশস্ত্র তৎপরতা, পর্যটন, ঠেগামুখ স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালুকরণ, ঠিকাদারদের দূর্দশা, বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী প্রতিবাদ-প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে জাতীয় সংসদে প্রায় ১১ মিনিট বক্তব্য প্রদান করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক : কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রট (কেএনএফ) কর্তৃক রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিলাইছড়ির সাইজাম পাড়ায় তিন জনকে গু...বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের গত ২১ জুন রাঙামাটি সিমান্তে বিলাইছড়ি উপজেলার সাইজাম পাড়া গ্রামে ত্রিপুরাবাসীর ওপর অত্...বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ৪নং কলমপতি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মাইগ্যামাছড়া হতে শুক্রবার ০১ ...বিস্তারিত
আলমগীর মানিক : গভীর রাতে রাঙামাটি শহরের কলেজ গেইট বাজারে আকস্মিক রহস্যময় আগুনে অন্তত ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্টান স...বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাঙামাটিতে করাতকল ও কাঠ পরিবহন শ্রমিক কল্যার বহুমূখী সমবায় সমিতি'র বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্র মূ...বিস্তারিত
আলমগীর মানিক : চলতি বছরের বিগত ২৬মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এর ঘোষনার ৩৫ দিন পর পহেলা জুলাই ২০২২ ইং ত...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © 2022 CHTtimes24 | Developed By Muktodhara Technology Limited