রেমাক্রি ইউপিতে ডায়রিয়ায় অন্তত ৯ জনের মৃত্যু!


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ১২:৪৮ এএম, ২০২২-০৬-১৬

রেমাক্রি ইউপিতে ডায়রিয়ায় অন্তত ৯ জনের মৃত্যু!

বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রি ইউনিয়নে কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিনে অন্তত নয় জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

বুধবার বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ এ কথা জানান।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ৭ জুন থেকে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে। গত রোববার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা চার। 

রেমাক্রি ইউপি চেয়াম্যান মুইশৈথুই মারমার দেওয়া তথ্যানুসারে মৃতরা হলেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নারেশা পাড়ার লংঞী ম্রো (৪৯), সংদন ম্রো (৮), সংওয়ে ম্রো (৬), রুইরক ম্রো (৫০) ও প্রেলি ম্রো (৩৬), মেনতাং পাড়ার বাসিন্দা ও পাড়াপ্রধান কারবারি মেনতাং ম্রো (৪৭), য়ংনং পাড়ার ক্রায়ন ম্রো (৫০), সিংচং পাড়ার প্রেনময় ম্রো (১২) এবং বড়মদক ভিতর পাড়া ডওয়াই সাইন মারমা (২০)।

থানচি উপজেলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকার একটি হলো রেমাক্রি ইউনিয়ন। এলাকাটি মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে। নৌপথই থানচি সদর থেকে সেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায়। ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা বড়মদক বাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। নৌকায় বড়মদক থেকে আরও এক ঘণ্টার দূরত্বে ডায়রিয়া আক্রান্তদের এই এলাকা।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সংকট রয়েছে। এছাড়া এই সময়ে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের ময়লা-আবর্জনা ঝিরি-ঝরণায় গিয়ে পড়ে। না ফুটিয়ে ঝিরি-ঝরণার পানি পান করার কারণে ডায়রিয়ার প্রার্দুভাব ঘটে।

ডা. ওয়াজিদুজ্জামন মুরাদ বলেন, “দুর্গম রেমাক্রি ইউনিয়নের বড়মদকের উপরে বিভিন্ন পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আজ বুধবার পর্যন্ত ৯ জন মারা গেছে নিশ্চিত হয়েছি।”

তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমন্বয় করার জন্য বুধবার দুপরে চার ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও পাড়ার কারবারিদের নিয়ে একটি জরুরি সভা হয়েছে। সেখানে জেলা সিভিল সার্জন ও জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য বিষয়ক আহবায়কও উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, এলাকাটি বেশ দুর্গম হওয়ায় ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না; রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে চিকিৎসা করানোও যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের কয়েকটি টিম ছাড়াও কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ও এলাকার কিছু স্বেচ্ছাসেবক জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

জেলা সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী জানান,ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই এলাকার কাছাকাছি ম্র্রংওয়া এলাকায় একটি ফিল্ড হাসপাতাল (সাময়িক) করা হবে। থানচিতে বুধবার দুপরে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।

নীহার রঞ্জন নন্দী আরও বলেন, অনেক দুর্গম হওয়ায় যেহেতু রোগীদের উপজেলা সদরে নিয়ে এসে চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না, সে কারণে আক্রান্ত এলাকারর কাছাকাছি এলাকায় ম্রংওয়া নামে একটা জায়গায় একটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা হবে। সেখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেম্বার, কারবারি, হেডম্যান ও বিজিবি সদস্যদের সহযোগিতায় এই ফিল্প হাসপাতালটি জরুরি ভিত্তিতে করা হবে।

ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়া ওই এলাকা থেকে ফিরে রেমাক্রি ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাংচং ম্রো বলেন, মূলত তার ওয়ার্ডের ছয়টি পাড়া য়ংনং পাড়া, সিংচং পাড়া, পাকতোয়া পাড়া, নারেশা লংঙান পাড়া, মেনতান পাড়া ও নেপিউ পাড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এই কয়েকটি পাড়ায় এখনও পর্যন্ত ৮০ জনের মতো ডায়রিয়া রোগী রয়েছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত অন্য আরেকটি পাড়া হলো নয় নম্বর ওয়ার্ডের ক্রাহ্লাঅং মারমা পাড়া।

দিন যত যাচ্ছে আক্রান্তদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে; তাই খাবার স্যালাইন ও কিছু ওষুধপত্র নিয়ে ফের ওই এলাকায় যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মাংচং ম্রো।

রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা বলেন, তার ইউনিয়নে তিনটি ওয়ার্ড ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপটা বেশি। অন্যান্য ওয়ার্ডে দুই একজন করে রোগী রয়েছে। ফিল্ড হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হলে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বিভিন্ন এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীও রয়েছে। তাদের জন্য আজ থেকে মশারিও বিতরণ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আরেকটি মেডিকেল টিম দুর্গত এলাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।