শিক্ষক,পরিবহন সংকট নিরসনের দাবিতে রাঙামাটি এটিআইয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা

১৬ স্থলে ২ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে রাঙামাটির কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের পাঠদান

আলমগীর মানিক    |    ০৫:০৭ পিএম, ২০২২-০৬-০৭

শিক্ষক,পরিবহন সংকট নিরসনের দাবিতে রাঙামাটি এটিআইয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা

শিক্ষক সংকট, পরিবহন সংকটসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে রাঙামাটিস্থ কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (এটিআই)’এর প্রায় দুইশো শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এসময় প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ভেতরেই অবরুদ্ধ হয়ে থাকে।

পরবর্তীদের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের আশ^াসের প্রেক্ষিতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম বেধে দিয়ে কর্মসূচী স্থগিতের ঘোষনা দেয় শিক্ষার্থীরা। উক্ত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আগামী শনিবার থেকে লাগাতার ক্লাস বর্জন কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে রাঙামাটিস্থ কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা।

এরআগে মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা মুর্হুমুর্হ শ্লোগান দিয়ে তাদের দাবি আদায়ের বিভিন্ন পোষ্টার-ফেষ্টুন হাতে নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বেলা দুইটা পর্যন্ত অবস্থায় নেয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০০৬ সাল থেকেই রাঙামাটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এটিআইয়ে ১৬ জনের স্থলে মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়ে এখন পর্যন্ত পাঠদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। রাঙামাটি শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার অদূরে অবস্থিত একমাত্র কৃষি ডিপ্লোমা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে যাওয়া আসার জন্য নিজস্ব কোনো পরিবহন ব্যবস্থাও নাই। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি প্রধান সড়কের সাথে লাগোয়া হওয়ার পরেও সম্মুখ সড়কে দেওয়া হয়নি স্প্রিড ব্রেকার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

এমতাবস্থায় বারংবার দাবি জানিয়ে আসলেও বিগত এক দশকেও রাঙামাটির এটিআইয়ে পরিবহন ও শিক্ষক সংকট নিরসনে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনরত ৭ম সেমিষ্টারের শিক্ষার্থীগণ জানায়, আগামী আগষ্টে আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা, তারপর আমরা এখান থেকে পাশ করে বের হয়ে যাবো। কিন্তু বিগত চার বছরে শিক্ষকবিহীন এই প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা কি শিখলাম আর জাতিকে আমরা কি-ইবা দিতে পারবো? এমতাবস্থায় আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। তারা যেনো আমাদের মতো পরিস্থিতির শিকার না হয়।

এসময় শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের দাবিতে ৭ম সেমিষ্টারের শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল আলম মুজাহিদ, ফয়সাল আহমেদ ভূঁইয়া, মাহফুজ আহাম্মেদ, তৌশা গেচি ত্রিপুরা, ৫ম সেমিস্টারের কেনি চাকমা, প্রণয় চৌধুরী, ৩য় সেমিস্টারের ফারিয়া ইসলাম ও প্রথম সেমিস্টারের সুমি আক্তার বক্তব্য রাখেন।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন রাঙামাটিস্থ কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ। পরবর্তীতে রাঙামাটি কৃষি বিভাগের পরিচালক, উপ-পরিচালকসহ উদ্বর্তন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করলে দাবি পূরণে আগামী ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম বেধে দেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি দাওয়া পূরনের আশ^াস দিলে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দিয়ে আন্দোলন কর্মসূচী শনিবার পর্যন্ত স্থগিত ঘোষনা করে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটিস্থ কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ জানান, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যোক্তিক। আমিসহ মোট দুইজন শিক্ষক এখানে অবস্থান করছি এবং মাঝে মধ্যে কৃষি অফিস থেকে অফিসারদের এনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়ে আসছি। তিনি জানান, রাঙামাটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে বিগত দুই বছর ধরে অধ্যক্ষের পদটি খালি রয়েছে। এছাড়াও বিগত এক দশক উপাধ্যক্ষ পদে-১, মূখ্য প্রশিক্ষক-৪, উদ্বর্তন প্রশিক্ষক-১, প্রশিক্ষক-৭জনের একজনও নাই। ১৬জনের মধ্যে মাত্র দুইজন নিয়েই চলছে রাঙামাটির কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান, বিষয়টি উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তারা শীঘ্রই এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে আমাকে আশ^স্থ করেছেন। তিনি জানান, আমি প্রতি মাসেই অত্র প্রতিষ্ঠানের সংকটগুলোর সার্বিক চিত্র তুলে ধরে উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে পত্র পাঠাই। এবার ৪০তম বিসিএস এর মাধ্যমে আগামী একমাসের মধ্যেই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও বাস না থাকার কারনে শহর থেকে দূরে হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও কষ্ট করে আসে এটিআইতে। পরিবহন সংকটের বিষয়টি নিয়েও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।