ভিন্ন আঙ্গিকে কন্যা শিশু দিবস পালন করলো অপরাজিতা


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৬:২২ পিএম, ২০২০-১০-১১

ভিন্ন আঙ্গিকে কন্যা শিশু দিবস পালন করলো অপরাজিতা

১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস। পৃথিবী জুড়ে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথমবারের মত দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য “আমরা সবাই সোচ্চার, বিশ্ব হবে সমতার”। “My Voice, Our Equal Future” বলতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকেই বুঝানো হয়েছে। আপনি , আমি সোচ্চার হলেই আমাদের ভবিষ্যৎ বিশ্ব হবে সমতার।

বর্তমান করোনা মহামারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা। সদ্য বয়ঃসন্ধিকালে প্রবেশ করা এসব ছেলে-মেয়েরা নিজেদের মধ্যে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না ঠিকভাবে। অনেকেই এই পরিস্থিতিতে লক ডাউন এর মধ্যে থেকে মানসিক দিক থেকে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে। দীর্ঘদিন গৃহে আবদ্ধ থাকায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব পড়েছে। অনেক সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে পরিবারের সদস্যদের মাঝেই। আজ আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষ্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বালুখালী ইউনিয়নের অন্তর্গত কিল্লা পাহাড়ে (কিল্লা মুড়া) স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে "শিশু মেলা"। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো যা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে, সেই সকল খেলাই মূলত আজকের আয়োজনের মূল আকর্ষণ।

দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক করোনা মহামারীর জন্য কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শ্রেণীকক্ষে পাঠ কার্যক্রমের একেবারেই বাহিরে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে কিল্লা পাহাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর সম্মানিত প্রধান শিক্ষক বাবু শান্তি কুমার ত্রিপুরার উদ্যোগে শিশুদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি ও পারস্পরিক সহমর্মিতা তৈরীর লক্ষ্যে ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজন।

১,২,৩নং ওয়ার্ড তথা ৬ নং বালুখালী ইউনিয়ন এর মহিলা মেম্বার জীবনশ্রী ত্রিপুরা আয়োজনটির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, আমাদের কোমলমতি শিশুরা তাদের বাড়ন্ত বয়সেই ঘরের চার দেয়ালে বন্দী। এই লক ডাউনে সবচেয়ে বেশী প্রভাব পড়ছে এই সোনামনিদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। একজন মা হিসেবেই আমাদের ছেলে-মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই এই আয়োজনে অংশীদার হওয়া।

অপরাজিতার সাধারণ সম্পাদক পলি ত্রিপুরা জানান, আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসে আমরা চাইছিলাম আমাদের সমাজে কন্যা শিশুকে যেসকল বাঁধা পেতে হয় তাদের ছেলেবেলা থেকেই সেসকল বিষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তা সমাধান করতে। ছোট বয়স থেকেই যদি আমরা শিশুদের মনে বিভেদের ধারনাটুকু মুছে দিতে পারি তবে তা তাদের ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে।

অপরাজিতা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাহাড়ের জনগণের সাথে পুরোপুরিভাবে মিশে যেতে সক্ষম হয়েছে, তাই এই মহামারীর মধ্যেও এতো সুন্দর একটি আয়োজন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাবু শান্তি কুমার ত্রিপুরা।

অপরাজিতার সভাপতি সাইদা জান্নাত বলেন, ২০১৯ সাল থেকে অপরাজিতা কিশোরীদের মাঝে মাসিককালীন সুরক্ষা এবং বয়ঃসন্ধিকালীন সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। আমরা চেষ্টা করছি – সৃজনশীল পদ্ধতিতে কৌতুহলী এই মেয়েদের সকল প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসার বাস্তবসম্মত জবাব দিতে এবং তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে, জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে। আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ২০২০ উপলক্ষে আমরা অঙ্গীকার করছি, “পাহাড় কিংবা সমতল যেখানেই হোক, সকল কন্যাশিশুর জন্য পিরিয়ড, বয়ঃসন্ধি, প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে জ্ঞান, পণ্য ও তথ্যসেবা দেওয়ার পরিধি বিস্তৃত করে আমরা লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে যাবো।”

অপরাজিতা থেকে দিবসটি পালনের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সকল সদস্যদের নিয়ে Virtual Meet এর আয়োজন করার পাশাপাশি মাসজুড়ে কিছু কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রস্তাব এসেছে সদস্যদের কাছ থেকে। সমতার বিশ্ব গড়তে হলে এখনই সম্মিলিত প্রচেষ্টা জোড়ালো করতে হবে।