জেএসএস-ইউপিডিএফ’র চাঁদা কালেক্টর শঙ্খদীস বড়ুয়াকে পুলিশে দিলেন আদালত!


আলমগীর মানিক    |    ০২:৪১ এএম, ২০২১-১২-০১

জেএসএস-ইউপিডিএফ’র চাঁদা কালেক্টর শঙ্খদীস বড়ুয়াকে পুলিশে দিলেন আদালত!

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সক্রিয় সদস্য হিসেবে বহুল পরিচিত শঙ্খদীস কুমার বড়ুয়াকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্তৃপক্ষ। 

মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলো শঙ্খদীস কুমার বড়ুয়া। তার আগাম জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে তাঁকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে বলা হয় আদালতের আদেশে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। পরে তাঁকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

আদালতে শঙ্খদীস কুমার বড়ুয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন, আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন ও তাপস কুমার বিশ্বাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন,ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন।

এর আগে অর্থ পাচারের অভিযোগে গত ১৯ অক্টোবর শংকদীসের বিরুদ্ধে রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ওই মামলাটি করেছেন সিআইডির এক উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. মেহেদী হাসান। এ মামলায় শঙ্খদীস হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন, যা আজ শুনানির জন্য ওঠে। জামিন আবেদন শুনানির জন্য থাকায় সে আদালতে হাজির হয়েছিলো। 

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক জানান, শঙ্খদীস বড়ুয়ার আগাম জামিন শুনানির সময় আদালত তার বিষয়ে রাঙামাটি পুলিশ সুপারের কাছে খবর নিতে আমাকে মৌখিক নির্দেশ দেন। কথা বলে আদালতকে অবহিত করার পর আদালত পুলিশ সুপারকে জুম আইডির মাধ্যমে সংযুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেন।  তখন রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন জুম আইডির মাধ্যমে হাইকোর্টে সংযুক্ত হন। পুলিশ সুপার আদালতে যুক্ত হয়ে শংকদীসের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততা এবং তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা থাকার তথ্য জানান।

গভীর জঙ্গলে থেকে অপরাধকর্ম চালানোয় এদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না বলে পুলিশ সুপারের বক্তব্যে এসেছে। আদালত পুলিশ সুপারের মাধ্যমে বিস্তারিত শোনেন। এরপর আদালত আসামির আগাম জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে সরাসরি হাজতে নেওয়ার জন্য শাহবাগ থানাকে নির্দেশ দেন বলে জানান তিনি। 

“জামিন আবেদনে পক্ষ-বিপক্ষের শুনানি তুলে ধরে আদালত তার আদেশে বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাঙামাটি মূখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে উপস্থাপন করার জন্য তাকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হল।”

মামলার অভিযোগে বলা হয়, শঙ্খদীস কুমার বড়ুয়া তাঁর ‘মা-বাবা টিম্বার অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার’ ব্যবসার আড়ালে মূলত ইউপিডিএফ ও জেএসএস নামে দুটি আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য হয়ে চাঁদাবাজি করে অবৈধ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে উত্তরা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় নয়টি অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায়।

এগুলো থেকে তিনি মোট ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ৭২৪ টাকা উত্তোলন করেন। তাঁর মানি লন্ডারিংয়ের পরিমাণ আনুমানিক ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ০৩ মার্চ মঙ্গলবার ভোরে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও র‌্যাব-৭ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে শঙ্খদীসকে হাতেনাতে আটক করেছিলো। সেসময় তার কাছ থেকে ইউপিডিএফ ও জেএসএস দলের রেশন, পোষাক এবং ৩ রাউন্ড গুলিসহ ১টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর কয়েক মাস আগে জামিনে বের হয়ে এসেছিলো শঙ্খদীস। পরবর্তীতে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সুনির্দিষ্ট্য তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি কর্মকর্তা কর্তৃক দায়েরকৃত মানি লন্ডারিং মামলাটি দায়ের করা হয়। এই মামলায় আগাম জামিন নিতে মঙ্গলবার সে হাইকোর্টে উপস্থিত হয়েছিলো। 

এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সে দীর্ঘদিন ধরে রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে যোগসাজশে চাঁদাবাজি করে আসছে এবং তার নামে কোতয়ালী থানায় চাঁদাবাজির মামলাও রয়েছে।