রাজস্থলীর পাহাড়ী জনপদে উৎসবের আমেজ!


আজগর আলী খান    |    ১১:১৫ পিএম, ২০২১-১০-১২

রাজস্থলীর পাহাড়ী জনপদে উৎসবের আমেজ!

রাঙামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলার  উচু উচু পাহাড়ে জুমের সোনালী পাকা ধানে ছেয়ে গেছে পাহাড়। শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব। জুম চাষীদের চোখে মুখে এখন আনন্দ। জুমিয়ারা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে জুমের পাকা ধান কেটে বাড়ীতে তোলা নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করছেন। নতুন ধানের গন্ধে পার্বত্য  জনপদগুলোতে তৈরি হয়েছে উৎসবের আমেজ। জুমের ফসল বাড়ীতে তোলার পর পর পাহাড়ীদের ঘরে ঘরে শুরু হবে নবান্ন উৎসব। 

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সনাতনী কৃষি হচ্ছে পাহাড়ের ঢালে জুম চাষ। জুম চাষের প্রস্তুতিকালে প্রথমে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম চাষের জন্য জমিকে উপযুক্ত করে তোলা হয়। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রস্তুতকৃত পোড়া জুমের মাটিতে দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, মারফা,অাদা,শরিষা, গইশ্যা,  মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ ইত্যাদি বীজ বপন করে জুমিয়ারা। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই জুমের ধান পাকা শুরু হয়। ভাদ্র-আশ্বীন মাসে ঘরে তোলা হয় জুমের ফসল।ধানের পাকে পাকে জুমিয়ারা বাংলা কলার গাছ ও রোপন করে। 

জুম চাষিরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর জুমের ফসল ভালো হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক মাস পরিশ্রম করে তারা এবার ভালো ফসল পেয়েছে এবং জুম ধানের পাশাপশি মিষ্টি কুমড়া, তিল, আদা, হলুদ, ভুট্টা,ধান্য মরিচ, শিম, মারফা, কাকন, মরিচ, তুলাসহ নানা প্রকার শাক-সবজি চাষ করা হয়েছে। সময় মতো ফসল ঘরে তুলতে পারলে পুরো বছর অনায়াসে কেটে যাবে এমনটাই আশা চাষিদের। আর খাদ্য সংকটে ভুগতে হবে না তাদের।

রাজস্থলী উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুব আলম, রনি বলেন,  বর্তমানে যে ৫৫৬ হেক্টরে জুম চাষে  উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে তা লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশী। দীর্ঘ কয়েক মাস পরিশ্রমের ফলে এবং জুম চাষীরা জুমে সঠিক ভাবে সার প্রয়োগ করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। আর পাহাড়ে জুমিয়ারা স্থানীয় জাতের ধানের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল ধান ও সবজির আবাদ করতে চাষিদের পরামর্শসহ যাবতীয় সুবিধা দিচ্ছে রাজস্থলী উপজেলা কৃষি বিভাগ অধিদপ্তর।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক  এ প্রতিবেধক কে জানান, পাহাড়ে জুমিয়ারা স্থানীয় জাতের ধানের পাশাপাশি সাথী ফসলের আবাদ করার ধান ও সবজীর ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এবারের আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও সঠিক বৃষ্টিপাতের কারণে এবার জুমের ফলন ভালো হয়েছে। তবে জুমে কিছু উচ্চ ফলনশীল ধান কৃষকদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারলে কৃষকরা হয়তো ধানের ফলন বেশি পাবে। তবে এ বছর ধানের পাশাপাশি অন্যান্য সবজিও ভালো হয়েছে। এ বছর জুমের ভালো ফলন হওয়াতে কৃষি বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা এই ঐতিহ্যবাহী জুম চাষ পদ্ধতি কে আধুনিকায়ন ও জুম চাষীদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলে জুমে ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি পেতো। এতে করে একদিকে এই অঞ্চলের খাদ্যের ঘাটতি পূরণ হতো তেমনি প্রান্তিক জুম চাষীদের জীবনমান পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।