অবশেষে ধরা পড়লো রিজিয়া আক্তার রুপার হত্যাকারী!


রাজস্থলী প্রতিনিধি    |    ০৯:১০ পিএম, ২০২১-০৯-১০

 অবশেষে ধরা পড়লো রিজিয়া আক্তার রুপার হত্যাকারী!

প্রেমিক কর্তৃক স্ত্রীকে খুনের খবর জেনে নীরবে নীরবে কেঁদেছিলেন রুপা আক্তারের স্বামী হায়দার আলী।

চোখ ভরা জল নিয়ে স্ত্রীর দাফন-কাফন শেষ করেন তিনি।একই এলাকার কাজল নামের এক প্রেমিক তার স্ত্রী খুনের ঘটনায় জড়িত- এমন আলোচনাও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন হায়দার আলী ।

এমনকি কাজল গ্রেপ্তার   না হওয়া পর্যন্ত তিনি পুলিশ ও গনমাধ্যম কর্মীর ধারে ধারে আশ্রয় নেন।

২০/৮ /২০২১ তারিখে বাঙালহালিয়া বাজারে  হায়দার আলী  চোখের জলে ভেষে ভেষে  এ প্রতিবেদক কে বলেছিলেন, ‘আমার স্ত্রী রুপা ৩/৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আমি মামলা করেছিলাম কাজল নামক ছেলেটির নামে, কিন্তু  মামলার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ঘাতক কাজলকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

তাকে আইনের আওতায় এনে  দ্রুত গ্রেপ্তার করুক। আমাদের পরিবার বা দেশবাসী তার ফাঁসি চাই।’ এসব বলার সময় তিনি নিহত রুপার  শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

হায়দারের বক্তব্য ও পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করা হয়, প্রেমিক কর্তৃক প্রেমিকা হত্যা শিরোনামে  একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

ফলে ঘটনার ২৮ দিনের মাথায় ৮ সেপ্টেম্বর  বুধবার পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে— ভিন্ন চিত্র। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হায়দার আলী নিজেই। শুধু পরিকল্পনা নয়, তিনি নিজেই ঠান্ডা মাথায় স্ত্রী রুপা কে  হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন।

রহস্য উদঘাটনে নেমে পুলিশ জানতে পারে রুপার  প্রেমিক কাজল হত্যাকারীর মধ্যে জড়িত নয়। তার স্বামী হায়দার নিজেই পরিকল্পিত ভাবে রিজিয়া আক্তার রুপা কে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছে গহীণ পাহাড়ের ঝোপে।

বিভিন্ন গোয়েন্দার তথ্যের ভিত্তিতে রুপা হত্যার ঘাতক স্বামী হায়দার আলীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হয়েই ঘটনার ২৮ দিনের মাথায় ৮ সেপ্টেম্বর  বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে বান্দরবান সদর থানার পুলিশ।
মামলার তদন্ত কারী বান্দরবান সদর থানার সহকারি পুলিশ পরিদর্শক এস আই গোবিন্দ জানান, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুপা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন হায়দার আলী।
১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তাকে বান্দরবান কোর্টে পাঠানো হয়েছে বলে জানাগেছে। 
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হোসাইনের আদালত ১৬৪ ধারায় হায়দার আলীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। এতে স্ত্রীকে গলা কেটে খুনের বিবরণ দিয়েছেন হায়দার।
তবে চাঞ্চল্যকর এই হত্যায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ কেন এবং কি কারণে হায়দার আলী তার চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে খুন করেছে সেটা জানাতে পারেননি তদন্তকারী অফিসার ।

হত্যা করার পর  গত ৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে বান্দরবান সদর উপজেলার বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কের গলাচিপা মুসলিম পাড়া এলাকা থেকে রুপা আক্তারের মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ ।

নিহত রিজিয়া আক্তার পাশ্ববর্তী রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার ধলিয়া মুসলিম পাড়ার নুরুল ইসলামের মেয়ে। প্রায় ৮ মাস আগে রাঙুনিয়া উপজেলাধীন বড়খোলা পাড়া

খন্থাকাটা গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে হায়দার আলীর সাথে বিয়ে হয় রুপার। রুপা ৪  মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিহত রুপার প্রেমিক কাজল এ ঘটনায় জড়িত- এমন অভিযোগকে সামনে রেখে তদন্ত চলছিল৷ তবে ঘটনার পরে তার স্বামী হায়দার আলীর অতিমাত্রায় ‘শোক’ পুলিশকে ভাবিয়ে তুলে। একপর্যায়ে তার গতিবিধির উপর নজরদারি শুরু করে পুলিশ।
অবশেষে ৮ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে তার নিজ বাড়ী হতে পুলিশের জালে আটকে পড়ে।  তার আচার আচরণে রুপা হত্যার রহস্যের কিনারা উদঘাটন  করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

রুপা হত্যার পরের দিন  ৮ আগস্ট চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় বান্দরবান সদর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত রুপার বাবা নুরুল ইসলাম  ও কথিত স্বামী হায়দার আলী । মামলার এজাহারে আসামি করা হয় রুপার কথিত প্রেমিক রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ডাকবাংলা বৌদ্ধ বিহার পাড়ার রকির প্রকাশ (রক্যার) ছেলে মোহাম্মদ কাজল হোসেনকে (২০)

তখন পরিবার মনে করেছিল, হায়দার আলীর সাথে বিয়ে হওয়ার আগে আসামি কাজলের  সঙ্গে রুপার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে না দেয়ায় কাজল রুপাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে জবাই করে হত্যা করে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১ আগস্ট ধলিয়া মুসলিম পাড়ার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন রুপা আক্তার। ৭ আগস্ট বিকাল সাড়ে চারটায় বাঙ্গালহালিয়া এলাকায় চাচীর বাসায় যাবার কথা বলে ঘর থেকে বের হয় রুপা। সন্ধ্যার পরেও বাড়িতে ফিরে না আসায় রুপার চাচীর মুঠোফোনে কল করেন রুপার  বাবা। চাচী জানান, রুপা তার বাড়িতে যায়নি।কোথায় গেছে খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

পরে জানাগেছে, রুপার লাশ পড়ে অাছে বান্দরবান রাঙামাটি সড়কের গলাচিপা মুসলিম পাড়ার ঝোপ ঝাড়ে। এ ঘটনার  পুলিশ রহস্য উদঘাটন করে মূল হত্যাকারী রুপার স্বামী।

রুপার বড় ভাই, উবাইদুল্লাহ এ প্রতিবেদক কে জানান, অামার বোন কে হত্যা করছে হায়দার আলী, আমি তার উপযুক্ত শাস্তি দাবী করি।  ফলে ন্যাক্বারজনক ঘটনার জন্য এলাকাবাসী রুপা হত্যাকারী হায়দার আলীকে  দ্রত বিচারের আওতায় এনে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এলাকাবাসীর প্রানের দাবী।