ডিবিকে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে মাদকদ্রব্যের এস আই জসিমের হুমকি!


মাসুদ পারভেজ নির্জন    |    ০৭:৪৫ এএম, ২০২১-০৮-০৭

ডিবিকে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে মাদকদ্রব্যের এস আই জসিমের হুমকি!

প্রতিবেদকঃমাসুদ পারভেজ নির্জন

রাঙামাটি শহরে গত ৭ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত চৌকস অভিযানে কুখ্যাত মাদক ব্যাবসায়ী হাসপাতাল এলাকার কানু চৌধুরীর ছেলে শিমুল চৌধুরী(৩১) কে তার নিজ ঘর থেকে ৪৭ পিস ইয়াবা,৯ গ্রাম ভাঙ্গা ইয়াবার গুড়ি সহ ও পাচঁ লক্ষ চার হাজার তিনশত পঞ্চাশ  টাকা সহ আটক করে জেলা গোয়েন্দা শাখা(ডিবি)।

কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী শিমুলকে ডিবি আটকের পরপরই যেন ক্ষোভে ফুসে ছারখার রাঙামাটি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিন।

রিজার্ভ বাজারের কুখ্যাত মাদকব্যবসায়ী নাছির নিজেই তথ্য দিয়ে শিমুলকে ডিবির কাছে ধরিয়ে দিয়েছে এমনটাই তথ্য পেয়ে হুমকিবার্তা দিতে উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিন ফোন দেয় মাদকব্যবসায়ী নাছিরের স্ত্রীকে।

কথোপথনটি হুবহুঃ

উপপরিদর্শক জসিমঃ কেমন আছেন?
আলেয়া বেগমঃ আছি মোটামুটি ভাই।ভালা আছোন না।
উপপরিদর্শক জসিমঃ আছিতো।বলছি, নাছির শিমুলকে ধরিয়ে দিয়েছে।কাজটা ও ভালো করেনি বুঝলেন।
আলেয়া বেগমঃ কাকে ধরাই দিছে(কথা ভালোভাবে বুঝতে না পেরে)
উপপরিদর্শক জসিমঃ নাছির শিমুলরে ধরিয়ে দিয়েছে।
আলেয়া বেগমঃ অ্যা।(বুঝতে না পেরে)
উপপরিদর্শক জসিমঃ যে নাছিরকে শিমুল এত সেভ করে। আমি ওকে ধরতে গেলে শিমুল বলে স্যার ওকে ধইরেন না।ওর অবস্থা খারাপ। আর সেই নাছির হইলো মাল দেখানোর নাম করে স্যাম্পল দেখানোর নাম করে রানী দয়াময়ী স্কুলের পিছনে এসেছে। এসে কেবল স্যাম্পল দেখিয়ে একটা স্যম্পল নিয়ে গেছে ২৫ বার কল দিয়েছে শিমুলকে। তারপর উপরে উঠতেই ডিবি ওকে ধইরেছে। ধইরা ওরে বাসায় যেয়ে চালান দিয়েছে।ওর বাসায় যেয়ে যে ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছে সেটি নিয়ে গিয়েছে।১৩৭ পিস দিয়ে চালান দিয়েছে। নাছির হইলো এই কলিমের বুদ্ধি শুইনা এই কাজ টা করেছে বুঝলেন। যে নাছিরকে আমি সেদিন পানির মধ্যে ১০০০ হাজার ১৫০০ মাল ছিলো সেইটা পানিতে লাফ মাইরা শিমুল ওকে নৌকা নিয়ে বাচিঁয়ে চলে গেলো। আর সেই নাছির অইলো শিমুলকে ধরিয়ে দিলো এটা কি হইলো।আপনি নাছিররে বলবেন তুমি যে কাজটা করেছো বুঝলেন, বলবেন তুমি যে শিমুলরে ধরিয়ে দিয়েছো কাজটা ঠিক করোনি।তোমার এই লাইন ছেড়ে দিতে বলেছে জসিম স্যার।না হইলে পরে তোমারে যেইখান পাবে সেইখান ধরবে।ওরে বলবেন তোমার এই মাদক ব্যবসা পানি-টানি সবছেড়ে দিতে বলেছে।দিয়ে ভালো হয়ে যেতে বলেছে।

আলেয়া বেগমঃ ও কি এগুলো করবে?

উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিনঃ হ্যা কইরেছে।কলিমের বুদ্ধি শুইনা এই কাজ করেছে।বুঝলেন।

আলেয়া বেগমঃ কে বলছে?

উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিনঃ কলিম ওকে বলেছে।যে অইলো।তুই শিমুলরে ধরিয়ে দিবি নাছির কে বলেছে।

আলেয়া বেগমঃ হ্যালো,মনে হয় কেউ নাছিরের নামে বদনামী করতেছে।

উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিনঃ আপনি ওকে বইলেন। ও যখন বাসায় আসবে।বলবে তুমি মালটা দেখিয়ে আবার ওই  ডিবি পুলিশ বইলেছে। ওইযে নাছিরের বোট গেলোনা।ওটা নাছির গেলোনা।মানে দশ পনেরো মিনিট পরে।

আলেয়া বেগমঃ ওর তো বোটেই নাই।

উপপরিদর্শক জসিমঃ আমার কথা শোনেন! তারপরো যখন ও রানী দয়াময়ী স্কুলের পিছন দিয়ে চইলা গিয়েছে নৌকা নিয়ে।তখন এক ডিবি পুলিশ বলছে ওইটা নাছির গেলোনা।মানে ওদের কথা পেটের মধ্যে রাখতে পারেনি বুঝলেন।ওইযে ওইটা নাছির গেলোনা।এই কথা বললো।

তখন এই জিনিসটা জানাজানি হয়ে গিয়েছে।আপনি ওকে বলবেন,কাজটা যেটা করেছে।যে শিমুল তোমাকে এতো সাপোর্ট দেই সেই শিমুলকে তুমি ধরিয়ে দিয়েছো কাজটা তুমি ভালো করোনি।এই কথাটাই শুধু ওরে বইলেন।

আলেয়া বেগমঃ আচ্ছা।

উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিনঃ আচ্ছা ঠিকাছে ভালো থাকবেন।

উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিনের সাথে এই রেকর্ডের ব্যাপারে কথা বললে তিনি প্রতিবেদককে ইঙ্গিতে মাদক ব্যবসায়ী নাছিরকে ধব্বংস করে দিবে বলে জানায়, (কারন তার ধারনা নাছির-ই এই রেকর্ড প্রতিবেদককে দিয়েছে)।

জসিম হুমকির ভঙ্গিতে জানায়, ও(নাছির) নিজেকে বেশি চালাক মনে করেতো।এইজন্য দেখবেন ওর সব শেষ হয়ে যাবে। যেভাবে তৈরি করেছে সবশেষ করে দিয়ে যাবো। একটা কথা বললাম আজকে। যেভাবে কয়দিন আগে একটা নৌকা খাইছি। আরেকটা বড় বোট কালকে দেখে আসছি সেটাও খেয়ে নিবো।সব শেষ করে দিবো।ও পানিতে সব তৈরি করেছেতো,পানিতেই সব মিশিয়ে দিবো।
 
”এদিকে গত ১৫ মে বিকালে উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে শহরের ট্রাক টার্মিনাল নিকটবর্তী চার জনকে ইয়াবা সহ আটক করা হয়। যেখানে পলাতক দেখানো হয় মাদকব্যবসায়ী নাছির উদ্দিনকে।

এদিকে আটককৃতরা ২দিন পর জামিন পেলে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাছির নামে তাদের সাথে কেউ ছিলোনা।এমনকি তারা নাছির নামের কাউকেই চিনেও না।”

মাদকব্যবসায়ী নাছির জানায়, ডাইরেক্ট কথা বলতেছেনা মাদকব্যবসায়ী আকরামের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা দিতে বলেছে উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিন।যদি রাঙামাটি থাকতে মন চাই।আমি পালিয়ে পালিয়ে আছি।জসিম স্যারে হাতে মাল নিয়েও আসছিলো আমাকে ধরার জন্য।তার ধারনা কলিমের বুদ্ধি ধরেই আমি ডিবিকে তথ্য দিয়ে শিমুলকে ধরিয়ে দিয়েছি। তাই তাকে অন্য মাদকব্যবসায়ীদের দিয়ে যোগসাজশে ১০০ পিস ইয়াবা দিয়ে ধরে নিয়ে গেছে ।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে মাদকব্যবসায়ীরা জানায়, শিমুলকে দিয়ে উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিন অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিতো এবং শিমুলের মাদক ব্যবসায় ও সহযোগীতা করতো। তাই মাদক ব্যবসায়ী শিমুলকে ডিবি কতৃক ইয়াবা ও টাকাসহ আটক হলে উপপরিদর্শক জসিমউদ্দিন ফুসে উঠেছে।তার ধারনা নাসির কলিমের বুদ্ধিতে শিমুলকে ধরিয়ে দিয়েছে তাই কলিমকে অন্য মাদকব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশ করে মাল(ইয়াবা) দিয়ে ধরিয়ে দিয়ে আটক করেছে।এবং নাছিরকে পলাতক আসামী দিয়ে দৌড়ের উপর রেখেছে।

তারা আরো জানায়, উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিনের মাসোহারা পেতে উনিশ বিশ হলেই মাদক দিয়ে ফাঁসানো তার রেওয়াজে পরিনিত হয়েছে।মূলত মাদকব্যবসায়ীরাই ও সেবীরা তার তার্গেট।তাদের মাদক দিয়ে ফাঁসালেও কেউ সন্দেহ করেনা। কারন সমাজের চোখে তার চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী ও সেবী।তাই বাধ্য হয়ে তাদেরকে মাসোহারা দিতে হয়।নইতো মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার আতংকে থাকতে হয়।

এদিকে গত ৪ই আগস্ট রাতে রাঙামাটি শহরে দোয়েল চত্বর এলাকায় একজন সাবেক মাদক ব্যবসায়ীকে গাজাঁ দিয়ে ফাসানোর অভিযোগে স্থানীয়দের রোষানলে পড়ে এই উপপরিদর্শক।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের পরিদর্শককে রেকর্ডিংটি শোনালে তিনি বলেন,আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবোনা।আপনি আমার উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেন।

উল্লেখ্য, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিন অভিযানে গিয়ে ডিবি পরিচয় দেওয়ার একাধিক অভিযোগও রয়েছে।এছাড়াও নারীর গায়ে হাত দেওয়ায় গনধোলাইয়ের মুখেও পড়েছেন।শুধু তাই নয়, আদালতকে কটাক্ষ করায় এসআই জসিমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ ও করেছিলেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দীন মো. আসিফ।

অফিস সূত্রে জানা যায়,তার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলাও রয়েছে।