প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত নানিয়ারচরের ৬১পরিবার


মাহাদি বিন সুলতান    |    ১১:০৯ পিএম, ২০২১-০৭-১৯

প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত নানিয়ারচরের ৬১পরিবার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নানিয়ারচরের ৬১টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। 

সোমবার দুপুরে নানিয়ারচর উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দুই ধাপে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়েছে ৩১টি অসহায় পরিবার। এছাড়াও নির্মাণাধীন রয়েছে ৩০টি ঘর।

উপজেলা সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়েছে ৩১টি পরিবার। যা ২০জানুয়ারি ২৮টি ও ২০শে জুন ৩টিসহ মোট ৩১টি ঘর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছে। সুত্রটি আরো জানায়, নির্মিতব্য এসব ঘরসমূহ আগামী ৩০শে জুলাই ২০২১ এর মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে। 

এদিকে ঘর পেয়ে খুশি ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে পাকা ঘর এবং ২শতক করে ভূমি পাওয়া এসব সুবিধাভোগী পরিবারের সদস্যরা। পাকা ঘর ও জমি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা এসব দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো। 

সুবিধাভোগী এসব পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কখনও কল্পনাও করেননি পাকাঁ ঘরে থাকতে পারবো। প্রধানমন্ত্রীর উপহার আমরা সারাজীবন আগলে রাখব। 

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ঘর পাওয়ার বিষয়ে উপজেলার ২নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের পহরবি চাকমা জানান, কখনও ভাবতেও পারিনি এমন পাকা একটি বাড়ি পাবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরটি তৈরী করে দিয়েছে। ৯৩বছর বয়সী শশুর কে সাথে নিয়ে বাড়ির আশেপাশে কিছু তরকারী গাছ লাগিয়ে মোটামুটি চলে যাচ্ছে বলেও জানালেন ২সন্তানের এই জননী।

অশ্রুজড়িত কন্ঠে বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়ি এলাকার নাসিমা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আমি অনেক খুশি। আমার মাথা গোজার ঠাই ছিলনা। আজ ৬বছর আগে আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে আমি স্কুলের পাশে কাঁচা তরকারী বেচে সংসার চালাচ্ছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তার ও তার পরিবারের জন্য দোয়া করেন এই বিধবা। 

মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত ঘরের বিষয়ে জানতে চাইলে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই মহৎ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। ধন্যবাদ জানাই ও উনার দীর্ঘায়ু কামনা করি। তবে এত কম পরিমান টাকায় পার্বত্যাঞ্চলে পাঁকা ঘর আসলেই অনেকটা অসম্ভব। রাঙামাটির বাইরে থেকে একটা ইট আনতে ৮-১০ টাকা খরচ হয়। শুধুমাত্র নির্মাণ সামগ্রী (ইট, বালু, সিমেন্ট ইত্যাদি) আনতেই ৫০-৬০হাজার টাকা খরচ হয়। সুতারং এই খাতে বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে। 

তিনি আরো জানান, গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারসমূহকে শুধু ঘর নয়, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে হবে। স্বল্প সূদ বা সূদ বিহিন ঋণের ব্যবস্থার মধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতেও পারে বলে মন্তব্য করেন এই উপজেলা চেয়ারম্যান।  

এসম্পর্কে বুড়িঘাট ইউনিয়নের ১নং ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, দেশে কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না এই প্রত্যয়ে বুড়িঘাট ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর ২১টি ঘর পেয়েছে সুবিধাভোগীরা। 

ঘরগুলো কিভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সুবিধাভোগী এসব পরিবারকে ১লক্ষ ৭১হাজার টাকা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ট্যাগ অফিসারগণ নিয়মিত তদারকি করছেন। এই পরিমান টাকায় পার্বত্যাঞ্চলে ঘর করা দূরহ ব্যাপার। তবুও স্থানীয় ইউপি সদস্যগণ ও উপজেলা প্রশাসনের তদারকির ফলে এই এলাকার ঘরগুলো মোটামুটি ভাল হয়েছে।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অমল কান্তি চাকমা জানান, গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি মহৎ উদ্যোগ। আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কোন রকম আর্থিক লেনদেন ছাড়াই এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।

উল্লেখ্য, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে নানিয়ারচর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে নির্মিত ও নির্মাণাধীন ঘরসমূহের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ মিলে ১নং সাবেক্ষং ইউনিয়নে ৭টি, নানিয়ারচর ইউনিয়নে ২৩টি, বুড়িঘাট ইউনিয়নে ২১ ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে ১০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যার ৩১টি নির্মিত হয়েছে এবং ৩০টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে।