বিদ্যুতের লোক গেছে কোরবানীর হাটে! তারসহ খুঁটি বসাচ্ছে অদক্ষ শ্রমিক


আলমগীর মানিক    |    ০২:৪৯ এএম, ২০২১-০৭-১৮

বিদ্যুতের লোক গেছে কোরবানীর হাটে! তারসহ খুঁটি বসাচ্ছে অদক্ষ শ্রমিক

রাঙামাটির বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়ম যেন দিনকে দিন নির্দিষ্ট্য নিয়মে-ই পরিণত হয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধ মানার কোনো বালাই নেই রাঙামাটির পিডিবি অফিসে। প্রতিনিয়তই যেন নিয়ম না মানার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে ভেদভেদী বিদ্যুৎ অফিসের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। 

সাম্প্রতিক সময়ে বাইরের পাবলিক লোক দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে শহরের মোল্লা পাড়ার জনৈক বাপ্পী নামের এক যুবক বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত হওয়া, বৃহস্পতিবার প্রজেক্ট প্রকল্পের আওতায়ও অনিয়মের মাধ্যমে কাজ করাতে গিয়ে ফরহাদ নামের আরেক শ্রমিক ১১কেভি লাইনে ঝলসে যাওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আবারো বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের শ্রমিকদের বাদ দিয়ে বাহিরের মজুরি ভিত্তিক অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে ফোরফরটি লাইনের খুটি বসানোর কাজ করিয়েছে রাঙামাটির বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ। 

শহরের ভেদভেদীস্থ অফিসের উপসহকারি প্রকৌশলী এরশাদ আলী নিজেই রাঙামাটি শহরের অভ্যন্তরেই এই অনিয়ম করেছেন বলে জানাগেছে। শনিবার দুপুরে শহরের হ্যাপীর মোড় এলাকার পেছনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ফোরফরটি লাইনের সংযোগ স্থাপনে দুইটি নতুন বৈদ্যুতিক খুটি স্থাপন করা হচ্ছে। এসময় কর্তব্যরত শ্রমিকদের সকলেই ছিলো দৈনিক মজুরি ভিত্তিক অনভিজ্ঞ সাধারণ দিনমজুর। বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। জানাগেছে, উক্ত এলাকা এবং এই কাজের তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন রাঙামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী এরশাদ আলী। 

বিদ্যুতের তার টানাসহ লাইন স্থাপনকারি শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তারা সকলেই সাধারণ পাবলিক এবং দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে তারা কাজে এসেছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, পিডিবি’র নিজস্ব ষ্টোর থেকে মালামালা এনে সেগুলো পিডিবি’র নিজস্ব অভিজ্ঞ শ্রমিকদের মাধ্যমে একজন তদারকি কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সংযোগ লাইন স্থাপন করতে হয়, এবং সংশ্লিষ্ট্য কর্ম এলাকায় শাটডাউন দেওয়ার আগেই স্থানীয় গ্রাহকদের মাইকিং করে অবহিত করার নিয়ম থাকলেও উক্ত কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেটি অনুসরণ করা হয়নি। 

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েকদিনেও পিডিবি’র নিজস্ব ষ্টোর থেকে কোনো মালামাল ছাড় করা হয়নি। কিন্তু প্রকৌশলী এরশাদ আলী শহরের রেডিও স্টেশন এলাকা ও রাজবাড়ি এলাকা থেকে মাটিতে গাড়াঅবস্থায় থাকা দুইটি খুটি সংগ্রহ করে এনে এবং অন্যত্র থেকে নতুন ক্যাবল তার এনে সেগুলো দিয়ে পিডিবি’র নিজস্ব শ্রমিকদের ছাড়াই মজুরি ভিত্তিক পাবলিক শ্রমিক দিয়ে খুটিসহ ফোরফরটি লাইন স্থাপন করিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটির বিদ্যুৎ অফিসের মধ্যেই কানাঘুষা-তোলপাড় চললেও এরশাদ আলীর রোষানলে পড়ার ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মন্তব্য করতে চায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবি’র একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এইধরনের কাজ করার কোনো মানে হয়না। কারণ যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটলে পুরো অফিসকেই এর দ্বায় নিতে হবে। বিগত দিনে শহরের এলজিইডি এলাকায় এইধরনের একটি দূর্ঘটনায় বাপ্পী নামের এক যুবক বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত হয়। এইঘটনায় সেসময় তুলকালাম কান্ড ঘটে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণও প্রদান করে বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষ। ব্যক্তিস্বার্থের কারনেই কর্মকর্তাগণ বাহির থেকে মালামাল সংগ্রহ করে বাহিরের মুজুরি ভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে কাজ করায় বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কর্মকর্তা। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী এরশাদ আলী জানান, আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগের নিজস্ব লোকজন কোরবানীর হাটে গরু দেখতে যাওয়ায় আমি বাইরের শ্রমিক দিয়ে কাজটি করাচ্ছি। এতে কোনো সমস্যা হবেনা। সরকারি বেতনদারি নির্দিষ্ট্য চাকুরে শ্রমিক থাকার পরেও কেন বাহিরের অনভিজ্ঞ শ্রমিকদিয়ে কাজ করাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আমি আমার উদ্বর্তন নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই কাজ করাচ্ছি। 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটির বিদ্যুত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানিয়েছেন, উক্ত কাজের সুপারভিশণ কর্মকর্তা হচ্ছেন উপসহকারি প্রকৌশলী এরশাদ আলী। তার তত্ত্বাবধানেই কাজ করা হচ্ছে বলে আমি জানি। এই কাজ নিয়ে কোনো অভিযোগ আমার কাছে নেই। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট্য এরশাদ আলীর সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার জন্য প্রতিবেদককে পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপসহকারি প্রকৌশলী এরশাদ এরআগেও শহরের বনরূপা এলাকার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে প্রিপেইড মিটার লাগানোর জন্য স্থানীয় দোকানদার কাছ থেকে নির্দিষ্ট্য হারে টাকা দাবি করতেন এবং বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ির কাছ থেকে তিনি টাকাও নিয়েছেন। কোনো ব্যবসায়ি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদেরকে প্রকাশ্যে হুমকিও দিতেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তার উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষ টের পাওয়ায় তাকে বনরূপা বাজার এলাকার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। বনরূপা ও ফরেষ্ট কলোনী এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ির সাথে তার বাকবিতন্ডার কথোপকথন রেকর্ডও রয়েছে ভূক্তভোগীদের কাছে।