ন্যাশনাল হাসপাতালে করোনারোগী মনে করে চিকিৎসা না দেয়ায় প্রসূতির মৃত্যু!


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০১:৫০ এএম, ২০২১-০৭-০৩

ন্যাশনাল হাসপাতালে করোনারোগী মনে করে চিকিৎসা না দেয়ায় প্রসূতির মৃত্যু!

চট্টগ্রামের বেসরকারি ন্যাশনাল হসপিটালে সংশ্লিষ্ট্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও এক নারী চিকিৎসকের অবহেলায় এক গৃহবধুর নির্মম মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন নিহতের স্বজনরা। মারা যাওয়া গৃহবধু রাহাত রুমান লিমা (৩১) রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর বেরসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালে তিনি মারা যান। নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ, হার্ট অকেজো হয়ে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ সন্দেহে চিকিৎসা না দিয়ে লিমাকে ফেলে রাখে। সময়মতো চিকিৎসা সেবা নাপেয়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। 

নিহতের স্বজনরা জানান, চারদিন আগে নগরীর মেহেদীবাগস্থ ন্যাশনাল হাসপাতালে রাহাত রুমান লিমার সিজারের মাধ্যমে সন্তান হয়। অপারেশন করেন ন্যাশনাল হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক কামরুন্নেসা রুনা। রিলিজ বাসায় নিয়ে গেলে রোগীর রক্তচাপ কমে যায় এবং কাশির সঙ্গে রক্ত বমি শুরু হয়। পরে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আবারও তাকে ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় রক্তচাপ শূন্য হয়ে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ সন্দেহে চিকিৎসা না দিয়ে প্রসূতিকে ফেলে রাখে।

স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসক কামরুন্নেসাকে ফলোআপ চিকিৎসার জন্য বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি আসেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমস্তদিন চিকিৎসা না দিয়ে লিমাকে ফেলে রাখে। পরে অনেকটা জোর করে স্বজনদের কাছ মরদেহ বুঝিয়ে দেয়।

মরদেহ হস্তান্তরের সময় ন্যাশনাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছে একটি নোট দেয়। এতে লেখা ছিল-উক্ত রোগীর বিষয়ে পরবর্তীতে কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন সাহেব ও ডা. কামরুন্নসা রুনা ম্যাডামের উপস্থিতিতে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মৃত লিমার ভাসুর রবিউল হোসেন জহির বলেন, ন্যাশনাল হাসপাতালের চরম অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা না পেয়ে তিন দিনের বাচ্চাটি এতিম হয়ে গেল। হার্টের সমস্যা হলেও তাকে কোভিড-১৯ সন্দেহ করে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিনা চিকিৎসায় রোগী মেরে আমাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতা করতে চায়।

ন্যাশনাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, রোগীটাকে খুব সিরিয়াস অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আমরা সব ধরনের চিকিৎসা দিয়েছি। তারপরও তারা বিভিন্ন অভিযোগ করাতে আমরা একটি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছি।

এদিকে ছোট ভাইয়ের প্রিয়তমা স্ত্রীর এমন নির্মম মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের টাইমলাইনে জহির নিজে আবেগভরা ষ্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, দেশে স্বাস্থ্যসেবার কোন উন্নতি হয়নি। উন্নতি হয়েছে স্বাস্থ্য বানিজ্যের। চট্টগ্রামের পুরো স্বাস্থ্যখাত এখন লুটেরা ডাকাতদের হাতের জুয়াতে পরিনত হয়েছে।চট্রগ্রামে কিছু ডাক্তার দিন দিন ডাকাতের সর্দারের পদ দখল করে নিচ্ছে। কোভিড মহামারী আমাদের সাধারণ মানুষের জীবন নিচ্ছে আর কিছু ডাক্তার মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগে ছিনতাইকারীদের ছাড়িয়ে গেছে।

ন্যাশনাল হসপিটালের ভুল চিকিৎসার বলি হলো আমার ছোট বোন। মাত্র তিনদিন বয়সী মাসুম বাচ্চাটা মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সুযোগও পেলোনা। সদ্য সাজানো সংসারটার স্বপ্ন গুলো ডানা মেলার আগেই ছিনতাই হয়ে গেছে! চট্রগ্রামের মেট্রো ডায়গনস্টিক এবং ন্যাশনাল হসপিটালসহ কিছু হাসপাতালের অনিয়মের খবর বহুদিন যাবৎ প্রায় নিয়মিত হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ঘুম ভাঙেনি। চট্রগ্রামের জলাবদ্ধতার চেয়ে স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি অনেক বেশি নাজুক এবং প্রমাণিত। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড সর্বস্ব কর্তৃপক্ষে পরিনত হয়েছে। আদতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জান মাল গেলো কি ছিনতাই হলো - তাতে তাদের কিচ্ছু যায় আসেনা। কেউ কি বলতে পারবেন সাধারণ মানুষের সেবায় এই অসাধারণ জোচ্চর সেবকদের পেয়েছেন? প্রতিটা ছোট বড় ইস্যুতে এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাওয়া একটা নিয়মে পরিনত হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো সববিষয় নিয়ে যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছেই বিচার চাইতে হয় তাহলে আমাদের আমলারা কার বা........... ফালায়?? 

আমার বোনের সিজারে বাচ্চা হয়েছে কিন্তু রিলিজের একদিন পরেই অবস্থার অবনতি হলে আবার সেখানে ভর্তি করাই। অথচ তারা পেশেন্টের ডিটেইলসে তাকে আনমেরিড দেখিয়েছে। বর্তমান মহামারীতে ডাক্তাররা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পেশেন্ট দেখে। আমার প্রশ্ন হলো- যে পেশেন্টকে রিসিভ করার পর কোভিড সন্দেহ বলে আইসিইউতে আনমেরিড দেখিয়ে লাইফ সাপোর্টে দিয়ে দেয়া হয়েছে - ফলোআপে আসা কোন ডাক্তার কি একবারও তার সিজার হয়েছে এইটা জেনেছে কিনা? শুধু তাই নয়; গাইনি প্রফেসর কামরুন্নাহার রুনা সিজারের পর বিল নিয়ে যাওয়ার পর একটাবারের জন্য পেশেন্টের ফলোআপ করার সুযোগই দেয়নি। আমরা শতাধিকবার চেষ্টা করেও তার সাজেশন পাইনি। তিনি সেই হাসপাতালেই চেম্বার করার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছে তারাও নাকি আপ্রাণ চেষ্টা করে প্রফেসর কামরুন্নাহার রুনার সহযোগিতা পায়নি। 

আমার বোনকে কোভিড পেশেন্ট হিসেবে চালিয়ে দিতে চাইলেও তারা বলছে রিসিভ করার সময় তার প্রেসার নিল ছিলো। এরপর একজন কার্ডিওলজিস্ট এসে দেখে যাওয়ার পরেও তার হার্ট ফেইলিউরের ট্রিটমেন্ট দেয়নি। পোস্ট কার্ডিও মায়োপ্যাথি হলেও তারা আমার বোনকে কার্ডিও মায়োপ্যাথির কোন ট্রিটমেন্ট দেয়নি। ইভেন আমার বোনের মৃত্যুর সময় নিয়েও তারা চরম লুকোচুরি করেছে। আমাদের প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তরে তারা এলোমেলো কথা বলে পাশ কাটিয়ে গেছে। আমাদের কাছে ভিডিও অডিও রেকর্ডের প্রমান আছে। আমার বোনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিটি পদে চরম গাফেলতি দৃশ্যমান হলে তারা আমার বোনের চিকিৎসার সকল বিল মওকুফের সমঝোতা প্রস্তাব দেয়। সবচেয়ে বড় গাফেলতি হচ্ছে তারা কোভিড সাসপেক্টেড বলে আমার বোনকে মেরে ফেল্লেও তার কোভিড ই টেস্ট করেনি।

কার কাছে বিচার দেবো? দূর্নীতির বাজারে এখন স্বাস্থ্যসেবা এক নম্বরে। আমাদের জন্য আসলে কেউ নাই। আমরা আমাদের ঘামের টাকার টেক্স দিয়ে চোর ডাকাত দূর্নীতিবাজদের ভরনপোষণ দিচ্ছি। টেক্স দিচ্ছি বাধ্য হয়ে। বাধ্যতামূলক না হলে গরীব দুঃখী অসহায় মানুষকে যাকাত ফিতরা হিসেবে দিতাম। তারপরও রাষ্ট্রের মদদে এইসব খুনি জোচ্চোরদের বেতন ভাতার জন্য টেক্স দিতামনা।
স্বাস্থ্যসেবা যদি আগাগোড়া অথর্ব দূর্নীতিবাজ ডাকাতদের দখলে জিম্মি না থাকতো তাহলে বিচার চাইতাম। আমরা সাধারণ মানুষেরা এই খাতের উপর  আস্থা বিশ্বাস নির্ভরতা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা বিচার দেবো; আমরা প্রমান দেবো কিন্তু তাদের রায় বিক্রি হবে; দফারফা হবে। তাই আল্লাহর বিচারের অপেক্ষায় রইলাম। চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের গাইনি প্রফেসর  কামরুন্নাহার রুনা কিংবা ন্যাশনাল হসপিটালের ডাক্তার পরিচয়ধারী ডাকাতদের বিচার আল্লাহ করবে।