রাঙামাটি শহরে সীমানা প্রাচীর নিয়ে সম্ভ্রান্ত দুই পরিবারের দ্বন্ধ চরমে


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ১২:১২ এএম, ২০২১-০৬-০৫

রাঙামাটি শহরে সীমানা প্রাচীর নিয়ে সম্ভ্রান্ত দুই পরিবারের দ্বন্ধ চরমে

রাঙামাটি শহরের কে কে রায় সড়ক এলাকায় সীমানা দেয়াল নির্মাণকে কেন্দ্র করে সম্ভ্রান্ত দুই প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই সামাজিক বিচার, সংশ্লিষ্ট্য পৌরসভার কাউন্সিলর ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুরোধ ও উপেক্ষিত হয়েছে। শুক্রবার স্থানীয় বাসিন্দা মুনমুন চাকমার নড়বড়ে সীমানা প্রাচীর প্রতিবেশি ডাঃ রনজিৎ চাকমা কর্তৃক ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করে দিয়ে উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলে দেয়। 

এই ঘটনায় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের ডেকে নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগকারী মুনমুন চাকমা জানান, আমার পৈত্রিক সম্পত্তি আমার বাবা আমাকে এবং আবার বোনকে ১০ শতক করে জায়গা দানপত্র করে দেয়। পরবর্তীতে আবার বোনের স্বামী রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী দীলিপ কুমার চাকমা বাড়ী করলেও আমরা বাড়ী করতে পারিনি। কিন্তু আমার পাশ^বর্তী পরিবার ডাঃ রনজিত চাকমা জনৈকা ছায়া ছেত্রী থেকে জায়গা ক্রয় করে ৪ তলা বাড়ী নির্মাণ করে।

কিন্তু সম্প্রতি আমার সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে তারা নতুন করে সীমান প্রাচীর দেয়া চেষ্টা করলে আমি বাধা দেই। এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও আমাকে বলেছে কিন্তু আমরা সীমানা প্রাচীর দিতে দেবো না বলে জানিয়ে দিয়েছি। তারা দিতে চাইলে তাদের জায়গায় দিতে পারে আমাদের কোন বাধা নেই। তারা ঘর করেছে কিন্তু আমাদের জায়গায় তাদের ছাদের পানি এসে পড়ছে। ডাক্তার রনজিত দেওয়ান নিচে আমাদের জায়গা দখল করে ওয়াল দিচ্ছে। এটা বড়ই অন্যায় বলেও দাবি করেন তিনি। 

মুনমুন চাকমার পক্ষে তার ভগ্নিপতি রাঙামাটি জেলা পরিষদের দীলিপ কুমার চাকমা জানান, তারা বাড়ী নির্মাণ করেছে নিজেদের জায়গার পানি রাস্তা দিয়ে আসে। এছাড়া বাড়ীর নিচে বিশাল ওয়াল নির্মাণ করছে আমার শ্যালিকার জায়গা ও কাপ্তাই হ্রদের জায়গা দখল করে। আমরা অভিযোগ দিলেও এটার কোন সুরাহা হচ্ছে না। তারা ইচ্ছামতো অপরের জায়গা দখল করে বাড়ী নির্মাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে ডাক্তার রনজিত চাকমা জানিয়েছেন, আমি আমার ক্রয়কৃত জায়গাতেই বাড়ী নির্মাণ করছি এবং পৌরসভা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকল আইনী বিধিবিধান মেনেই বাড়ি নির্মাণ করেছি। এখানে কারো জায়গাতে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যে ওয়ালটি রয়েছে সেটা আমার সীমানায় পড়ে এবং আমি ছায়াছেত্রীর কাছ থেকে কিনে নেওয়ার সময় সবকিছু বুঝেও নিয়েছি। এখানে এই ওয়ালটি যখন তাদের বলছে তখন আমি বলছি ঠিক আছে আপনাদের ওয়াল। কিন্তু ওয়ালটি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় আমি চাচ্ছি আমার খরচে ওয়ালটি নির্মাণ করে দিতে। তিনি বলেন, একটি সীমানা প্রাচীর দিতে গেলে উভয় পক্ষের থেকেই দিতে হয়। কিন্তু তারপরও আমি নিরাপত্তার কথা ভেবে আমি আমার পক্ষ থেকে নিজ খরছে ওয়ালটি করে দিতে চাচ্ছি। যাতে ভবিষ্যতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। আপনারা দেখেন ওয়ালটি যে কোন সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। তারা কেন বুঝছে না আমরা বুঝতে পারছি না।

ডাঃ রনজিত বলেন, বিষয়টি আমি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছি। এই সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এসে তাদের সাথে কথা বলেছে বৈঠক হয়েছে তার পরও তারা আমাকে ওয়ালটি করতে দিবে না। তারা জ¦লে পুড়ে মরছে আমি কেন এতো সুন্দর বাড়ী করলাম। একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে আমার মতো বাড়ী করতে পারেনি। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে পাহাড় ধ্বসে রাঙামাটিতে অনেক প্রাণহানী ঘটেছে। সেই ধরনের দূর্ঘনার শিকার আমি যাতে নাহই সেইলক্ষ্যে আমার বাড়ী নিচে একটি ধারক দেওয়াল নির্মাণ করছি এতে লেক দখলের মতো কিছু করছি না। যাতে পাহাড় ধ্বসে ও লেকের পানি বেড়ে গেলে আমার বাড়ীর কোন ক্ষতি না হয়।

কিন্তু রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী দীলিপ কুমার চাকমাতো পুরো কাপ্তাই লেক দখল করে নিয়েছে। তিনি কাপ্তাই হ্রদে মানুষের চলাচলের গোসল করার ঘাট দখল করে বহুতল বাড়ী নির্মাণ করেছেন। এখন উক্ত এলাকার মানুষ হ্রদে যেতে পারছেনা। দীলিপ কুমার চাকমা বাড়ী নির্মাণ করে ঘাট পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আমিতো বাড়ী রক্ষার জন্য ধারক দেওয়াল দিচ্ছি কিন্তু দীলিপ কুমার চাকমাতো পুরো বাড়িটি কাপ্তাই হ্রদের উপর করেছে। এটা তিনি বুঝতে পারছে না নিজে কতো বড়ো অপরাধ করেছেন। 

এদিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দুইটি পরিবারের মধ্যে চলমান বিষয়টি সম্পূর্ণ ইগো’র সমস্যা। তারা বাড়ী করছে বলে তারা ঈর্ষা  করছে। রাঙামাটি পৌরসভার পক্ষ থেকে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর বিষয়টি দেখে তাদেরকে ওয়াল ও ধারক দেওয়াল নির্মাণ করার অনুমতি দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি ও এলাকার স্থানীয়রা মুনমুন চাকমার সাথে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা বিষয়টি কোন ভাবেই সুরাহা করতে রাজি নয়। মুনমুন চাকমার ভাই মানস মুকুর চাকমাকে আমি বিষয়টি নিয়ে অনেক বুঝিয়েছি তিনিও উল্টো কথা বলেন। 

বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলর কালায়ন চাকমাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে কালায়ন চাকমাও বিষয়টি নিয়ে মুনমুন চাকমাকে দোষারোপ করেন। 

এদিকে ঘটনাস্থলে যাওয়া এবং বিষয়টি তদন্তকারি পুলিশের এসআই লিমন বোস জানিয়েছেন, সীমানা ওয়ালটি কার এর কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। তবে দুই পক্ষই ওয়ালটি নিজের বলে দাবি করে। তবে রঞ্জিত চাকমা ওয়ালটি নতুন করে নির্মাণ করতে চাইলে পার্শ্ববর্তী মুনমুন চাকমা ওয়ালটি করতে বাধা দেয়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে কাজটি বন্ধ করতে বলি। সাথে সাথে রনজিত চাকমা ওয়াল নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়। তবে দুই পক্ষকে আমরা থানায় আসতে বলি যাতে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্যই তো সুষ্ঠ সমাধান আসা দরকার।