বাঘাইছড়িতে তিন শতাধিক তামাক চুল্লিতে পুড়ছে বনের কাঠ


ওমর ফারুক সুমন    |    ০৪:২৫ পিএম, ২০২১-০৪-১১

বাঘাইছড়িতে তিন শতাধিক তামাক চুল্লিতে পুড়ছে বনের কাঠ

বাঙামাটির বাইছড়িতে তামাক চুল্লিতে পােড়ানাে হচ্ছে বনের কাঠ। এসব কাঠ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়নের বাগান থেকে। 

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৩ শতাধিক চুল্লিতে তামাক পাতা পুড়ানো হচ্ছে। এসকল  চুল্লি নির্মিত হয়েছে বাড়ির উঠানে  ও ফসলি জমির পাশে।

তামাক চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব  চুল্লিতে প্রতিদিন হাজারাে মণ কাঠ পােড়ানাে হচ্ছে। প্রতি চুল্লিতে দিনে কমপক্ষে ১৫ মণ কাঠ পােড়ানাে হয়। সেই হিসাবে তিন শতাধিক চুল্লিতে প্রতিদিন ৪৫০০ মণ কাঠ পোড়ানো  হচ্ছে। প্রতিটি চুল্লিতে গড়ে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। জমি থেকে তামাক পাতা তোলা ও সাজানোর কাজে নিয়োজিত  রয়েছেন ৩ থেকে ৫  হাজারের বেশি  শ্রমিত | শ্রমিক সংকটের  কারণে এখন নারী ও শিশুদের তামাক চুল্লিতে  কাজে লাগানাে হচ্ছে।

কৃষি সম্পসারন কর্যালয় সূত্র জানাযায়, উপজেলায় এ বছর ১৭০  একর জমিতে তামাক চাষ করা  হয়েছে। তবে এর বাহিরে আরো ৫০০ একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে দাবী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। পৌরসভাসহ খেদারমারা, সারোয়াতলী, বাঘাইছড়ি,  রূপকারী ও মারিশ্যা ইউনিয়নে এসব চাষ করা হয়। ফেব্রয়ারি মাস থেকে তামাক খেত থেকে পাতা তোলা শুরু হয়েছে। এখন পুরােদমে  চলছে পাতা শুকানোর কাজ। প্রতি মৌসুমে এক একর খেতের তামাক পাতা শুকাতে ৩০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরান মারিশ্যা, মাষ্টার পাড়া, রূপকারী মুসলিম ব্লক, পূর্ব লাইল্যা ঘোনা, পশ্চিম লাইল্যা ঘোনা, তুলাবান উলুছড়ি, উগলছড়ি, শিজুগ, খাগড়াছড়ি ও মোরঘোনা ছড়া এলাকায় ব্যাপক তামাত চাষ হয়েছে।

ওই সব এলাকায়  ফসলি জমি ও বাড়ির আঙ্গিনাসহ বিভিন্ন জায়গায় তামাক চুল্লি বসিয়ে দিন রাত পাতা  শুকানো হচ্ছে । পুরাতন মারিশ্যা  এলাকার তামাক চাষী আবদুল  কাদের  বলেন আমরা বাধ্য হয়ে তামাক চাষ করি, তামক ছাড়া অন্য ফসল উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারিনা। এবার আমি ২ একর জমিতে তামাক চাষ করেছি। একটি চুল্লী স্থাপন করেছি আশপাশের অনেক চাষী এখানে তামাক শুকাতে কাজ করে । চুল্লিতে বনের কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা ব্যাবসায়িদের কাছ থেকে কাঠ ক্রয় করি তারা কোথাথেকে আনে আমার জানা নেই। উলুছড়ি  এলাকার বিজয় চাকমা  বলেন তামাক  চুল্লিতে আগুন দেওয়ার পর আমরা সকলেই আতঙ্কের  মধ্যে রয়েছি। একদিকে বাড়িতে আগুন লাগার ভয় অন্য দিকে  শুকনো তামাকের গন্ধে  শিশুদের  মারাত্নক ক্ষতি হচ্ছে।

বাঘাইছড়ি পরিবেশ আন্দোলন কমিটির সভাপতি মাে. আবুল ফজল  বলেন, তামাক চুল্লিতে কাঠ পােড়ানোর কারণে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। সংরক্ষিত বন ও সামাজিক বনায়ন ধ্বংস  হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বন ধংস হতে থাকলে বাঘাইছড়ি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে বাঘাইছড়ি  বন বিভাগের  কর্মকর্তা মােঃ ময়নুল হক  বলেন, সংরক্ষিত বন আমাদের থেকে অনেক দূরে   সেখানে আমাদের  কর্তৃত্ব নেই । স্থানীয় লোক নিজেদের  ইচ্ছেমত  সংরক্ষিত বন থেকে কাঠ কেটে নিয়ে যায়। অনেক চাষী ব্যাক্তি মালিকানা জমির কাঠ পোড়ায়। এর আগে  আমি নিজেই  দু-তিনবার অবৈধ কাঠ আটক করেছি।  কিন্তু  আটকের পর সন্ত্রাসীদের তােপের মুখে পড়তে হয়। তবে সময়ের অভাবে এবছর এখনো অভিযান পরিচালনা করতে পারিনি।

উপজেলা কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিজেন্দ্র লাল নাথ,  বলেন, উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর তামাক চাষ বাড়ছে। আমরা চাষীদের তামাক চাষ  না করার জন্য নিরুৎসাহিত করছি। বিকল্প বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে সহযোগিতা করছি যেমন ভুট্টা, গম, সূর্যমূখী ইত্যাদি।  তার পরেও চাষীরা বাড়তি সুযােগ ও লাভের আশায় তামাক  চাষ বন্ধ করছেন না। এখানে ইচ্ছে করলে বন বিভাগ ও প্রশাসন  তামাক চাষ নিয়ন্ত্রন করতে পারে।  তামাক চাষ বন্ধ করতে হলে বন থেকে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  শরিফুল  ইসলাম বলেন, বন থেকে গাছ কাটা ও তামাক চুল্লিতে কাঠ পোড়ানাে নিষিদ্ধ । তামাক চাষিরা যদি কাঠ পোড়ান, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। 'তামাক চাষে  কোনাে নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে আমরা বরাবরই তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করছি।  বনের কঠ পােড়ানো  যাবে না তামাক  পোড়াতে হবে ধঞ্চে ও তুষের  লাকড়ি দিয়ে ।